Advertisement
Advertisement

নোট বাতিলেই রাজনৈতিক দলগুলির কালো টাকা রাতারাতি উধাও হবে না

প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত যে দেশকে কালো টাকার কবল থেকে মুক্ত করার পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ, সে কথা স্বীকার করছে সব পক্ষই৷

Demonetisation Is A Good Start But It Won’t Clean Up Political Funding
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 18, 2016 4:30 pm
  • Updated:November 18, 2016 5:22 pm  

বড় নোট বাতিল নিঃসন্দেহে কালো টাকার রমরমা রুখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে রাতারাতি সব কালো টাকা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই৷ হিসাব বহির্ভূত ২০০ কোটি টাকা প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে সাদা হয়ে যেতে পারে অবিশ্বাস্য এক কায়দায়৷ কী সেই ম্যাজিক, খোঁজ নিলেন দীপেন্দু পাল

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ৫৬ ইঞ্চি ছাতি ফুলিয়ে টিভিতে ঘোষণা করলেন, যে অবিলম্বে ‘বাপু’র ছবি আঁটা পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে গেল৷ বাপু রাতারাতি হয়ে গেলেন ‘হানিকারক বাপু’৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শেষ হতে না হতে শুরু হরিপদ কেরানিদের গুজগুজ-ফিসফাস! ‘বেশ হয়েছে! জব্দ হয়েছে ব্যাটা কালো টাকার কারবারিরা৷’ শাসক দলের পার্টি অফিসেও জোর গুঞ্জন, বিধানসভা ভোটের আগে অ-বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘টাইট’ দেওয়া গিয়েছে৷ গতকাল রাতে প্রাইম টাইমে এক জনপ্রিয় উপস্থাপকের শো দেখে এসে, সকালের ডাউন বনগাঁ-শিয়ালদহ লোকালের কামরায় জোর তর্ক জমে উঠেছে৷ “উত্তরপ্রদেশে ভোটের জন্য যত কালো টাকা মজুত করে রাখা হয়েছিল, সেই সব এখন পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই৷” “দেকছিস না, পতিদিন কত্ত টাকা পোড়ার খবর দেকাচ্চে টিভিতে৷” – জাতীয় কথা ভেসে আসছে কামরার এদিক-ওদিক থেকে৷

Advertisement

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এহেন সাহসী পদক্ষেপেও রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে কালো টাকা রাতারাতি উধাও হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই৷ হ্যাঁ, এ কথা সত্যি, যে মোদির এই সিদ্ধান্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বোঝাই যাচ্ছে, নোট বাতিলের ঝড়ে তাঁদের কালো টাকার গদি খানিকটা টালমাটাল৷ সুযোগ পেলেই বাতিল নোট ফের ফিরিয়ে আনা হোক মার্কা দাবি তুলে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন তাঁরা৷ তবে নোট বাতিল হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির কালো টাকার ভাণ্ডার শূন্য হয়ে যাবে না৷ খানিকটা আতান্তরে পড়লেও ‘জুগাড়’-এ ওস্তাদ কালো টাকার কারবারিরা টাকার গা থেকে কালো কালি ধুয়ে ফেলার সবরকম বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন৷ মোটামুটি তিনটি ধারণা সাধারণ মানুষের আলোচনায় বারবার উঠে আসছে৷

১. রাজনৈতিক দলগুলি চালাতে সবসময় প্রচুর টাকার দরকার৷

২. বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই ক্যাশ টাকায় লেনদেন করে৷

৩. আগামী ৬ সপ্তাহ কোনওভাবেই কালো টাকাকে সাদা করা যাবে না৷

এই ভুল ধারণাগুলি দূর করা দরকার৷ প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলিতে টাকার প্রয়োজন চাহিদাভিত্তিক৷ ধরা যাক, কেউ পার্টির টিকিট চান, কেউ নিজের সোশ্যাল স্টেটাস বাড়াতে চান৷ কালো টাকার উপর খাঁড়া নেমে এলেও এই চাহিদাগুলি কোনওদিনই মিটবে না৷

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলি এখন শুধুই নগদ টাকায় লেনদেন করে না৷ অনলাইনে লেনদেন এখন জলভাত৷ আর নগদ টাকা কোনও দলের সদর দফতরে জমানো থাকে না৷ বহু স্থান ও লোকের মধ্যে সেই টাকা বিলিয়ে দেওয়া হয়৷ অনেক সময়, দলকে এড়িয়ে লেনদেন হয় দু’পক্ষের মধ্যে৷ যিনি টাকা দিচ্ছেন, অর্থাৎ ফিন্যান্সার ও যিনি নিচ্ছেন, অর্থাৎ সুবিধাভোগী- এই দুই পক্ষের মধ্যে কোনওভাবেই রাজনৈতিক দলের নাম জড়ায় না৷ যদিও গোটা প্রক্রিয়াটাই পরিচালনা করে ওই রাজনৈতিক দলই৷ এই বিপুল নগদ টাকা এত রকমভাবে এতজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া অন্যতম কারণ, একজন আয়কর দফতরের জালে ধরা পড়লেও বাকিদের টিকিতে যেন টান না পড়ে৷

সবশেষে, আগামী ৬ সপ্তাহে কালো টাকাকে সাদা করা যাবে না, এটাও একটি মস্ত বড় ভুল ধারণা৷ এখনও বহু সরকারি স্কিম হয়েছে, যেখানে টাকা ঢাললে আয়কর দফতরের কেষ্ট-বিষ্টুরা একটুও ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন না৷ তাছাড়া, একটি রাজনৈতিক দলের ২০০ কোটি কালো টাকা সাদা করতে দরকার স্রেফ ৮ হাজার সদস্য-স্বেচ্ছাসেবী৷ প্রত্যেক সদস্য ব্যাঙ্কে গিয়ে আড়াই লক্ষ করে টাকা জমা দিলেই ২০০ কোটি টাকা প্রশাসনের নাকের তলা দিয়ে সাদা হয়ে যাবে৷

তাহলে এখন রাজনৈতিক দলগুলি কী করছে?

প্রথমত, নোট বাতিলের প্রাথমিক ধাক্কাটুকু কাটিয়ে উঠতে সামান্য সময় দরকার দলীয় নেতৃত্বের৷ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এরকম বহু খাত তাঁরা খুঁজে বার করে ফেলবেন যেখানে টাকা ঢাললে ভবিষ্যতে ফেরত পাওয়া যাবে৷ উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও মুম্বইতে আগামী কয়েকদিন রাজনৈতিক নেতারা তাই খুব একটা তৎপরতা দেখাবেন না৷ সত্যি বলতে কী, হাতে গোনা একটি বা দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া অন্য কোনও দলেরই শীর্ষ নেতারা নোট বাতিল ইস্যুতে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ বিজেপি তো নয়ই৷ কারণ, টাকার জোগানে ধাক্কা খেলেও এই সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ চাকুরিজীবী ও ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে পাওয়া যাবে৷ ভুললে চলবে না, ২০০৯ থেকে বিজেপির তহবিলে এরাই সবচেয়ে বেশি টাকা ঢেলেছেন৷

তাছাড়া, এখনও বেশ কিছু জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে পুরনো নোট ব্যবহার করা যাবে৷ রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা সেই সব খাতে পুরনো নোট ঢালছেন৷ এমনকী, প্রয়োজনে এখন টাকা ঢেলে তাঁরা চুপচাপ থাকছেন৷ ফায়দা পরে উসুল করে নেবেন৷

তৃতীয়ত, নতুন নোট বাজারে আসা ও ভোটের দিনক্ষণের মধ্যে এখনও বেশ কিছু দিন বাকি রয়ে গিয়েছে৷ ইতিমধ্যেই পাঞ্জাবের কয়েকটি রাজনৈতিক দল নতুন করে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে শুরু করে দিয়েছে৷ পুরোটাই নতুন নোটে৷ ডিসেম্বরের শেষের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করা যাবে বলেই আশা করা যাচ্ছে৷ অর্থাৎ, নোট বাতিল এমন কোনও দাবানল নয়, যাতে সমস্ত কালো টাকা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত যে দেশকে কালো টাকার কবল থেকে মুক্ত করার পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ, সে কথা স্বীকার করছে সব পক্ষই৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement