সত্যজিৎ রায়ের 'নায়ক' ছবির একটি দৃশ্যে উত্তম ও শর্মিলা
উত্তমকুমারের ‘নায়ক’-এর সর্বভারতীয় রিলিজ হল সম্প্রতি। সেই ছবি দেখলেন শর্মিলা ঠাকুর দিল্লির মুভি হল-এ। কলকাতায় জানালেন তাঁর অনুভূতি।
১৪ বছর পরে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলা সিনেমায় ফিরে এসেছেন শর্মিলা ঠাকুর। সম্প্রতি পেরিয়েছে তাঁর ৮০ বছরের জন্মদিন। এবং তাঁকে ঘিরে একটি ‘উৎসবায়িত’ প্রেস কনফারেন্সে তিনি জানালেন, উত্তমকুমারের জন্য তাঁর মনকেমনের কথা। ৫৯ বছর আগে, ১৯৬৬-তে তৈরি ‘নায়ক’ ছবিতে সত্যজিৎ রায় তাঁকে ভেবেছিলেন উত্তমকুমারের বিপ্রতীপ চরিত্রে। সেই ‘নায়ক’ পুরানত্বের সব চিহ্ন মুছে একেবারে টাটকা হয়ে ফিরে সর্বভারতীয় রিলিজের পরে আরও একবার সুপারহিট হল।
শর্মিলা সেই ছবি দেখলেন দিল্লির মুভি হল-এ। এবং কলকাতার প্রেস কনফারেন্সে বললেন উত্তমবাবুর জন্য তাঁর এখনও মনকেমনের কথা। কথাটা বড্ড সত্যি। ১৯৮০ সালে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে শেষ হয় উত্তমকুমারের জীবন। ৪৫ বছর তিনি আমাদের মধ্যে নেই। ৪৫ বছরে বাংলা ছবির উন্নতি-অবনতি মিলিয়ে ওলটপালট পরিবর্তন ঘটেছে। সবথেকে বড় পরিবর্তন– সেলুলয়েডের যুগ পেরিয়ে ডিজিটাল যুগে আসা। ফলে কী ভাবনায়, কী স্টাইলে, কী চটকদারিতায়, কী আধুনিক কারিগরিতে বাংলা ছবিতে ঘটেছে বিপ্লব। তবু অনস্বীকার্য ‘অ্যানাক্রনিজ্ম’ বা কালানুক্রমিক অসংগতি পেরিয়ে উত্তমকুমার উত্তীর্ণ হয়েছেন কালজয়ী ক্লাসিক মহিমায়। এবং সম্প্রতি তাঁর ‘নায়ক’ দেখে অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে হয়েছে, এমন ‘নায়ক’ কেন বাংলা ছবিতে আর চোখে পড়ে না!
তিনি বেঁচে থাকলে আর-এক বছর পরেই তাঁর ১০০তম জন্মদিনের মহোৎসব হত। তবু ১৯২৬-এর ৩ সেপ্টেম্বর জন্মানো এই মানুষটি এখনও পুরনো হলেন না, বাঙালির মনকেমন এবং স্মৃতিতে আজও তঁার সেই ভুবনভোলানো হাসি, সেই কেশবিন্যাস, দীপিত উপস্থিতি, সাবলীল অভিনয় এবং চুঁইয়ে পড়া গ্ল্যামার বা লাবণ্যলোক এতটুকু ম্লান হল না। এই উত্তম-ম্যাজিক কি একেবারেই ব্যাখ্যার অতীত?
উত্তম-সুচিত্রা। এই রোম্যান্টিক জুটিকে কোনও বাঙালিই বয়স-ক্লান্ত হতে দেখেনি। তাই তাদের বঙ্গস্মৃতিতেও বলিরেখা পড়ল না। উত্তমকুমারের সমসাময়িক যাঁরা, তাঁরা নায়ক-নায়িকা থেকে এখন পার্শ্বচরিত্রে। উত্তম-সুচিত্রাকে যেতে হয়নি সেই ক্রমিক ক্ষীয়মাণতায়। জরায় জর্জর হননি তাঁরা বাঙালির চোখের সামনে। উত্তমকুমার খাঁটি বাঙালি। বাঙালির সংসার চায় এমনই এক নিছক বাঙালি ভদ্রলোক। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে উত্তমকুমারেরই প্রতিধ্বনি চায় বাঙালি মন। এই কারণেই বাঙালির উত্তম-মেদুরতা ফুরনোর নয়। ‘নায়ক’ ছবিতে উত্তমকুমারকে ‘নায়ক’-রূপে সত্যজিৎ রায় ভাবলেন, আর কাউকে ভাবতেই পারলেন না, তার একটিই কারণ– তিনিই বাঙালির মনে চিরদিনের ‘নায়ক’। ‘নায়ক’ ছবি সমস্ত পুরনো চিহ্ন মুছে তাই এত সহজে একালের হয়ে ফিরে এল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.