নিউটাউনে একজন টোটোচালককে খুনের পর কেটে ফেলা হয়েছে তাঁর গলার নলি ও যৌনাঙ্গ। দেহ থেকে প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা প্রাচীন প্রবণতা।
‘ফিলিয়াল পাইতি’। কনফুশিয়াসের ধর্মমতে, এই শব্দবন্ধ অত্যন্ত পবিত্র। এখানে মা-বাবা, অন্যান্য কাছের অভিভাবক ও সন্তান-সন্ততির প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা প্রদর্শন করা হয়। বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, পাশে আছি। শ্রদ্ধা, বিনয়, সমর্পণ সব মিলে যায় এই ‘ফিলিয়াল পাইতি’-র মোড়কে। সেই কারণে ‘লিংচি’ বা ছুরির মতো ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরে অসংখ্য আঘাত করে মৃত্যু ঘটানোর প্রক্রিয়াকে কনফুশিয়ান ধর্মমতে গ্রহণযোগ্য বলে বিচার করা হয়নি।
কেননা, এমন নির্মম আঘাতের মাধ্যমে হত্যা করা সবসময়ই ‘ফিলিয়াল পাইতি’-র সৌজন্যমূলক অবস্থান ও স্থিতিকে অস্বীকার করে। আরও একটা আপত্তির কারণ হল, মানব দেহ যদি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, তাহলে পরলোকে তা পর্যাপ্ত শান্তি ও সমাহিতি পায় না আত্মা। অথচ, অবাক করা কথা, প্রাচীন চিনেই কিন্তু ‘লিংচি’ বা ‘স্লো স্লাইসিং’ বা ‘ডেথ বাই আ থাউজ্যান্ড কাট’-এর ধারণা পল্লবিত হয়। খ্রিস্ট্রীয় দশম শতক থেকে খ্রিস্ট্রীয় বিশ শতক পর্যন্ত এইভাবে হত্যা করার অজস্র দৃষ্টান্তে চিনে পাওয়া যাবে। ভিয়েতনামেও এই প্রথার প্রচলন ছিল বলে খবর।
‘ডেথ বাই ডিভিশন’ বলে একটি শব্দবন্ধর উল্লেখ করেছেন জার্মান অপরাধ-মনস্তত্ত্ববিদ হেইন্ড। তাঁকে উদ্ধৃত করে শিল্প-ঐতিহাসিক জেমস এলকিন্স হাজির করেন ‘ডিসমেম্বারমেন্ট’ তত্ত্ব। এর অর্থ: শরীর থেকে ধারালো অস্ত্রের দ্বারা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আলাদা করে ফেলা। জেমস এলকিন্সের বক্তব্য– এইভাবে যদি ব্যক্তির জীবদ্দশায় অঙ্গচ্ছেদ করা হয়, তাহলে ‘সাবজেক্ট’ বা ব্যক্তির পক্ষে বেশিক্ষণ জীবিত থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং শরীরে বহুবিধ আঘাতের চিহ্ন থাকলেও, ব্যক্তির মৃত্যু আসলে অনেক আগেই ত্বরান্বিত হয় ‘লিংচি’-র ক্ষেত্রে।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়তে পারে, অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ সিনেমার প্রথম পর্বের কথা, যেখানে কুখ্যাত সর্দার খান একজন বাহুবলীকে প্রথমে কুপিয়ে খুন করে, তারপর প্রমাণ লোপাটের জন্য, সেই বাহুবলীর দেহকে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কসাইখানা সংলগ্ন চত্বরে। এতে আক্রোশ পূরণ যেমন হল, তেমনই পুলিশি প্রক্রিয়া থেকে বাঁচার পথও তৈরি হল খানিকটা। বর্তমানে, দেশে এইভাবে হত্যা করার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। পার্টনারকে কুপিয়ে খুন করে তার দেহ সুটকেসে ভরে অন্যত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রায় ঘটে। ‘গোয়েন্দাপীঠ লালাবাজার’ সিরিজের খণ্ড জুড়ে বর্ণিত নানা আখ্যানে সুপ্রতিম সরকার খুনের পরে দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলার দৃষ্টান্ত একাধিকবার তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি নিউটাউনের নির্জন রাস্তায় খুন হয়েছেন সুশান্ত ঘোষ বলে একজন টোটোচালক। প্রথমে মাথায় ভারী সামগ্রী দিয়ে আঘাত করা হয়, তারপর ছুরি দিয়ে গলার নলি ও যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এই ঘটনায় জড়িত দু’জন নাবালক। এমন ভাবার কারণ নেই, সুশান্ত ঘোষ সচ্চরিত্র ব্যক্তি ছিলেন। যেভাবে তাঁর যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে, অনুমান– আক্রোশ মেটানোর পন্থা হিসাবেই এটি ভেবেচিন্তে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিশোধের আগুন কত ব্যাপ্ত হতে পারে, আবার প্রমাণিত হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.