Advertisement
Advertisement
Firecrackers

কালীপুজো মানেই আতসবাজি, ক্ষণিকের রংবাহার

বাজির মধ্যেই নিহিত চাঁদ-তারার দেশে পৌঁছনোর ব্যর্থ উচ্চাশার সেলিব্রেশন!

Editorial about Kali Puja and Firecrackers
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 30, 2024 8:21 pm
  • Updated:October 30, 2024 8:21 pm

বাজি নিয়ে রোম‌্যান্টিক স্বপ্নের শেষ নেই মানুষের। কারণ, বাজির মধ্যেই নিহিত চাঁদ-তারার দেশে পৌঁছনোর ব‌্যর্থ উচ্চাশার সেলিব্রেশন!

রাত পোহালে কালীপুজো। আর, কালীপুজো মানেই বাজি। বাজি মানেই কান ফাটানো শব্দ, চোখধাঁধানো আলো, বারুদের গন্ধ, বুকভরা ধোঁয়া। কালীপুজো বা দেওয়ালিতে বাজির উৎসব বললে– খুব ভুল হবে না। এই প্রসঙ্গে অস্কার ওয়াইল্ডের বাজি নিয়ে বিদ্রুপাত্মক রূপকথাটি মনে পড়তে পারে– ‘দ‌্য রিমারকেব্‌ল রকেট’। এক চমকপ্রদ হাউই।

Advertisement

রূপকথার শুরু এক রাজপুত্রের বিয়ের রাত্রে। পুতুলের মতো যে-রাজকুমারীর সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তার, সে কখনও দেখেনি বাজির বাহার। রাজকুমার তাকে বলেছে, আজ রাত্রে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের শেষ প্রহরে আকাশজুড়ে তোমাকে দেখাব বাজির বাহাদুরি। বাজির পাশে কোথায় লাগে চাঁদ-তারা! রাজকুমারী উদ্‌গ্রীব অপেক্ষায়। প্রাসাদের বাগানের এক কোণে অন্ধকারে অপেক্ষা করছে বাজির দল বাহাদুরি দেখানোর জন‌্য।
যতক্ষণ না গায়ে আগুন লাগানো হয়, বাজিরা বেশ কুৎসিত, প্রায় সকলেই চুপচাপ। তবে এদের মধ্যে চালবাজির শেষ নেই ওই হাউইটার। সে বলছে অন‌্য বাজিগুলোকে, রাজকুমারী মুগ্ধ হবে শুধু আমাকে দেখে। কত রঙিন চমকের ঢেউ তুলতে তুলতে কী বিপুল তেজে আমি উড়ে যাব ওই চাঁদের কাছে। আর তোমরা সকলে টুকটাক আলো জ্বেলে, ফুটফাট শব্দ করে, পড়ে থাকবে অন্ধকার পৃথিবীতেই। এমন সময় কে একজন হাউইটাকে তুলে নিয়ে চলে গেল তার গায়ে আগুন লাগাতে। আগুন দেখে ভয়ে হাউই কাঁদতে লাগল হাপুস নয়নে। তার গা গেল ভিজে। ভিজে হাউইকে কিছুতেই জ্বালানো গেল না।

রাজপুত্র বলল রেগেমেগে, ছুড়ে ফেলে দাও ওটাকে। হাউই গিয়ে পড়ল এক নর্দমায়। একটা ব‌্যাঙের সামনে। ব‌্যাঙকে হাউই বলল, তুমি তো জীবনে নর্দমা ছাড়া কিছুই দেখোনি। আমি এখুনি যাব ওই দূরের চাঁদ-তারার দেশে। তার আগে একটু জিরিয়ে নিতে এলাম। ব‌্যাঙ কিছু না-বুঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে হাউইয়ের দিকে। ভিজে হাউই গোমড়ামুখে চাঁদের দেশে যাওয়ার তেজ সঞ্চয় করতে থাকে। শেষ হয় রাত। গমগম করে উঠে পড়ে সূর্য। রোদ্দুর শুকনো করে হাউইয়ের গা। রাস্তার ধারে দুটো ছেলে ভাবে, ভারি মজার বাতি তো, জ্বালিয়ে দেখি। যেই না তারা আগুন ধরায়, জ্বলে উঠেই হাউইটা যায় ফেটে। তার তেজ, আলো, বাহার কিছু দেখা যায় না সূর্যের আলোর দাপটে। বাজির সব বাহার রাতের অন্ধকারে! সূর্য উঠলে, সব বাজিই টি. এস. এলিয়টের ‘হলো মেন’।

দিনের বেলায় বাজি অন্তরসারশূন‌্য অপদার্থের দল। তাহলে তাদের নিয়ে মানুষের এমন উৎসব, আদিখ্যেতা কেন? কেননা, বাজির মধ্যেই মানুষ পায় চাঁদ-তারার দেশে পৌঁছনোর ব‌্যর্থ উচ্চাশার সেলিব্রেশন! জীবন ও বাজির ক্ষণিক রংবাহার– এই দুয়ের সাদৃশ‌্য চিনতে পেরেছিলেন এলিয়ট। কী অব‌্যর্থ উচ্চারণে বলেছিলেন, ‘দিস ইজ দ‌্য ওয়ে দ‌্য ওয়র্ল্ড এন্ডস, নট উইথ আ ব‌্যাং বাট আ হুইস্পার’। তবু বাজি নিয়ে রোম‌্যান্টিক স্বপ্নের শেষ নেই। কবি লু অ‌্যালস্টন লিখলেন: “এভরিটাইম ইউ কিস মি ইট’স্‌ লাইক ফায়ারওয়ার্ক ইন দ‌্য সিটি!” প্রতিবার তোমার চুম্বন শহরের আকাশে বাজির রঙিন আলোর মতো।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement