Advertisement
Advertisement
Cricket

সৌরভ এবং আমি মিডিয়ার চোখে ভেলপুরির মতো উপভোগ্য: রবি শাস্ত্রী

প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সম্পর্কে নিজের বইয়ে আর কী লিখেছেন শাস্ত্রী?

Editorial: Ravi Shastri opens up about BCCI President Sourav Ganguly in his Book | Sangbad Pratidin
Published by: Abhisek Rakshit
  • Posted:September 8, 2021 3:28 pm
  • Updated:September 8, 2021 3:51 pm

রবি শাস্ত্রী: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) নিঃসন্দেহে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্রিকেটারদের একজন। ভারতে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও। সৌরভ ভারতীয় টিমের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিল খুব কঠিন একটা সময়ে, ২০০০ সালের অপ্রীতিকর ম্যাচ ফিক্সিং কেলেংকারির পর্দা উন্মোচনের পর। ভারতীয় ক্রিকেটে তখন রীতিমতো বিশৃঙ্খল একটা পরিস্থিতি চলছে। সমর্থকরা দিশাহারা, রাগে ফুঁসছে এবং বিমর্ষ। জিজ্ঞাসাবাদে এবং দেশজুড়ে চলতে থাকা বিভিন্ন মামলার সূত্রে যেসব নাম উঠে এসেছিল, তাতে এই খেলাটির মর্যাদা ব্যাপকভাবে কালিমালিপ্ত হয়।

সৌরভ তখনও তরুণ তুর্কি। ঠিক চার বছর আগে ডেবিউ করেছে। সেই সময় বিসিসিআইয়ের (BCCI) সৌরভকে ক্যাপ্টেন করার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই খুব বিচক্ষণ কাজ বলে মনে হয়নি। সৌরভের কিছু সহ-খেলোয়াড়ও তেমনটাই মনে করেছিল। আমার মনে পড়ে, যখন টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সৌরভকে বেছে নেওয়া হল, তখন যারা খেলোয়াড়, তাদের মধ্যে নানাবিধ ফিসফাস শুরু হয়ে যায় এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। সৌরভকে ঘিরে উদ্বেগের কারণ কী ছিল? তখনও পর্যন্ত সৌরভের অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা ছিল সামান্যই। সবচেয়ে বড় কথা, সে সময় সৌরভ একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হিসাবে উঠে আসছিল। আশঙ্কা ছিল, ভারতীয় ক্রিকেটের ওইরকম একটা সংকটের সময় অধিনায়কত্বের ভার চাপিয়ে দিলে তা সৌরভের ব্যাটিংকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনিতেই ভারতীয় টিমের অধিনায়ক হওয়া প্রবল গুরুদায়িত্ব। তার উপর সেই সময় পরিস্থিতিও অন্যরকম।

Advertisement

টিমে বরিষ্ঠ খেলোয়াড় যারা ছিল, তাদের মধ্যে শচীন তেণ্ডুলকর তখন সদ্য অবসর নিয়েছে অধিনায়কত্ব থেকে। অনিল কুম্বলে এবং জাভাগল শ্রীনাথের প্রায় দশ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু বিশ্বজু়ড়েই নির্বাচকরা ফ্রন্টলাইন বোলারদের অধিনায়ক হিসাবে বেছে নেওয়ার বেলায় ঔদাসীন্য দেখান। অধিনায়ক হতে পারত আর মাত্র একজনই, রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। দ্রাবিড় ও সৌরভ– এই দু’জনের মধ্যে চূড়ান্ত নির্বাচন হয়। সৌরভ নির্বাচিত হয় এবং এই মনোনয়ন ভারতীয় ক্রিকেটের বাঁক বদলে দেয়। এত তরুণ এবং অনভিজ্ঞ হয়েও সৌরভ এই দায়িত্ব পালন করেছিল অভাবনীয় ঋজুতার সঙ্গে। পরিপার্শ্ব যখন কঠিন থাকে, তখন কিছু কিছু খেলোয়াড় নিজের রাস্তা ঠিক বের করে নেয়। সৌরভ একজন ওজস্বী অধিনায়ক। টিমকে পরিচালনা করেছে চরম আত্মবিশ্বাস, কল্পনাশক্তি এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে।

[আরও পড়ুন: ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ বাতিলে ক্ষুব্ধ FIFA, ৪ আর্জেন্টাইন ফুটবলারের বিরুদ্ধে তদন্তে পুলিশ]

প্রথম যে টেস্ট সিরিজে টিমকে নেতৃত্ব দিল সৌরভ, তা ২০০১-এর অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে খেলা টেস্ট সিরিজ। সেই সময় অস্ট্রেলিয়া অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। নাগাড়ে ১৬টি টেস্ট জিতেছে। কিন্তু তাদের জয়যাত্রা থামল সৌরভের টিমের মুখোমুখি হয়ে। মুম্বইয়ের টেস্টে পরাজিত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল ভারত। কলকাতার টেস্ট রোমাঞ্চকর মোড় নিল। চেন্নাইয়ের জয় শুধু দলের ভিত শক্ত করল, তা-ই নয়, একই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটে প্রাণের নতুন সঞ্চার ঘটাল।

একটু অতীতে ফিরে যাই। ১৯৯১-’৯২ সালের অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে আমি, সৌরভ একসঙ্গে ছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখন আমার এক দশক পেরিয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, সৌরভ তখন প্রতিশ্রুতিমান তরুণ খেলোয়াড়, অনেকেই যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দুর্ভাগ্য, সেই সফরে পাঁচটি টেস্টের একটিতেও খেলার সুযোগ পায়নি সৌরভ। ও তখন বেশ লাজুক এবং অন্তর্মুখী ছিল। নিজের মতো থাকত। বা, শচীনের সঙ্গে সময় কাটাত। শচীনের সঙ্গে জুনিয়র স্তরে খেলেছিল বলে ওর সঙ্গে সম্পর্কে আড়ষ্টতা ছিল না। সৌরভের চেহারা তখন ছিপছিপে, কিছুটা রোগার দিকেই বলব। কিন্তু নেটে খেলার সময় যেসব স্ট্রোক নিত, তাতে বোঝা যেত ও কতটা শক্তিশালী। ঝাঁকুনি দিতে, নাড়িয়ে দিতে সবসময় উৎসুক থাকত। কিছু একটা করে দেখানোর জেদ ছিল। কিন্তু অত প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ট্যুর সিলেকশন কমিটির নজর কাড়তে ব্যর্থ হল। চমৎকার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সৌরভ ছিল একজন দক্ষ মিডিয়াম পেসার। সুইং করাতে পারত, বল কাট করাতে পারত। এই বিষয়টা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। আমি দেশের ক্লাব ক্রিকেটে তখন টাটার প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা সৌরভের মতো একজন অলরাউন্ডার খুঁজছিলাম। আমি টাটা ক্রিকেট টিম কর্তৃপক্ষকে সৌরভের কথা বলি। এর কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাব ওকে দলে নিয়ে নিল। কিন্তু এত সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় ক্রিকেট থেকে কিছু বছরের জন্য সৌরভ দূরে সরে যায়। তাতে যে অবশ্য কোনও ক্ষতি হয়নি, তা সৌরভ দেখিয়ে দিল যখন জাতীয় স্তরের নির্বাচকদের চোখে পড়ল আবার। বরং এবার সে আরও দক্ষ, আরও সুতীক্ষ্ণ, আরও পরিণত। সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেটে ছাপ রাখার জন্য উদগ্রীব।

[আরও পড়ুন: Shikhar Dhawan: ৯ বছরের দাম্পত্যে ইতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিভোর্স ঘোষণা ধাওয়ান-আয়েশার]

১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দু’টি টেস্টে শতরান করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গৌরবময় যাত্রা শুরু সৌরভের। জাতীয় দলে যে সময়টুকু অনুপস্থিত ছিল, সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিল কৌশল এবং সংকল্পে দৃঢ় থাকার জেদের মাধ্যমে। ভারতীয় টিমে মসৃণভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিল। দেশের দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইন আপের চাবিকাঠি হয়ে উঠল। সেই ব্যাটিং লাইন আপ পরে আরও সমৃদ্ধ হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণ এবং আরও পরে বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, শচীনের সঙ্গে যোগ দেওয়ায়। সৌরভের ব্যাটিং নিয়ে বেশি কথা বলা বাতুলতা, নিরর্থক। সৌরভ অনবদ্য ব্যাটসম্যান। অফসাইডের স্ট্রোকগুলোকে রাজকীয় বললে মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না। ফ্রন্টফুটে খেলার সময় হাতের চলাচল ছিল সাবলীল, ব্যাকফুটের স্ট্রোকে শক্তিশালী বটম হ্যান্ডের পরিচয় পাওয়া যেত। সামনে এগিয়ে এসে উঁচুতে শট মারার প্রবণতা সৌরভকে এবং একইসঙ্গে দলকে কার্যকর ফল দিয়েছে। বিশেষত, একদিনের আন্তর্জাতিকে। খুব সহজেই ইনফিল্ড ফাঁকা করতে পারত। ফিল্ডিংয়ের দুর্গ ভেঙেচুরে দিত নিমেষে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সৌরভ এবং শচীনের যুগলবন্দি ছিল অন্যতম সেরা জুটি।

আর, অধিনায়ক হিসাবে সৌরভের প্রভাব তো বিপুল, সর্বাত্মক। শুধু যে খেলার চরিত্র খুব ভাল বুঝতে পারত তা-ই নয়, বিপক্ষের দুর্বল স্নায়ুর উপর অধিকার কায়েম করতে জানত। দলের তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি গভীর আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস রাখত। একঝাঁক খেলোয়াড়, যারা ভারতের হয়ে খেলে অনন্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে– বীরু (বীরেন্দ্র সেহবাগ), যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, জাহির খান– এরা খেলা শুরু করেছিল এবং ম্যাচ জেতার মতো সামর্থ অর্জন করেছিল সৌরভের নেতৃত্বে। অধিনায়কত্ব শুধু কৌশলের উপর নির্ভর করে না, সহ-খেলোয়াড়দের প্রতিভায় বিশ্বাস রাখাও অধিনায়কের গুণ। সৌরভের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হামেশাই আতশকাচের তলায় এসেছে। আমাদের তথাকথিত ‘মতভেদ’ মিডিয়ার কাছে ‘চাট’ বা ‘ভেলপুরি’-র মতো উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যম সোৎসাহে উঠেপড়ে লেগেছে সামান্য দ্বন্দ্বের আভাস পেলেই। বিশেষত, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে প্রধান কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হওয়ার ঘটনা নিয়ে বেশ জল্পনা হয়। দু’টি মানুষ একই পরিস্থিতিকে দু’রকমভাবে দেখছে– ব্যাপারটা এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

(মতামত নিজস্ব)
রবি শাস্ত্রীর ‘স্টারগেজিং: দ্য প্লেয়ারস ইন মাই আই’ বইয়ের ‘মাস্টার অ্যান্ড কমান্ডার’ অধ্যায় থেকে। হার্পার কলিনস

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement