প্রতীকী ছবি
পড়ুয়াদের মধে্য বাড়ছে অবসাদ ও আত্মহত্যার প্রবণতা। যান্ত্রিক, উপার্জনমুখী লেখাপড়ার মাধুর্যহীন ভার তারা সামলাতে পারছে না। শীর্ষ আদালতও এই মানসিক স্বাস্থে্যর অভাব ও আত্মহত্যা-প্রবণতা নিয়ে সম্প্রতি বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সারা পৃথিবী কম-বেশি ভাবতে শুরু করেছে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে। তার একটা কারণ, তাদের মধে্য মানসিক বিষণ্ণতা, হতাশা, অনিশ্চয়তা এবং নানা ধরনের আতঙ্কর বাড়বাড়ন্ত। এই টেনশন বা উদ্বেগের সঙ্গে মিশছে বাণিজ্যমুখী লেখাপড়ার চাপ।
লেখাপড়ার প্রধান উদ্দেশ্য ক্রমশই হয়ে দঁাড়াচ্ছে আরও-আরও উপার্জনযোগ্য হয়ে ওঠা। অর্থাৎ, ‘ভ্যালু এডুকেশন’ বা মূল্যবোধের শিক্ষা নয়। যে-শিক্ষা টাকা রোজগারের পথ চওড়া করে, একমাত্র সেই শিক্ষারই দাম আছে। ফলে, শুধুমাত্র উপার্জনমুখী শিক্ষা থেকে ছাত্রছাত্রীদের জীবনবোধ তৈরি হচ্ছে না। তারা কোনও অাদর্শে প্রতিষ্ঠিতও হতে পারছে না। নোঙর ফেলতে পারছে না কোনও বলিষ্ঠ জীবনদর্শনে। দিশাহারা ছাত্রছাত্রীদের মধে্য বাড়ছে আত্মহত্যার হার। বিশেষভাবে নামী-দামি স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের মধে্য দেখা দিচ্ছে বিষণ্ণতা কিংবা ছন্নছাড়া ভাব। কিংবা পারস্পরিক ঈর্ষা ও অত্যাচারের পরিবেশ তাদের গ্রাস করছে। বাড়ছে র্যাগিং।
যে-শিক্ষায় মানসিক মূল্যবোধের জায়গা নেই, আছে শুধু টেকনিক্যাল বা কারিগরি শিক্ষার যান্ত্রিকতা, সেই শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের মনের পুষ্টি অসম্ভব। মানসিক স্বাস্থে্যর অভাবই তাদের ঠেলে দিচ্ছে আত্মহননের পথে। তারা সহজেই হারাচ্ছে মানসিক ভারসাম্য। শীর্ষ আদালতও এই মানসিক স্বাস্থে্যর অভাব ও আত্মহত্যা-প্রবণতা নিয়ে সম্প্রতি বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত সোমবার ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে. বি পারদিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানিয়েছে যে, হস্টেলগুলোয় শিক্ষার্থীদের যে-হারে মৃতু্যর ঘটনা বাড়ছে, তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবলে ভুল হবে।
বিচারপতিরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার নেপথ্যে পড়াশোনার চাপ, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার চাপ, এবং প্রসারিত অনিশ্চয়তার মধে্য নিঃসঙ্গতার চাপ– এই সবকিছুর মিলিত ভয়ংকরতা কাজ করছে। পারিবারিক নিশ্চয়তা থেকে দূরে হস্টেল-জীবনে শিক্ষার্থীরা আরও একাকিত্ব এবং নানাবিধ ত্রাসের শিকার হয়। তাদের পক্ষে এই চাপ সহ্য করা ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠে। তারা বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস. রবীন্দ্র ভাটের নেতৃত্বে যে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হল, তার কাজ হবে আগামী চার মাসের মধে্য পড়ুয়াদের অাত্মকথার কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং তার প্রতিরোধে সুযোগ্য ব্যবস্থা সুপারিশ করা। আশা করা যাচ্ছে, টাস্ক ফোর্সের এই সুপারিশের ফলে আমাদের শিক্ষানীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধে্য আরও অন্তরঙ্গ যোগাযোগ বাড়বে। হস্টেল-জীবনে আসবে আরও অনেক বেশি মানবিকতা। এবং উপার্জনমুখী কারিগরি শিক্ষার চাপ কমবে। দেখা দেবে মূল্যবোধধর্মী মানসিক স্বাস্থ্যগঠনের শিক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.