Advertisement
Advertisement

Breaking News

Priyanka Gandhi

প্রিয়াঙ্কার ব্যাগের মর্মকথা

প্রিয়াঙ্কার সোচ্চার ব্যাগবার্তার সামনে বিজেপির নীরব থাকা সম্ভব নয়।

Editorial on Priyanka Gandhi Bag
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:December 23, 2024 12:18 am
  • Updated:December 23, 2024 12:18 am  

বিজেপি সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ‘1984’ লেখা ক‌্যাম্বিস ব‌্যাগ দিয়েছেন। শিখ দাঙ্গা বোঝাতে। কিন্তু অনুষঙ্গটি যে আরও ব্যাপক!

লোকসভায় কংগ্রেসের নবতম সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পরপর দু’দিন তাঁর কাঁধে ঝোলানো একটি আপাত সাধারণ ক‌্যাম্বিস ব‌্যাগ বহন করে যে-বার্তাটি সহজে দিলেন, তা বাঙালির মনে আনতেই পারে সুকুমার রায়ের এক বিখ‌্যাত লাইনের প্রতিধ্বনি: ব‌্যাগের আমি, ব‌্যাগের তুমি, ব‌্যাগ দিয়ে যায় চেনা। লোকসভায় একজন মহিলা সাংসদের মহার্ঘ গুচি ব‌্যাগ হয়ে উঠেছিল কৌলীন‌্য, আভিজাত‌্য, সামাজিক শ্রেণি বা আত্মম্ভরিতার পরিচায়ক। এই ‘ব্র‌্যান্ডেড’ ব‌্যাগের জন‌্য শ্লেষ ও সমালোচনার পাত্রীও হতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

প্রিয়াঙ্কার আপাত আটপৌরে ক‌্যাম্বিস ব‌্যাগ অবশ‌্য মোটেও নয় মহার্ঘ কৌলীন‌্যর ঘোষক। শ্রেণিবিভেদের এতটুকু ব‌্যঞ্জনা নেই প্রিয়াঙ্কার কাঁধে ঝোলানো সাধারণ ব‌্যাগে। কিন্তু দু’দিন পরপর তাঁর কাঁধের ব‌্যাগবার্তাই চিনিয়ে দিল তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, আলো ফেলল তাঁর আসন্ন বহতায়। প্রথম দিন তিনি যে-ব‌্যাগ বহন করে প্রবেশ করলেন সংসদে, তার বুকে এই চমকপ্রদ বার্তা: ‘মোদি-আদানি ভাই ভাই’। এই বেদিত ব‌্যঙ্গ ও অকপট ঘোষণা লুফে নিলেন কংগ্রেস সাংসদরা। এবং প্রিয়াঙ্কার এই ‘মোদি-আদানি ভাই ভাই’ ব‌্যাগ হয়ে উঠল কংগ্রেসের প্রতিবাদী বিষোদ্গারের বাহক। পরের দিন আরও এক অসাধারণ ব‌্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সংসদে এলেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু এই সাধারণ ব‌্যাগের গায়ে লেখা একটি শব্দ বিজেপির আঁতে জব্বর আঘাত করল নিঃসন্দেহে। কারণ শব্দটি ‘প‌্যালেস্তাইন’। যা সংশয়হীন বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশের সংখ‌্যালঘুদের সমর্থনে। শুরু হয়ে গেল প্রিয়াঙ্কার ব‌্যাগবার্তা নিয়ে বিতর্ক ও চর্চা।

প্রিয়াঙ্কার এই বিরোধী এবং সোচ্চার ব‌্যাগবার্তার সামনে বিজেপির নীরব থাকা সম্ভব নয়। দলের পরামর্শে পরের দিন বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারঙ্গী প্রিয়াঙ্কাকে উপহার দিলেন ‘1984’ লেখা একটি অতি সাধারণ ক‌্যাম্বিস ব‌্যাগ। ‘1984’ ইংরেজি লেখা, রক্তের অক্ষরে। প্রিয়াঙ্কা এমন একটি ব‌্যাগ লোকসভায় উপহার নিতে মুহূর্তের আড়ষ্টতা প্রকাশ করেন। তারপরই তাঁর নিশ্চয়ই মনে পড়ে জর্জ অরওয়েলের লেখা ডিসটোপিয়ান উপন‌্যাস ‘1984’! অপরাজিতা বলেন, তিনি প্রিয়াঙ্কাকে এই ব‌্যাগ দিয়েছেন একটিই উদ্দেশ্য। তা হল, তাঁকে ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গার কথা মনে করাতে।

এই একটি ঘটনা সারা পৃথিবীকে বুঝিয়ে দিল বিজেপি সাংসদ ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী– এই দুই ব‌্যক্তির শিক্ষার পার্থক‌্য। ‘নাইন্টিন এইট্টি ফোর’ বলতে বিশ্ব বোঝে অরওয়েলের দুঃস্বপ্নের উপন‌্যাস, যে উপন‌্যাসের মর্মকথা– কীভাবে ক্ষমতার শাসন এবং হুংকার প্রতিষ্ঠিত হয় বাক্‌স্বাধীনতা সম্পূর্ণ কেড়ে নেওয়ার মাধ‌্যমে। অরওয়েল তাঁর উপন‌্যাসে দেখিয়েছেন কীভাবে বিকৃত করা হয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অতীত। কীভাবে সৃষ্টি করা হয় নতুন ভাষা, যে-ভাষায় থাকবে না প্রতিবাদের কোনও শব্দ, ব‌্যক্তিচেতনার কোনও উচ্চারণ। অপরাজিতা সম্ভবত প্রিয়াঙ্কাকে উপহার দিয়েছেন এই অপরিহার্য আন্তর্জাতিক অনুষঙ্গ মনে না-রেখেই। আর, প্রিয়াঙ্কা হয়তো জেনেই মৃদু হেসে গ্রহণ করেছেন। উপহার শেষাবধি বুমেরাং হয়ে গেল না তো?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement