Advertisement
Advertisement

Breaking News

Delhi Assembly polls

দিল্লির বিধানসভা ফলের উপর ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎও নির্ভরশীল?

৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ফলাফল ঘোষণা।

Does the future of the 'India' alliance depend on the Delhi Assembly polls results

ফাইল ছবি

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:January 14, 2025 2:30 pm
  • Updated:January 14, 2025 2:30 pm  

লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ইস্যু সবসময় আলাদা। বিজেপি লোকসভায় দিল্লিতে দারুণ ফল করলেও বিধানসভা নির্বাচনে তারা আম আদমি পার্টির কাছে বারবার পর্যুদস্ত হয়। এবার কি নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটবে? দিল্লির বিধানসভা ফলের উপর ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎও কি নির্ভরশীল? লিখছেন বিশ্বনাথ চক্রবর্তী।

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ৭০ আসনবিশিষ্ট দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ফলাফল ঘোষণা। বিগত ১১ বছর ধরে আম আদমি পার্টির সরকার দিল্লির শাসন পরিচালনা করেছে। আরও একবারের জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় আসতে চলেছে রাজনৈতিক মহলে এমনই ইঙ্গিত। দিল্লির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মন জিততে একের-পর-এক প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে তারা। যেমন, মন্দির এবং গুরুদুয়ারার পুরোহিতদের জন্য মাসিকভাতা প্রদান। আবার, আম আদমি পার্টি যেমন মহিলাদের জন্য মাসে ২,১০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে– তেমনই বিজেপি, কংগ্রেসও মহিলাদের ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কংগ্রেস তো একধাপ এগিয়ে রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য মাসে ৮,৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের মূল আলোচ্য– আগামী দিনে ‘এনডিএ’-র বিরোধিতায় আদপেও ‘ইন্ডিয়া’ জোট টিকে থাকবে কি না। ‘ইন্ডিয়া’-র ভিতরেই প্রশ্ন উঠেছে– জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে। দাবি উঠছে– ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতৃত্বের ভার তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়ার। 

Advertisement

দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র করে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে। আম আদমি পার্টির সপক্ষে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের একের-পর-এক শরিক দলগুলি সমর্থন জানিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি তাদের সমর্থন করছে। আম আদমি পার্টির সমর্থনে এগিয়ে এসেছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি– যাদের সঙ্গে কংগ্রেসের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক। আম আদমি পার্টিকে সমর্থন জানিয়ে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোট হল লোকসভা নির্বাচনের জোট, বিধানসভার সঙ্গে এই জোটের কোনও সম্পর্ক নেই। বকলমে কি তেজস্বী যাদব ঘোষণা করে দিলেন, এ বছরের আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে একাই লড়বে? ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের এই যখন অবস্থা, তখন দিল্লির প্রচারে অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ প্রথম শ্রেণির আম আদমি পার্টির নেতাদের সঙ্গে অজয় মাকেন-সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিনিয়ত বাগ্‌যুদ্ধ চলছে। কংগ্রেসকে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যখন পরপর জনসভায় বিজেপির ‘বি টিম’ বলে তুলোধোনা করছেন, তখন কংগ্রেসও বিজেপি নেতৃত্বর সঙ্গে আম আদমি পার্টির গোপন বোঝাপড়া রয়েছে বলে দাবি করে চলেছে।

’১৪ সালের পরে, তিনটি লোকসভা নির্বাচনে, ৫০ শতাংশর বেশি ভোট পেয়ে বিজেপি দিল্লিতে ৭-০ ফলাফল করলেও, বিধানসভা নির্বাচনে কিন্তু আম আদমি পার্টির সামনে বারবার ধরাশায়ী হচ্ছে। দিল্লির ভোটাররা জাতীয় সুরক্ষা ও দেশের নেতৃত্বের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদির প্রতি আস্থা রাখছে, আবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতে ভাল কাজ করার দৌলতে বিধানসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ফলে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে ৫০ শতাংশর বেশি ভোট পাচ্ছে, তবে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট শতাংশ ৪০ শতাংশর আশপাশে। অন্যদিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টির লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট ৩৮ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও বিধানসভা নির্বাচনের তা বেড়ে ৫০ শতাংশে পৌঁছে যায়। ২০২০-র বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি মিলে মোট প্রাপ্ত ভোটের ৯০ শতাংশ নিজেদের পক্ষে রেখেছিল। ওই নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিল চার শতাংশর মতো। সেবার দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে আম আদমি পার্টি একাই ৬২টি আসন পেয়েছিল, বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র আটটি আসন, কংগ্রেস ওই নির্বাচনে কোনও আসনেই জয়লাভ করতে পারেনি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে জোট হলেও– আম আদমি পার্টি ২৪ শতাংশ, এবং কংগ্রেস ১৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি মিলে যেখানে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছে, সেখানে ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই ৫০ শতাংশর বেশি ভোট পেয়ে দিল্লির সবক’টি আসনে জয়ী হয়। বিধানসভা নির্বাচন যে বিজেপির জন্য কঠিন লড়াই, দিল্লির দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বও তা জানে। আম আদমি পার্টি এত দিন বিনা মাশুলে বা কম মাশুলে বিদ্যুৎ, পানীয় জল দিল্লির জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে– এবং মহিলাদের জন্য মাসিক ২,১০০ টাকার ভাতা ও বয়স্কদের বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতির উপর ভর করে আবার যে ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাইছে, তা বিজেপির পক্ষে আদৌ আটকানো যাবে কি না তা নিয়ে দলই সন্ধিহান।

দিল্লির নির্বাচনে বিজেপির প্রধান সমস্যা– নেতৃত্বর অভাব। মদনলাল খুরানা, সাহেব সিং ভার্মা, এবং সুষমা স্বরাজের পর সেই অর্থে বিজেপির কোনও জননেতা দিল্লির রাজনীতি থেকে উঠে আসেননি। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রবল আকার ধারণ করেছে। প্রার্থী পদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আম আদমি পার্টি আর কংগ্রেসের থেকে অনেক পিছিয়ে বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপির হাতের প্রধান তাস– অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের বিরুদ্ধে ওঠা একের-পর-এক দুর্নীতির ইস্যু। এর মধ্যে আবগারি দুর্নীতিতে কেজরিওয়ালের হাজতবাস হয়েছিল।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সাজাতে দিল্লির সরকার ৩৩ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিজেপি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনকে, রাজা-মহারাজাদের আমলে তৈরি শিশমহল হিসাবে তুলে ধরে, তঁার বিরুদ্ধে অলিতে-গলিতে প্রচার চালাচ্ছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালও বসে নেই, তঁার দল আম আদমি পার্টি প্রধানমন্ত্রীর বিলাসবহুল পোশাক ও জীবনযাপনের কথাও পাল্টা প্রচারে আনছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস মহিলাদের হাতে টাকা দেওয়া, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ-সহ প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, মহিলাদের ২,৫০০ টাকার মাসিক অনুদান, এবং ২৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার প্রতিশ্রুতি। 
দান-খয়রাতির প্রভাবের পাশাপাশি ‘পরিচয় সত্তা’-র রাজনীতিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৩০ শতাংশ পূর্বাঞ্চলীয় ভোটার রয়েছে দিল্লির ২৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে। ওই ৩০ শতাংশ পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের মধ্যে যেমন রয়েছে যাদব, ভূমিহার; তেমনই রাজপুত, জাঠ, ব্রাহ্মণরা। দিল্লিতে প্রায় ১৩ শতাংশ জাঠ ভোটার রয়েছে, কৃষক আন্দোলনের সময় যাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লিতে প্রায় ১৭ শতাংশ তফসিলি জাতির ভোটার রয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেখলে– দিল্লিতে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটারই হিন্দু। প্রায় ১৩ শতাংশ ভোটার মুসলিম। শিখ প্রায় পঁাচ শতাংশ, এক শতাংশ খ্রিস্টান ও জৈন ধর্মাবলম্বী। প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘পরিচয় সত্তা’-র রাজনীতিকে সামনে রেখে তাদের মতো করে নির্বাচনী ঘুঁটি সাজাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস, বিহারের আরজেডি এবং উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি সরাসরি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাশে দঁাড়ানোয় পূর্বাঞ্চলীয় ভোটব্যাঙ্ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল গত বিধানসভার মতো এবারও ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন।

তবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, মুহাম্মদ ইউনূসের জমানায়, সে-দেশের হিন্দুরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে আরএসএস-বিজেপির পক্ষে বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো ‘হিন্দি বলয়’ ভুক্ত রাজ্য থেকে আসা ভোটারদের মেরুকরণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ অতি তৎপরতার সঙ্গে বেআইনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণে নেমে পড়েছে। বিজেপির অভিযোগ, বিরোধী দলগুলি ভোটের রাজনীতির জন্য অনুপ্রবেশকারীদের উৎসাহিত করছে। ফলে দিল্লির এই নির্বাচনে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার, বেআইনিভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু!

দিল্লির নির্বাচনে আর-একটি প্রধান ইস্যু হল, বিজেপি নেতা তথা কালকাজির প্রার্থী রমেশ বিদুরির প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সম্পর্কে করা কুরুচিকর মন্তব্য। সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মহিলা ভোটারদের সহানুভূতি আদায় করতে চাইছে আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস দল। বিদুরি নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, কালকাজি কেন্দ্রে জিতলে, এই বিধানসভা এলাকার রাস্তা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর গালের মতো মসৃণ করে দেবেন। এই মন্তব্যকে সামনে রেখে আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস মহিলাদের সহানুভূতি আদায়ে তৎপর। বিদুরিকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হলেও বিজেপি এই ইস্যুতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে।

স্থানীয় স্তরে একের-পর-এক ইস্যু উঠে এলেও দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ইস্যু– ‘ইন্ডিয়া’-র ভবিষ্যৎ। একের-পর-এক দল কংগ্রেসের পরিবর্তে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাশে দঁাড়ানোর ফলে রাহুল গান্ধী কার্যত একা হয়ে পড়েছেন। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তঁার দল ঝঁাপিয়ে পড়লেও– বড় কোনও সাফল্য পাবে– এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং কংগ্রেসকে বাইরে রেখেই তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা, আম আদমি পার্টি-সহ বিহারের লালুপ্রসাদ যাদব ও উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও একটি ফ্রন্ট খুলতে আগ্রহী। সে কারণে রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি যতটা দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলকে ঘিরে, ততটাই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যতে নিবদ্ধ। যেভাবে কেজরিওয়াল তঁার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে তুলে ধরে সমর্থনকারী অন্য দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তাতে বার্তা পরিষ্কার– দিল্লির নির্বাচনের পর মমতাকে সামনে রেখেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নতুন করে গড়ে তুলতে চাইছে জোটের অধিকাংশ শরিক।

(মতামত নিজস্ব)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement