Advertisement
Advertisement

Breaking News

Israel

কতটা ভয়ংকর হবে ইজরায়েলের প্রত্যাঘাত?

৭ অক্টোবর ভোর থেকে ইজরায়েলের নিরাপত্তা সম্পর্কিত সব মিথ ভেঙে গিয়েছে।

Dead and destruction, what lies ahead for Israel | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:October 10, 2023 12:32 pm
  • Updated:October 10, 2023 12:32 pm  

৭ অক্টোবর ভোর থেকে ইজরায়েলের নিরাপত্তা সম্পর্কিত সব মিথ ভেঙে গিয়েছে। মোসাদ যে কোনও অপরাজেয় শক্তি নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে হামাস জঙ্গিরা। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছে ছোট্ট শহর সেরড। কলমে সুতীর্থ চক্রবর্তী

 

Advertisement

সেরডে হাজার ৩০ মানুষের বাস। এদের সিংহভাগই রুশ ইহুদি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এরা ইজরায়েলে আস্তানা গেড়েছে। সেরডবাসীর বড় অংশ সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। গাজা থেকে উড়ে আসা হামাস জঙ্গিদের রকেটগুলির মোকাবিলা করাটাই যেন তাদের সারাদিনের কাজ।

মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সেরড-এর আকাশে হামাসের কয়েকশো রকেট আছড়ে পড়েছে। গাজা থেকে ঢুকে পড়া জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছে ছোট্ট শহরটি। গত কয়েক দিন টেলিভিশনের পর্দায় লাগাতার যুদ্ধবিধ্বস্ত এই শহরটির ছবি দেখতে দেখতে ২০০৮-এর স্মৃতি ফিরে আসছিল। ভারতীয় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দলের সদস‌্য হিসাবে ইজরায়েল-গাজা সীমান্তে এই সেরডে একটা দিন কাটানোর সুযোগ ঘটেছিল। তখনও গাজা থেকে ঘন ঘন রকেট এসে আছড়ে পড়ত এই সেরডের বুকে। ইরানি মদতে হামাস জঙ্গিরা কীভাবে গাজা ভূখণ্ডকে কাজে লাগিয়ে তাদের নাগরিকের উপর লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তা প্রত‌্যক্ষ করতেই ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদলটিকে সেরডে নিয়ে গিয়েছিল ইজরায়েল সরকার।

সেরডে আমরা যতক্ষণ ছিলাম, ততক্ষণ আমাদের কানের কাছে ইজরায়েলের বিদেশ দপ্তরের আধিকারিকরা বলে গিয়েছেন, সাইরেনের শব্দ শুনলেই কিন্তু ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বাঙ্কারে ঢুকে যেতে হবে। সেরড জুড়ে শুধু বাঙ্কার আর বাঙ্কার। প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে বাঙ্কার। প্রতিটি বাস স্ট‌্যান্ডে, বাজারে রয়েছে বাঙ্কার। রাস্তার ধারে ধারেও বাঙ্কার। তখনই দেখেছিলাম এই শহরের প্রায় সব নাগরিকই রাতে ঘুমতে যেত বাড়ির বাঙ্কারে বা শেল্টার রুমে। মরুভূমির মধ্যে ইজরায়েল হল একটুকরো মরুদ‌্যান। ধু ধু মরুভূমির মধ্যে দিয়ে পাড়ি দিতে দিতে আকাশ থেকে চোখে পড়ল ঘন সবুজ দ্বীপের মতো একটা অঞ্চল। সেটাই মাত্র ৯০ লক্ষ ইহুদির দেশ ইজরায়েল। প্রযুক্তিকে ব‌্যবহার করে কীভাবে মরুভূমির মধ্যে একটি গাছগাছালিতে ভরা সবুজে মোড়া দেশ তৈরি করা যায়, তার উদাহরণ ইজরায়েল।

[আরও পড়ুন: ৩১ বছরের জেল, ১৫৪ ঘা চাবুক খাওয়া নার্গিসের নোবেল জয় নিয়তির মুচকি হাসি]

সেরড শহরটি গাজা সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে। ইজরায়েলের মূল বসতির মধ্যে এই শহরটি পড়ে না। প‌্যালেস্তিনীয়দের অভিযোগ, ধীরে ধীরে তাদের ভূখণ্ড পুরোপুরি গ্রাস করতেই ইজরায়েল তাদের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে সেরডের মতো এই বসতিগুলি তৈরি করছে। সেরডে হাজার ৩০ মানুষের বাস। এদের সিংহভাগ-ই রুশ ইহুদি। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এরা এসে ইজরায়েলে আস্তানা গেড়েছে। সেরডবাসীর বড় অংশ সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। গাজা থেকে উড়ে আসা হামাস জঙ্গিদের রকেটগুলির মোকাবিলা করাটাই যেন তাদের সারা দিনের কাজ। আমাদের ঘোরানো হয়েছিল সেরডের বহু গৃহস্থর ঘরে। দোভাষীর মাধ‌্যমে আমাদের তারা বর্ণনা দিয়েছিল কীভাবে জঙ্গি হামলার মুখে বেঁচে আছে। সেরডে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়েছিল এমন বহু মানুষের সঙ্গে, যারা বিভিন্ন সময় হামাসের রকেটে জখম হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাত-পা ইত‌্যাদি অঙ্গ হারিয়েছে। রকেটে প্রাণ হারিয়েছে এমন দু’-একজন মানুষের পরিবারের সঙ্গেও আমাদের দেখা করানো হয়েছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে হামাসের রকেটে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বাড়িতেও আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমরা গিয়েছিলাম সেরড থানায়। সেখানে একটি বড় সেলফে থরে থরে হামাসের পোড়া রকেট সাজানো ছিল। যার প্রতিটির গায়ে তারিখ ও সময় লেখা। সেসব পোড়া বারুদের গন্ধওয়ালা ভারী রকেট হাতে তুলে দেখার সুযোগও ঘটেছিল।

তবে সে-সময় ইজরায়েলের বিদেশ দপ্তরের প্রতিনিধিরা খুব গর্বের সঙ্গে আমাদের জানিয়েছিলেন, হামাস জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত রকেট ছুড়লেও ইজরায়েলের প্রশাসন তাদের প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দক্ষতায় মৃত্যুকে ন্যূনতম জায়গায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জঙ্গি হামলার মধ্যেও সারা বছরে মৃত্যু হাতে গোনা। তখনও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় প্রতি বছর কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হত। সেরড-সহ গোটা ইজরায়েলের আকাশেই তখন ‘আয়রন ডোম’ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ হামাস জঙ্গিরা রকেট ছুড়তে শুরু করলেই সাইরেন বেজে উঠত। পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র মারতে শুরু করত ইজরায়েলি সেনা। জঙ্গিদের ছোড়া দু’-একটি রকেট হয়তো আকাশের ওই প্রতিরক্ষা বর্ম ভেদ করে ইজরায়েল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ত।

গোটা ইজরায়েল সফরে গাজা ভূখণ্ড লাগোয়া ওই সেরডেই আমরা একমাত্র জঙ্গি কার্যকলাপ প্রত‌্যক্ষ করতে পেরেছিলাম। জেরুজালেম বা ওয়েস্ট ব‌্যাঙ্কে জীবনযাত্রা ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ভূমধ‌্যসাগরের তীরে তেল আভিভ দেখে তো মনে হয়েছিল বিশ্বের অন‌্যতম সেরা ঝাঁ চকচকে বাণিজ‌্য ও প্রমোদের শহর। ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল তেল আভিভে। জেরুজালেম রাজধানী শহর হওয়া সত্ত্বেও কেন ভারতীয় দূতাবাস তেল আভিভে তা জানাতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, এটি ইজরায়েলের সবচেয়ে নিরাপদ শহর। এখানে কোনওদিন কোনও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি।

৭ অক্টোবর ভোর থেকে অবশ‌্য ইজরায়েলের নিরাপত্তা সম্পর্কিত সব মিথ ভেঙে গিয়েছে। মোসাদ যে কোনও অপরাজেয় শক্তি নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে হামাস জঙ্গিরা। ইজরায়েল থেকে যেসমস্ত ভিডিও গত কয়েকদিন সোশ‌্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, তাতে দেখলাম ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে সেরড শহরটি। যে-থানায় আমাদের হামাসের ছোড়া রকেটের ভগ্নাবশেষ দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই থানাটিই পুরোপুরি হামাসের কবজায় চলে গিয়েছিল। সেরড শহরে আমরা প্রবেশ করেছিলাম ইজরায়েলি সেনার একাধিক ব‌্যারিকেড ও কাঁটাতারের বেড়া টপকে। সেরডের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা দূরে গাজা ভূখণ্ড দেখার চেষ্টা করেছিলাম। সেরড থেকে সেই ভূখণ্ডের মাঝেও ছিল একাধিক ব‌্যারিকেড এবং বেড়া। কোথাও কোথাও ছিল সুউচ্চ পাঁচিলও। ইজরায়েলি সেনার এইসব বেড়া ও ব‌্যারিকেড টপকে এবং মোসাদের নজর এড়িয়ে হামাস জঙ্গিরা কীভাবে গাড়ি করে, প‌্যারাস্যুটে উড়ে পাল-কে-পাল ইজরায়েলের সীমানায় ঢুকে পড়ল তা বিস্মিত করছে। ইজরায়েলি প্রশাসন থেকে আমাদের বারবার বলা হয়েছিল, গাজা ভূখণ্ড ও ওয়েস্ট ব‌্যাঙ্কে বেড়া ও ব‌্যারিকেড সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে বিশেষ কার্যকরী।

ইজরায়েল খুব ছোট দেশ। গাড়িতে একদিনেই গোটা দেশটি ঘুরে ফেলা যায়। জনসংখ‌্যাও সামান‌্য। আমরা যে-সময় গিয়েছিলাম, তখন সারা দেশে জনসংখ‌্যা ছিল ৭০ লক্ষ। এখন সেটা বেড়ে ৯৩ লক্ষ হয়েছে। অর্থাৎ, কলকাতার জনসংখ‌্যার চেয়েও ইজরায়েলের জনসংখ‌্যা অনেক কম।

এত ছোট দেশটিতে দু’-তিনদিনের জঙ্গি হামলায় হাজার দেড়েকের উপর মৃত্যু ঘটে গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে পৃথিবীর কোথাও এইরকম ঘটনা দেখা যায়নি। ২০০১-এর আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ওসামা বিন লাদেনের বিমান হামলার তুলনাই একমাত্র টানা যায়। সব আধুনিক প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা ব‌্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাদেন আমেরিকায় জঙ্গি হামলা করেছিল। লাদেন সফল হয়েছিল আক্রমণে কোনওরকম প্রযুক্তির ব‌্যবহার না করে। হাতে লেখা চিরকুটে লাদেনের জঙ্গিরা বার্তা বিনিময় করেছিল। হামাস কীভাবে মোসাদের উন্নত প্রযুক্তির চোখে ধুলো দিতে সক্ষম হল, তা নিয়ে এবার গবেষণা হবে। ইজরায়েল সর্বশক্তি নিয়ে প্রত‌্যাঘাত শুরু করেছে। এই প্রত‌্যাঘাত কতটা ভয়ংকর হবে, এখন সেটাই দেখার।

[আরও পড়ুন: এই দুবাইয়ে দাউদের জায়গা নেই]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement