Advertisement
Advertisement

Breaking News

Jammu and Kashmir

বদলে যাওয়া ভূস্বর্গ, সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চিরাচরিত ‘কাশ্মীর সমস্যা’

পর্যটক হত্যায় বোঝা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদের চরিত্র বদল ঘটেছে।

Editorial on Jammu and Kashmir Problem
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 29, 2025 5:12 pm
  • Updated:April 29, 2025 5:12 pm  

২০০২ ও ’০৩-এ দেখা সেই কাশ্মীর আমূল বদলে গিয়েছে। হালে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চিরাচরিত ‘কাশ্মীর সমস‌্যা’। লিখছেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

শ্রীনগরে হুরিয়ত কনফারেন্সের দপ্তরে তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল গনি বাট ও ২৬ বছর জেলে কাটানো কাশ্মীরের ‘নেলসন ম‌্যান্ডেলা’ সাব্বির শাহ-র কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন রাম মুখোপাধ্যায় নামে এক বঙ্গসন্তান। এ-রাজ্যের বাম রাজনীতি ছেড়ে তিনি তখন কাশ্মীরে হুরিয়ত কনফারেন্সের সক্রিয় কর্মী। কলকাতা থেকে সাংবাদিকরা গেলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। সময়টা ২০০২।

Advertisement

বেশ অনেকটা সময় পর কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলির জোট হুরিয়ত কনফারেন্স ভোট বানচাল করতে নেমেছে। উপত্যকায় চূড়ান্ত সক্রিয় পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। সন্ধে নামার আগেই তখন কারফিউ লেগে যেত শ্রীনগর-সহ উপত্যকায়। কিন্তু তার মধ্যেই অবাধে চলাফেরা করতেন রাম মুখোপাধ্যায়। কীভাবে? বলতেন, “দু’হাত মাথার উপর তুলে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটি। এতে জওয়ানরা বুঝতে পারে আমি কাশ্মীরি বা পাক জঙ্গি নই, আবার জঙ্গিরাও বুঝতে পারে যে আমি নিরাপত্তারক্ষী বা স্থানীয় কেউ নই।” আসলে কাশ্মীরে সে-সময় সন্ত্রাসবাদ তুঙ্গে থাকলেও বহিরাগতরা ছিল কিছুটা ‘নিরাপদ’। পর্যটকের গায়ে হাত না দেওয়ার নীতি নিয়ে চলত জঙ্গি ও বিছিন্নতাবাদীরা। পরিচয়পত্র থাকলে কোনও সমস্যা ছিল না নিরাপত্তাবাহিনীর দিক থেকেও।

রাম মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতকে তাঁর পরিচয়পত্র বানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও কাশ্মীর তখন ছিল সম্পূর্ণ পর্যটকশূন্য। ২০০২ সালের ওই সেপ্টেম্বরে কাশ্মীরে ‘পর্যটক’ বলতে ছিলাম আমরা শ’-দুয়েক সাংবাদিক। বিধানসভা ভোট কভার করতে দেশের সব প্রান্ত থেকেই সাংবাদিকরা কাশ্মীরে হাজির হয়েছিলেন।

কলকাতা থেকে ছিলাম একমাত্র আমি। বহু বিদেশি সাংবাদিকও এসেছিলেন। সে-সময় দেশে হাতেগোনা কয়েকটি ইংরেজি ও হিন্দি খবরের চ্যানেল। সেই চ্যানেলের সাংবাদিকদের মধ্যে তখন এনডিটিভি-র বরখা দত্ত ও বিক্রম চন্দ ছিলেন কাশ্মীরে অসম্ভব জনপ্রিয়। তাঁরা ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেরলেই দেখতাম শুনশান রাস্তাতেও ভিড় জমে যেত। বরখা পাঞ্জাবি হিন্দু, এবং বিক্রম কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিত পরিবারের সন্তান। রাস্তাঘাটে তাঁদের জনপ্রিয়তা বুঝিয়ে দিত– ওরকম ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেও কাশ্মীরি সমাজে ধর্মীয় বিদ্বেষ ততটা প্রকট নয়।

তখন কাশ্মীরে কার্যত দুটো মাত্র হোটেল খোলা ছিল। একটি ঝিলমের তীরে রেসিডেন্সি রোডে আদুস ও অন্যটি ডাল লেকে যাওয়ার রাস্তায় ব্রডওয়ে। দুটো হোটেলই সাংবাদিক ঠাসা। আমার ঠিকানা ছিল ব্রিটিশ আমলের আদুস হোটেল। ব্রডওয়ে তখন ছিল আধুনিক ও স্টার হোটেল। হোটেলের গেটের মুখে ছিল বিএসএফের বাঙ্কার। আদুস রাস্তার উপর খোলা উন্মুক্ত। সামনে একটা অটো স্টপ।

শ্রীনগর পৌঁছে আদুস হোটেলে ব্যাগ রেখে প্রথমে গিয়েছিলাম অদূরে ‘গ্রেটার কাশ্মীর’ কাগজের দপ্তরে। পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা সংগ্রহ করতে। সেখানে বসে থাকতে থাকতেই হঠাৎ প্রচণ্ড আওয়াজ। এত প্রবল বিস্ফোরণের আওয়াজ আগে শুনিনি। কাগজের দফরের সামনেই গ্রেনেড ছুড়েছে জঙ্গিরা। একজন পথচারী হত। ওখান থেকে আমার হোটেল আদুস মেরেকেটে দুশো মিটার পথ। কিন্তু কীভাবে সেটুকু পেরব ভাবছি। আতঙ্কে হাঁটু ভেঙে যাচ্ছে। পা চলছে না। আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে এলেন ‘গ্রেটার কাশ্মীর’-এর এক সাংবাদিক, মাসুদ আহমেদ। পৌঁছে দিলেন আদুসের গেট পর্যন্ত। প‌্যান্ট থেকে টোকা দিয়ে ধুলো ঝাড়ার মতো বললেন, “ব্রাদার এটা এখানে রোজকার ঘটনা।
দু’-একদিনে অভ‌্যস্ত হয়ে যাবে।”

সেবারের দীর্ঘ কাশ্মীর সফরে তাঁর প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও মাসুদভাই আমার অভিভাবক ও গাইডের ভূমিকা পালন করেছিলেন। টের পেয়েছিলাম ‘কাশ্মীরিয়ত’ ব‌্যাপারটা কী।

গ্রেনেড আতঙ্ক পার করে হোটেলে ফিরতেই আর-এক বিপত্তি। ঘরের দরজা খুলতেই দেখি মেঝেতে পরে ব্রাউন রঙের একটি মোটা খাম। তার ভিতর প্রচুর লিফলেট জাতীয় কাগজ ও ছবি। একটি সাদা পাতায় বিপদ সংকেতের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত খুলির ছবি বড় করে ছাপা। ওই খাম খোলার পর ভয়ে হাড়হিম হয়ে গেল। বুঝলাম, কাশ্মীরে পা দেওয়ামাত্র কলকাতার সাংবাদিককে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বা কোনও জঙ্গি সংগঠনের তরফে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হল। কে ওই খাম ঘরে রেখে গেল তা নিয়ে হোটেল কর্মীদের আর ঘাঁটালাম না। শুধু উপলব্ধিতে রাখলাম, রাস্তায় যতই নিরাপত্তাবাহিনীর টহল ও নজরদারি থাক উপত্যকার প্রতিটি ইঞ্চিই জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি!

দু’-দফার ভোট দেখেছিলাম। টানা ষোলো-সতেরো দিন কাশ্মীরে কাটিয়েছিলাম। মাসুদভাইয়ের ঠিক করে দেওয়া একটি মারুতি ভ্যান নিয়ে রোজ সকালে বেরিয়ে পড়তাম। একা-একা চষে ফেলতাম কাশ্মীরের গ্রামগঞ্জ। বারামুলা, কুপওয়ারা, সোপোর, হান্দওয়ারা, গুলমার্গ, গন্দেরবাল, বিজবেহারা, অনন্তনাগ, পুলওয়ামা ইত্যাদি। হাজির হতাম ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মুফতি মহম্মদ সইদ, মেহবুবা মুফতি, গুলাম নবি আজাদ প্রমুখ নেতানেত্রীর সভায়। শ্রীনগরে হাজির ছিলাম সোনিয়া গান্ধীর জনসভায়। কাশ্মীরিরা তখন
সভায় আসতেন মুখে কাপড় বেঁধে। যাতে কাউকে চেনা না যায়। সভা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত তটস্থ থাকত সবাই। যে কোনও সময় যে কোনও ঘটনা ঘটে যেতে পারত!

একা-একাই একদিন চলে গিয়েছিলাম উরিতে নিয়ন্ত্রণরেখা পর্যন্ত। রাস্তায় দু’বার সেনা কর্তাদের অনুমতি নিতে হল। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গাড়িতে উঠে পড়লেন ‘মিলিটারি ইন্ট‌্যালিজেন্স’ পরিচয় দেওয়া এক উত্তর ভারতীয়। ঝিলম নদীর ধার দিয়ে অপূর্ব রাস্তা। ‘বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন’ কিছুটা দূরে দূরেই মাইলফলকে লিখে রেখেছে, ‘স্বর্গ যদি কোথাও থেকে থাকে তা এখানে’। কথাটা একশো শতাংশ সত্যি মনে হয়েছিল। পাহাড়ের খাঁজে-খাঁজে দাঁড় করানো বোফর্স কামান। মাঝে মাঝেই পাহাড় কাঁপিয়ে গুম গুম করে উঠছে গোলার আওয়াজ।

সেদিন সকাল থেকেই ‘শেলিং’ চলছে দু’-পক্ষের। পাকিস্তানের শেলিংয়ের মধ্যেও উরির নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গ্রামে গিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলাম। কারণ এই পাহাড়ি উপজাতি সম্প্রদায়ের কাশ্মীরিরা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তীব্র বিরোধী। উপত্যকার কাশ্মীরিদের ঠিক বিপরীত মেরুতে তাঁদের অবস্থান। উপত্যকায় সবসময় যে চাপা আতঙ্ক, উরিতে তা সম্পূর্ণ উধাও। ভোটের দিনও দেখেছিলাম উরিতে হইহই করে উৎসবের মতো ভোট হচ্ছে। কখনও কখনও মাসুদ ভাইও তাঁর আরও দু’-তিনজন সহকর্মীকে নিয়ে আমার সঙ্গী হতেন। ‘মাচো’ স্টোরি করাবেন বলে একদিন আমাকে নিয়ে গেলেন শ্রীনগর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সইবুগ বলে একটি গ্রামে হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার ইন চিফ সালাউদ্দিনের বাড়িতে। ১৯৮৮ সালে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের সূচনার পর থেকেই সালাউদ্দিন পাক-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্‌ফরাবাদে পলাতক। সেখান থেকেই তিনি তখন উপত‌্যকায় সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতেন।

ষোলো-সতেরো দিনের ওই কাশ্মীর সফরে প্রতি মূহূর্তে সন্ত্রস্ত থেকেছি। একাধিক এনকাউন্টারের সাক্ষী হয়েছি। চোখের সামনে দেখেছি আইইডি বিস্ফোরণে সন্দেহভাজন জঙ্গির বাড়ি উড়ে যাচ্ছে। লালচকে একাধিকবার কাশ্মীরি যুবক ও নিরাপত্তাবাহিনীর স্ট্রিট ফাইটিংয়ের মধ্যে পড়েছি। যুবকরা পাথর ছুড়ত। মধ‌্যরাতে আদুস হোটেলের তিনতলার ঘর থেকে দেখেছি সামনের রাস্তায় জঙ্গিদের সঙ্গে জওয়ানদের গুলির লড়াই চলছে। ভয়ে কম্বল নিয়ে খাটের তলায় ঢুকে গিয়েছি। কারণ আদুসের কাচের জানলাগুলো ছিল প্রায় মেঝে পর্যন্ত। সোপোরে সুদৃশ‌্য আপেল খেতের পাশে গাড়ি থেকে নেমে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়ে দেখেছি– কিছুটা দূরে গুলি বিনিময় চলছে। হান্দওয়ারায় নিচে দাঁড়িয়ে দেখেছি
পাহাড়ের উপর থেকে ভোটের লাইন তাক করে গুলি ছুড়ছে জঙ্গিরা।

এত সব ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার পরেও ওই কাশ্মীরিয়তের টানে এক বছর বাদে ফের অ‌্যাসাইনমেন্ট পেয়ে খুশি মনে কাশ্মীরে গিয়েছি। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার কাশ্মীরে অায়োজন করেছিল আন্তঃরাজ‌্য পরিষদের বৈঠক। তৎকালীন বাংলার মুখ‌্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই বৈঠকে যোগ দিতে শ্রীনগর গিয়েছিলেন। কাশ্মীরে তখন বাজপেয়ী সরকারের ‘হিলিং টাচ’ নীতি চলছিল। সবে চালু হয়েছে বিএসএনএলের মোবাইল পরিষেবা। পরিষদের বৈঠকের দু’-তিনদিন আগেই আমি ট্রেনে জম্মু হয়ে শেয়ারে গাড়িতে করে শ্রীনগর পৌঁছে গিয়েছিলাম। উঠেছিলাম সেই আদুস হোটেলে।

প্রথম দু’-দিন অচেনা কাশ্মীর দেখছিলাম। সন্ধে পর্যন্ত লাল চকে দোকানপাট খোলা। অল্পবিস্তর পর্যটক ডাললেকের আশপাশে। কিন্তু পরিষদের বৈঠকের দিন সকাল থেকেই বদলে গেল শ্রীনগরের চেহারা। ভোর থেকে রাস্তায় গুলির লড়াই। লালচকের একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছে কয়েকজন জঙ্গি। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে সেই হোটেলে। আগের দিন রাতেও যে টেলিগ্রাফ অফিস থেকে খবর ফ‌্যাক্স করেছি তার ভিতরেও গুলির লড়াই চলছে।

দু’-কিলোমিটার দূরে পরিষদের বৈঠকস্থলেই পৌঁছনো যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত পিঅাইবি বিশাল পুলিশ পাহারা দিয়ে হোটেল থেকে সাংবাদিকদের বৈঠকের জায়গায় নিয়ে গেল।

পরিষদের বৈঠক যে দু’দিন চলল, সেই দু’দিনই এইরকম অশান্ত থাকল শ্রীনগর। সারা দেশ দেখল বাজপেয়ী সরকার মোটেই ক্ষতে উপশম করতে পারেনি। কিন্তু ওই কাশ্মীরিয়তের অমোঘ টানে আরও কিছু স্টোরি করার জন‌্য আমি পরিষদের বৈঠকের পরও পাঁচ-ছ’দিনের জন‌্য থেকে গেলাম কাশ্মীরে। দু’-তিনদিন ২৪ ঘণ্টা আমার সঙ্গী হয়ে গেলেন দিল্লি থেকে আসা খ‌্যাতনামা সাংবাদিক দেবারুণ রায়। অসমসাহসী দেবারুণদার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শ্রীনগর দেখা এক অন‌্য অভিজ্ঞতা। এক বছর আগে কাশ্মীরে ভয়ে যে জায়গাগুলিতে যেতে পারিনি এবার দেবারুণদার সঙ্গে সেখানে গেলাম। পর্যটকশূন‌্য ডাল লেকে শিকারা ভ্রমণ করলাম। জামা মসজিদে শুক্রবারের নমাজে হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুকের ভাষণ শুনতে গেলাম। নমাজের পর মিরওয়াইজের জ্বালাময়ী ভাষণ শেষ হওয়ামাত্র সাধারণত সংঘর্ষ হত। সেদিন অবশ‌্য ঘটনাচক্রে সংঘর্ষ হয়নি। আমরা মিরওয়াইজের বাড়িতে যেতে পেরেছিলাম। দেবারুণদা ও আমি শ্রীনগরে রাতের কারফিউ দেখতেও বেরিয়েছিলাম। অল্পের জন‌্য জওয়ানের গুলি থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। দেবারুণদা দিল্লি ফিরে যাওয়ার পরে আরও কয়েক দিন শ্রীনগরে থেকে গিয়েছিলাম। তার মধ্যেই ঘটেছিল সংসদ হামলার কুখ‌্যাত জঙ্গি গাজিবাবার খতম অভিযান।

তখন শ্রীনগরে বিএসএফের পিআরও ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন সাংবাদিক তীর্থ। তিনি আদুসে ফোন করে আমাকে ‘খবর’ দিয়েছিলেন গাজিবাবার খতম হওয়ার। ঠিকানা দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখনই চলে যাও।’ আদুসের সামনে থেকে অটো নিয়ে চলে গিয়েছিলাম শ্রীনগরের সেই ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায়। বিএসএফ ঘিরে রেখেছিল বাড়িটিকে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু সেখানেও একজন বাঙালি অফিসারের সাক্ষাৎ পাওয়ায় গাজিবাবার ওই ডেরাতে ঢুকতে পেরেছিলাম। বাড়িটার নিচে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। তার ভিতর দিয়ে গাজিবাবা যে-জায়গায় লুকিয়েছিল সেখানেও পৌঁছতে পেরেছিলাম। গাজিবাবার ডেরা থেকে বেরিয়ে তীর্থর অফিসে গিয়েছিলাম বিএসএফের ডিজি-র সাংবাদিক বৈঠকে। ওইরকম সাংবাদিক বৈঠক জীবনে আর দেখিনি।

সাংবাদিক বৈঠকে গাজিবাবার গুলিবিদ্ধ দেহ নিয়ে আসা হয়েছিল। তখনও দেহ থেকে রক্ত পড়ছে। স্থানীয় কাশ্মীরি সাংবাদিকরা ডিজি-কে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিলেন। ওটাই গাজিবাবা তা অনেকে বিশ্বাস করতে রাজি হচ্ছিলেন না। গাজিবাবার ওই খতম অভিযান নিয়ে সম্প্রতি ‘গ্রাউন্ড জিরো’ বলে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি দেখা হয়নি। তবে তীর্থর সৌজন্যে সেদিন ‘গ্রাউন্ড জিরো’-তে থাকার সুযোগ ঘটেছিল এই অধমের। ২০০২ ও ’০৩ সালে দেখা সেই কাশ্মীর আমূল বদলে গিয়েছে। পহেলগাঁওয়ে ‘ধর্ম পরিচয়’ জেনে যেভাবে পর্যটকদের জঙ্গিরা খুন করেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদের চরিত্র ও কৌশলেও আমূল বদল ঘটেছে। নয়া কৌশলে কাশ্মীরি জনতা ও কাশ্মীরিয়তের সঙ্গে বাকি ভারতবাসীর যে আত্মার বন্ধন, তাকেই ছিন্ন করতে চাইছে সন্ত্রাসবাদীরা।

ফলে ফের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়ল কাশ্মীর সমস‌্যা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement