বেবিফুড থেকে মিনারেল ওয়াটার। স্যান্ডউইচে মরা কুকুরের মাংস। শেষ পর্যন্ত ওষুধও জাল! আমাদের অধঃপতন কোন নরকে শেষ হবে?
মানুষের নীতিবোধ যত পুরনো, তারই সমবয়সি দুর্নীতির প্রতি মানুষের প্রবণতা। সভ্যতার সর্বকালেই বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে দুর্নীতির বিচিত্র রূপ ও প্রকাশ। কীসের লোভে মানুষ যুগে যুগে দুর্নীতির পথে পা বাড়িয়েছে? মূলত, তাড়াতাড়ি ধনী ও ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার লোভে। সৎ পথেও অর্থ ও ক্ষমতা অর্জন সম্ভব। কিন্তু সৎ পথে থেকে ঈপ্সিত সাফলে্য পৌঁছতে লাগে শ্রম, সাধনা, প্রতিভা এবং সৎ বোধবুদ্ধির নিয়ন্ত্রিত পথে চলার সাহস ও আত্মবিশ্বাস। দুর্নীতির পথে এসব নিয়ন্ত্রণ ও বাধার বালাই নেই।
অর্থ ও ক্ষমতার জোরে সহজেই দুর্নীতির পথে সমাজের কেউকেটা হয়ে ওঠা সম্ভব, আমাদের চারধারে তাকালে এই কথাটা বুঝে ওঠা শক্ত নয়। এই প্রসঙ্গে, পৃথিবীর সেরা তিন ক্ষমতাবান ও অর্থবান মানুষের কথা ভাবা যেতে পারে। ৪২,০০০ কোটি ডলারের মালিক ইলন মাস্ক বিশ্বের এক নম্বর ধনী। এবং বিপুল ক্ষমতার আসনে উপবিষ্ট। দ্বিতীয় স্থানে অ্যামাজনের এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান, ২৬,৬০০ কোটি ডলারের অধীশ্বর জেফ বেজোস। আর তৃতীয় স্থানে ২৪,২০০ কোটি ডলারের লাগাম হাতে মেটা-র কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গ। এঁদের কাউকেই গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসী পাতা ভাবার হাস্যকর বাড়াবাড়ি আমরা করব না।
আবার এ-কথাও ভাবতে পারব না এঁরা অর্থ উপার্জনের জন্য হাসতে-হাসতে বিক্রি করবেন নষ্ট বেবিফুড, নকল মিনারেল ওয়াটার, স্যান্ডউইচে মেশাবেন মরা কুকুরের মাংস, যেমন ধরা পড়েছিল একটা কলকাতার ফুডপাথে। অর্থ ও ক্ষমতার লোভ আমাদের নীচতার কোনও অন্তিম বিন্দু রাখেনি। আমাদের নৈতিক অবরোহণ কোন নরকে শেষ হবে, কে জানে! ক্রমশ দেখা যাচ্ছে জাল ওষুধে ভরে গিয়েছে আমাদের ওষুধের বাজার। ডাক্তার ‘ঠিক’ ওষুধ লিখছেন। আমরা ওষুধের দোকান থেকে আপাতভাবে ‘ঠিক’ ওষুধই কিনে আনছি। কিন্তু সেই ওষুধ আসলে ভুসি মাল। ভিতরের মালমশলা নকল। কারণ কিছু মানুষ প্রতিদিন বেছে নিচ্ছে নকল ওষুধ বিক্রি করে বড়লোক হওয়ার সহজ পথ– অন্যায়বোধ, অনুশোচনা, নৈতিক বাধা ছাড়া– একেবারে হাসতে-হাসতে চলছে এই নিখাদ শয়তানি।
ক’দিন আগেও বড়বাজারে বেশ কয়েকটি দোকানে জাল ওষুধের দেখা পেয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। এবার দেখা যাচ্ছে কলকাতার অনেকটা জুড়ে নকল ওষুধের কারবার জঁাকিয়ে বসেছে: বাগড়ি মার্কেট, গান্ধী কমপ্লেক্স, মেহেতা বিল্ডিং, যেখানেই ওষুধের আড়ত, সেখানেই নকল ওষুধের ছড়াছড়ি। অম্বলের ওষুধ, যা বাঙালি চোখ বুজে মুড়িমিছরির মতো খায়, তারও আসল-নকল চেনার উপায় নেই। বিশ্বের সবথেকে ধনী দেশেও দুর্নীতি আছে।
কিন্তু স্খলন-পতন-পাপের একটা সীমাও আছে। তবে বাঙালি বোধহয় ছিঁচকে নকলের মাস্টারক্লাস। স্বয়ং গিরিশচন্দ্র ঘোষের বাবা নাকি সাহেবদের শিখিয়ে ছিলেন দু’-নম্বরী হিসাবের খাতার মাহাত্ম্য। গিরিশবাবুও একসময় পার্কার কোম্পানিতে হিসাবের খাতা রাখতেন নিজের পিতৃদত্ত বোধ ও যত্নের আলোয়। ওষুধের ব্যবসার খাতায় এখনকার বাঙালি দাগ রেখে যাচ্ছে বইকি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.