Advertisement
Advertisement
Facebook

পুতিনকে সরাসরি মেরে ফেলার হুমকি ফেসবুকে! তবু উদাসীন জুকারবার্গের সংস্থা

এ কি নতুন ধরনের ঠান্ডা যুদ্ধ?

Double strandard of Facebook on Putin murder threat post। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:March 15, 2022 4:28 pm
  • Updated:March 15, 2022 4:28 pm

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এতটাই গভীরে পৌঁছেছে যে, ইউক্রেনের বাসিন্দাদের কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মৃত্যু চাইছে। কেউ কেউ খুন করারও হুমকি দিয়েছে মার্কিন টেক-দৈত্য ফেসবুক (অধুনা ‘মেটা’) এবং ইন্সটাগ্রামে। সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রচার অনুমোদনযোগ্য নয়। কিন্তু ফেসবুক উদাসীন। হেট স্পিচ আইন শিথিলের পক্ষে। ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-র এ-ও বুঝি নতুন প্রকরণ! সুমন সেনগুপ্তের কলমে। 

 

Advertisement

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনীয় (Ukraine) নাগরিকদের রাশিয়ার (Russia) প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) বিরুদ্ধে ক্ষোভ এতটাই গভীরে পৌঁছেছে যে, অনেকে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মৃত্যু অবধি চাইছে। কেউ কেউ তো খুন করারও হুমকি দিয়েছে সরাসরি ফেসবুক (Meta) ও ইন্সটাগ্রামে (Instagram)। অবাক করার মতো কথা হল, ফেসবুক এসব ‘পোস্ট’ খারিজ করে দিচ্ছে না। উলটে ঘৃণা ও বিদ্বেষ (Hate Speech) ছড়ানোর যে নিয়মাবলি তাদের মেনে চলার কথা, তা সাময়িকভাবে শিথিল করবে বলে ঘোষণা করেছে। যদিও হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে ‘হেট স্পিচ’ সংক্রান্ত আইনে কোনও পরিবর্তন আসেনি এ-যাবৎ।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সূত্র অনুযায়ী, রাশিয়ান সৈন্যদের কেউ যদি মেরে ফেলার ইচ্ছাজ্ঞাপন করে, তাহলে ফেসবুক তাদের সেই কথা বা লেখাকে সরিয়ে দেবে না। এক্ষেত্রে ফেসবুকের যুক্তি হল, ইউক্রেনীয়রা এখন গভীর সংকটে। অন্য একটি দেশের দ্বারা তারা আক্রান্ত। এই অবস্থায় তাদের প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিতে চায় না ফেসবুক। তবে ফেসবুকের তরফে এটাও বলা হয়েছে যে, কোনও রাশিয়ান নাগরিককে যদি মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে সেই ধরনের হেট স্পিচকে তারা মান্যতা দেবে না। এই খবরটি উদ্ধৃত করে, আমেরিকায় স্থিত রুশ দূতাবাসের তরফে টুইট করা হয় যে, ফেসবুক কি এই সামাজিক মাধ্যমের অধিকারীদের কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল তা যাচাই করার, বা দুটো দেশের মধ্যে বিদ্বেষ রচনা করার ক্ষমতা প্রদান করেছে?

[আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৪৫ জন বন্দি মুক্তি, মানবিক সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের]

কিছুদিন আগেই রাশিয়া তাদের দেশে ফেসবুক এবং টুইটার এই দু’টি বৃহৎ সামাজিক মাধ্যমকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে। তখন তাদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু রুশ সংবাদ সংস্থার খবরগুলি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এসব সামাজিক মাধ্যমে, তাই তারাও তাদের নাগরিকদের আর এই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে দেবে না। তাহলে কি ফেসবুক পুতিনের মৃত্যু পরোয়ানা গ্রাহ্য করে পালটা প্রতিশোধ নিল? ‘রুশোফোবিয়া’ শব্দটি সামাজিক মাধ্যমে এখন ভীষণ তোলপাড় ফেলেছে। ফেসবুক অবশ্য বলছে যে, তারা ‘রুশোফোবিয়া’র বিরুদ্ধে। রাশিয়া সম্বন্ধে বা রাশিয়ার নাগরিকদের নিয়ে কোনও ধরনের হেট স্পিচ তারা সহ্য করবে না। তবে পুতিনকে খুন করার ফতোয়া কেউ পোস্ট করলে সেটিকে প্রতিরোধও করবে না।

শুধু পুতিন নয়, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাসেনকো-কে নিয়ে যদি কেউ মৃত্যু ফতোয়ামূলক পোস্ট দেয়, তাহলেও ফেসবুক প্রতিবাদ করবে না। তবে এই ধরনের পোস্টে কোনও স্থানের নাম উল্লেখ করা যাবে না। বা, বলা যাবে না কী পদ্ধতিতে মৃত্যু হতে পারে। অর্থাৎ স্থান-কাল ও পদ্ধতির কোনও ইশারা দেওয়া যাবে না। এই দু’টি ‘ইন্ডিকেটর’ থাকলে সেই পোস্ট ফেসবুক মুছে দেবে।

রুশি সেনাদের আগ্রাসনের বিরোধিতা করে জঙ্গি মনোভাবাপন্ন পোস্ট ইউক্রেন ছাড়া অন্য যেসব দেশে অনুমতি দেওয়া হবে, সেই তালিকায় নাম আছে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, হাঙ্গেরি, লাতভিয়া, লুথিয়ানিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়ার মতো দেশের। এমনকী, রাশিয়ার কোনও নাগরিকও ইউক্রেনীয়দের সমর্থনে রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিদ্বেষধর্মী পোস্ট দিতে পারে। ফেসবুক তা গ্রহণ করবে।

[আরও পড়ুন: ‘ইসলামে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়’, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক বিতর্কে রায় কর্ণাটক হাই কোর্টের]

বিষয়টি যে আদ্যন্ত রাজনৈতিক, সন্দেহ নেই। ইউক্রেনীয়দের বাক্‌ স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে ফেসবুক যে বিভাজনের দরজা প্রশস্ত করছে তা-ও বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাশিয়া ইতিমধ্যে মেটা-র বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল কেস’ করেছে। মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে ‘এক্সট্রিমিস্ট অর্গানাইজেশন’ বলে চিহ্নিত করেছে। ফলে, ফেসবুকের ঘৃণা-বিদ্বেষ সংক্রান্ত যে-আইন আছে, তার প্রকরণ ও প্রভাব সম্বন্ধে বিতর্ক স্বাভাবিক।

অন্যান্য দেশে ফেসবুক-সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের যে লিখিত আইন, তাতে বলা আছে যে, ঘৃণা বা বিদ্বেষ কখনওই খোলাখুলিভাবে ব্যক্ত করা যাবে না। কোনও ব্যবহারকারীকে মারার হুমকি বা জাতি-ধর্ম তুলে হেয় করা তো যাবেই না। কিন্তু ক’টা দেশে তা মেনে চলা হয়? আমাদের দেশে তো এই সংক্রান্ত আইন বারংবার লঙ্ঘিত হয়েছে। অভিযোগ, তা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শাসক দলের পক্ষপাতিত্বে। দু’বছর আগে দিল্লি দাঙ্গার সময়ে কেন্দ্রের ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছিল। একাধিক সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি বিধানসভা একটি শান্তি ও সম্প্রীতি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির কাছে স্পষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় বহু মানুষ যে, নানা সময়ে কেন্দ্রীয় শাসক দলের নানা নেতা ধর্মীয় ইন্ধন জুগিয়ে একাংশের মানুষকে প্ররোচিত করেছে। ফেসবুক সেই সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।

অনেকে বলতে পারে, এই ফেসবুক এবং টুইটার তো ট্রাম্পকে ‘নিষিদ্ধ’ করে দিয়েছিল। হ্যাঁ, দিয়েছিল, কিন্তু কখন? যখন তারা গন্ধ পেয়ে যায় যে আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন জো বাইডেন। তার আগে ট্রাম্পের বর্ণবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বহাল তবিয়তে ফেসবুকে চলেছে।

অভিযোগ, মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর যে-আক্রমণ নেমে এসেছিল, যে-গণহত্যা চালানো হয়েছিল সেখানে ফেসবুকের ভূমিকা রয়েছে। ভুল তথ্য, উসকানিমূলক তথ্য দীর্ঘ সময়ে ফেসবুকে চলার ফলে মানুষের মনে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়। ফেসবুক ২০১৮ সালে স্বীকার করে নেয় যে, তারা বুঝতে পারেনি, কীভাবে এই সামাজিক মাধ্যম দিয়ে এভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। তাই তারা সেগুলো ফেসবুক থেকে ডিঅ্যাক্টিভেট করতে দেরি করেছে। যদিও ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিরাট অঙ্কের মামলা হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তরফে, কিন্তু গণহত্যায় মৃতরা তো আর ফিরে আসবে না? এই গণহত্যার স্মৃতি কি আগামী প্রজন্ম ভুলতে পারবে?

যুদ্ধের সময়ে ভুল তথ্যের রমরমা হয়। সবার প্রথমে মৃত্যু হয় সত্যের। যেখানে ফেসবুক স্বতঃই ভুল তথ্য চলাচলের অন্যতম মাধ্যম, সেখানে ফেসবুকেরই নিজস্ব আইন যদি তারা শিথিল করার কথা ভাবে, যদি বলে যে রাশিয়ান সৈন্যদের মেরে ফেলার হুমকি অবধি দেওয়া যেতে পারে, তাহলে কি সেটা সমাজে ঠিক বার্তা দেয়?

ফেসবুকের তরফে বলা হয়েছে বটে যে কোনও রাশিয়ান নাগরিককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়াকে ফেসবুক অনুমতি দিচ্ছে না, কিন্তু মৃত্যু বা খুনের হুমকিকে কি একমাত্রিক অঙ্কে বেঁধে রাখা যায়? এইভাবে খোলামেলা রাশিয়ান সৈন্য বা রাশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে মেরে ফেলার কথা বলাকে অনুমতি দিলে ভবিষ্যতের জন্য তা অশনি সংকেত হয়ে থাকবে। ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-র নতুন প্রকৌশলের সামনে হয়তো-বা আমরা পড়ব।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement