Advertisement
Advertisement
Kamala Harris

কমলা নামের রোদ! চাঙ্গা ডেমোক্র্যাট শিবির

কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণার পর থেকেই ডেমোক্র্যাট শিবির চাঙ্গা হয়ে মাঠে নেমেছে।

Democratic camp is energized after announcement of Kamala Harris

ফাইল ছবি।

Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:August 3, 2024 9:07 pm
  • Updated:August 3, 2024 9:07 pm  

কমল‌া হ্যারিসের নাম ঘোষণার পর থেকেই যেভাবে ডেমোক্র্যাট শিবির চাঙ্গা হয়ে মাঠে নেমেছে, অনুদানের বন্যা বয়ে যাচ্ছে যেভাবে, তাতে রিপাবলিকান শিবির শঙ্কিত। এসবের মধ্যেই হ‌্যারিসের ‘আইডেন্টিটি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প যে কৃষ্ণাঙ্গ ও মহিলা ভোটারদের আরও এককাট্টা হয়ে ডেমোক্র্যাটদের ছাতার তলায় যেতে সাহায্য করছেন– তা তিনি বুঝছেন? লিখছেন সুমন ভট্টাচার্য 

কে জানত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘রিপাবলিকান’ বনাম ‘ডেমোক্র্যাট’দের লড়াইয়ে, বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিসের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, অতি দক্ষিণপন্থীদের ‘আইকন’ মহিলা চ্যালেঞ্জারের জাতিসত্তা বা ‘আইডেন্টিটি’-কেই প্রচারের মূল বিষয় করে তোলা হবে! সাংবাদিক সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় মা ও জামাইকান বাবার সন্তান কমলা হ্যারিস কোন পরিচয়টাকে সামনে আনতে চান– সেই প্রশ্ন তুলে সরাসরি কটাক্ষ করেছেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের শাড়ি পরিহিত পুরনো ছবি, যা আসলে দক্ষিণ ভারতে তাঁর মাতামহ-সহ অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে এক ফ্রেমে থাকার স্মৃতি, সেটিকেও জনসমক্ষে এনে বিতর্ককে খুঁচিয়ে দিতে চেয়েছেন।

Advertisement

বোঝাই যাচ্ছে, তিনি অস্থিরতায় ভুগছেন, জো বাইডেনের চেয়ে অনেক কম বয়সি প্রতিদ্বন্দ্বী চলে আসায়।
কমলা হ্যারিসের স্বামী ইহুদি। তা সত্ত্বেও মার্কিন কংগ্রেসে ইজরায়েলের ‘বিতর্কিত’ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বক্তৃতার সময় সভাপতিত্ব করতে রাজি হননি। শুধু যে ‘রয়টার্স’-এর জনমত সমীক্ষায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পিছনে ফেলে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন তাই নয়, মার্কিন দেশের সব জুয়ার প্ল্যাটফর্মেই সম্ভাব্য বিজয়ী হিসাবে তঁাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে,তঁার উপর বাজিও ধরছেন বেশি সংখ‌্যক মানুষ।

 

[আরও পড়ুন: ঋণের বোঝা কমাচ্ছে রাজ্য, তথ্য তুলে ধরে বিধানসভায় দাবি চন্দ্রিমার]

এহ বাহ‌্য, মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্ধারক হিসাবে পরিচিত ‘সুইং স্টেট’ বা বিভিন্ন ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড স্টেট’-এ কমলা হ্যারিসের এই এগিয়ে যাওয়া। আমেরিকার নির্বাচনের একটা নির্দিষ্ট ধরন বা ‘প্যাটার্ন’ আছে। ৫০টি প্রদেশের মধ্যে যে-রাজ্যগুলি ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকে থাকে, সেগুলো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকেই জেতায়, ভোটের পরিভাষায় যাদের বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’। এর বিপরীতে আছে ‘রেড স্টেট’, অর্থাৎ যে-প্রদেশগুলিতে রিপাবলিকানদের দাপট বেশি, সেই রাজ্যের ভোট যায় রিপাবলিকান প্রার্থীর অনুকূলে। দুই শিবিরের এই ভাগাভাগির মধ্যে থাকে ‘সুইং স্টেট’গুলি, যে-ভোটে তারা যেদিকে ঝোঁকে, সেই দলের প্রার্থী হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যায়।

জো বাইডেন যত দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন, তত দিন এগারোটি ‘সুইং স্টেট’-এই তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু ‘বাইডেনের পরিবর্তে হ্যারিস’– এই ঘোষণার পরেই পঁাচটি ‘সুইং স্টেট’-এ হ্যারিস এগিয়ে গিয়েছেন, চারটিতে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী সমান-সমান জায়গায় রয়েছেন, আর দু’টিতে এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্বভাবতই লক্ষণ ভাল নয় বুঝেই হয়তো কমলা হ্যারিসের জাতিসত্তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশ্ন করছেন, অ-শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের নিজের দিকে টানার চেষ্টায়।

অবশ্য ৫৯ বছর বয়সি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসও চমৎকার জবাব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাজনীতিকে ট্রাম্প কোন পথে প্রবাহিত করতে চান, তা আন্দাজ করে নিয়েই দক্ষ আইনজীবী এবং জেরার জন্য বিখ্যাত হ্যারিস সরাসরি ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এই বলে যে, ‘সাহস থাকলে যা বলার আমার মুখের উপর বলুন। মুখোমুখি বিতর্কে আসুন।’ হ্যারিসের নাম ঘোষণার পর থেকেই যেভাবে ডেমোক্র্যাট শিবির চাঙ্গা হয়ে মাঠে নেমেছে, যেভাবে অনুদানের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, তাতে এমনিতেই রিপাবলিকান শিবির শঙ্কিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প যঁাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছেন, সেই জেমস ডেভিড ভান্স তো কবুলই করে নিয়েছেন ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী বদলে যাওয়া তাদের জন্য বড় ধাক্কা। ট্রাম্প-সহযোগীর এহেন স্বীকারোক্তি হয়তো প্রত্যাশিতই ছিল, কারণ তঁার নিজের ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী এতদিন ডেমোক্র্যাটদের ঘোরতর সমর্থক ছিলেন। ট্রাম্প বা রিপাবলিকান নেতৃত্ব হয়তো আশা করেছিল, ভান্স পারিবারিক যোগাযোগ প্রয়োগ করে আমেরিকায় দক্ষিণ-এশীয় বংশোদ্ভূতদের ভোট টানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। কিন্তু কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে যাওয়া এশিয়া বা আরব বংশোদ্ভূতদের মধ্যে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছে, তা অবশ্যই ভান্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করবে।

 

[আরও পড়ুন: উপত্যকায় অশান্তির জের! BSF-এর প্রধান ও উপপ্রধানকে সরাল কেন্দ্র]

এর উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমাগত কমলা হ্যারিসকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের তো বটেই,
মহিলা ভোটারদেরও এককাট্টা করে ডেমোক্র্যাটদের ছাতার তলায় নিয়ে আসতে পারে– রিপাবলিকান দলের ভোট ম্যানেজাররা ইতিমধ্যে এমনই আশঙ্কা করছেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তিশালী গণতন্ত্রে যদি জাতিসত্তা তুলে আক্রমণ আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়, তাহলে অদ্ভুত সমাপতনে বৃহত্তম গণতন্ত্রে জাতপাতকেন্দ্রীক আলোচনাই লোকসভাকে গত কয়েক দিন ধরে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর ট্রাম্প হয়তো জানেন না, মহিলাদের শাড়ি পরা নিয়ে কটাক্ষ করলে মহিলা ভোটাররা একদিকে ঢলে পড়তে পারেন! কীভাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘বিভাজনের রাজনীতি’ পশ্চিমবঙ্গ নামক একটি প্রদেশে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পরাভূত হয়েছিল।
আমেরিকা এবং ভারতের সাম্প্রতিক রাজনীতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য মিল– অনুপ্রবেশ নিয়ে তরজা। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ভাবমূর্তিই যেখানে তৈরি করেছেন ‘অভিবাসন বিরোধী’ হিসাবে বা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের ‘আইকন’ রূপে, সেখানে কমলা হ্যারিস একজন ‘কালার্ড উওম‌্যান’। হ্যারিস জানেন, মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে স্বয়ং বারাক ওবামাকেও কতবার নিজের ‘আইডেন্টিটি’ নিয়ে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ
হতে হয়েছিল। সে কারণেই ট্রাম্প যতই ওই পথে হঁাটছেন, অভিবাসী-কন্যা ততই পালটা ‘ফ্রন্ট ফুট’-এ খেলছেন।

ট্রাম্প বনাম হ্যারিসের লড়াই যখন হতে যাচ্ছে, তখন বিশ্বের রাজনীতি এক সন্ধিক্ষণে দঁাড়িয়ে। নড়বড়ে জো বাইডেন, বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট, অবশ্য বিদায় জানানোর আগে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গিয়েছেন, যার জন্য ইতিহাস তঁাকে মনে রাখবে। ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-র পরে রাশিয়ার সঙ্গে সর্ববৃহৎ বন্দি বিনিময় সেরে তিনি অবশ্যই অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাটদের বলার জন্য বড় অস্ত্র দিয়ে গিয়েছেন। এই যে ২৬ জন বন্দি পুতিনের দেশ থেকে ছাড়া পেয়ে তুরস্ক হয়ে মার্কিন মুলুকে পা রেখেছে, তাদের স্বাগত জানাতে জো বাইডেন তো শুধু একা যাননি, সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন কমলা হ্যারিসকেও– যাতে জোর গলায় হ্যারিস বলতে পারেন, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর ইভান গ্রেসকোভিচ-সহ বাকি বন্দিদের রুশ কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটরাই নিতে পারে। আমেরিকার রাজনীতিতে ২০১৬ সাল থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রুশ মিত্র’ পুতিনের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। অতএব, যে-দল বা যে-রাজনীতিক মস্কোর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন, তিনি তো মার্কিন ভোটারদের কাছে বাড়তি নম্বর পেতেই পারেন পাবেন, সেটাই কাঙ্ক্ষিত।

গাজার ধ্বংসলীলা, বা ইজরায়েল বনাম ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ কখন সত্যিকারের যুদ্ধের চেহারা নিয়ে নেয়, তা নিয়েও বিশ্ব উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতিতে ‘অতি দক্ষিণপন্থী’ ট্রাম্প না কি ঠান্ডা মাথার ‘নেগোশিয়েটর’ কমলা হ্যারিস– কে মার্কিন ভোটারদের পছন্দের বেশি মানুষ হবেন, তা জানতে মাস আরও মাস তিনেকের অপেক্ষা। কিন্তু সন্দেহ নেই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে, বিশেষত নতুন শতকে, আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্টের সামনে এমন কঠিন চ্যালেঞ্জ আর কখনওই ছিল না।

(মতামত নিজস্ব)
লেখক সাংবাদিক
[email protected]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement