ডেটিং সাইট ও সোশাল মিডিয়ায় অচেনা ব্যক্তির প্রতি অন্ধ বিশ্বাস কি আমাদের চেতনের অন্তঃসারশূন্যতাই প্রকাশ করে না?
‘ডান্সিং জোড়ি’ কম্পিটিশনে রাজের জায়গায় ‘সুরিজি’-কে দেখে স্তম্ভিত তানিয়া। ওরফে ‘তানিজি’। রাজ প্রতিযোগিতায় তার নাচের সঙ্গী। অন্যদিকে, সুরিজি তথা সুরিন্দর সাহানি তার স্বামী– যার সঙ্গে তড়িঘড়ি হয়ে যাওয়া বিয়েটা একটা অ্যাক্সিডেন্টাল চুক্তি বই আর কিছু না। আদতে দু’জনাই একই মানুষ। সুরিন্দর অ-সুখী স্ত্রীর মন জিততে লুক চেঞ্জ করে রাজের ভেক ধরেছে। সুরি বা রাজ– যারই প্রেমে পড়ুক না কেন মেয়ে, ‘কী ফর্ক্ প্যান্দা?’– দিনের শেষে লোকটা তো একই। গোটা নাচ জুড়ে তানিয়া জাবর কাটতে থাকে রাজ ও সুরিজির সঙ্গে কাটানো পৃথক-পৃথক মুহূর্তে। ঘাঁটতে থাকে সেসব টুকরো স্মৃতির ঝরাপালক যেখানে তার চোখ প্রতারণা করেছিল; বুঝতে দেয়নি যে তার স্বামী, তার মুখে হাসি দেখতে, দিতে পারে যে কোনও দরিয়ায় পাড়ি। সাজতে পারে আস্ত একটা অন্য মানুষ। প্রয়োজনে, বিসর্জন দিতে পারে নিজেকেও।
‘রব নে বনা দি জোড়ি’ ছবিটি দেখে যারা আপ্লুত হয়েছে বা হয়নি, দু’পক্ষেরই, একটি অভিযোগ কমন– কেমন আবোদা মেয়ে রে বাবা, যে একই মানুষে গোঁফ ও গোঁফহীনতার তফাত করতে পারে না! সেক্ষেত্রে আমরা আপাত নিরীহ গোঁফটিকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিতে পারি এই মর্মে যে গোঁফটা সেখানে রূপক। শিল্পে অত ত্রুটি ধরতে নেই। অথচ, ভাগে্যর এমনই পরিহাস যে শিল্প-সিনেমা-সাহিত্যের ছিদ্রান্বেষণে মগ্ন সমাজ খোদ নিজেই আসল ও নকলের পার্থক্য নিরূপণ করতে ভুল করে বাস্তবে। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে মার্কিন মডেল সেজে প্রায় ৭০০-র বেশি মহিলার সঙ্গে প্রতারণা করেছে এক যুবক। আপাতত পশ্চিম দিল্লির সাইবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাকে।
ধৃতের নাম তুষার সিং বিশ্ত। দিনের বেলা সে একটি বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগকারীর কাজ করত। রাত হলেই মার্কিন মডেল। প্রতারিত অভিয়োগকারিণীদের দাবি, একটি অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করত তুষার। তারপর ‘বাম্বল’ এবং ‘স্ন্যাপচ্যাট’-এর মতো জনপ্রিয় ডেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে জাল প্রোফাইল তৈরি করে একটি অ্যাপের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে এক মার্কিন মডেলের প্রোফাইলের আদলে নিজের প্রোফাইল রিক্রিয়েট করেছিল সে। সেই প্রোফাইল থেকেই ১৮ থেকে ২৫ বছরের মেয়েদের ‘শিকার’ বানানো শুরু। বন্ধুত্ব থেকে বিশ্বাস অর্জনের শাখা ছুঁয়ে সরাসরি লাফ ফোন নম্বরে। এবং তারপর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিয়ো চাইত। যারা বিশ্বাস করে ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছিল, তাদের ব্ল্যাকমেল করে টাকা দাবি করত।
তুষারকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ১৩টি ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করেছে পশ্চিম দিল্লির পুলিশ। তার ন্যায্য সাজাও হয়তো হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সস্তা শিকার ‘তুলে’ প্রতারণার এই ছক নতুন কিছু নয়। সে-অর্থে ইন্টারনেটকে দোষী সাব্যস্ত করা একপ্রকার বোকামি। প্রশ্ন রয়ে যায়, এত নমুনা-নিদর্শনের পরও ডেটিং সাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অচেনা ব্যক্তির প্রতি অন্ধ-বিশ্বাসের বিষয়টি নিয়ে। ভালবাসার ছদ্ম-স্বীকৃতি পাওয়ার মোহে আমরা কি এতটাই মগ্ন যে বাস্তব বোধে নয়, সেলুলয়েডে বাঁচছি?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.