Advertisement
Advertisement
Congress

বিজেপির রণকৌশলে হার কংগ্রেসের

বিজেপির ফাঁদে পা দিয়েই নিজেদের বিপদ ডেকে আনল কংগ্রেস।

Congress lost to BJP's strategy in state politics। Sangbad Pratidin

ফাইল ছবি।

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 5, 2023 2:07 pm
  • Updated:December 5, 2023 2:07 pm

পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলকে সামনে রেখে বিজেপি এমন একটি আবহ তৈরির প্রয়াস শুরু করেছে, যাতে মনে হতে পারে, ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদির হ‌্যাটট্রিক করাটা যেন সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি সুকৌশলে লড়াইটাকে ‘মোদি বনাম রাহুল’ এই ‘বাইনারি’তে নিয়ে গিয়েছে, আর কংগ্রেসও সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। আপাতত, আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন‌্য ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে এই ফলাফল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। লিখলেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

পাঁচ রাজ্যের ভোটকে সেমিফাইনাল হিসাবে দাগিয়ে দিয়ে, এর ফল থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে ব‌্যস্ত বিজেপি। রাজনীতিতে যেহেতু ধারণার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই ফল সামনে রেখে বিজেপি এমন একটি আবহ তৈরির প্রয়াস শুরু করেছে, যাতে মনে হতে পারে, ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদির হ‌্যাটট্রিক করাটা যেন সময়ের অপেক্ষা। ফলাফল তলিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ব‌্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। চার থেকে ছ’মাস পর যখন লোকসভা ভোট হবে, তখন ছবিটাও অন‌্যরকম দেখা যেতে পারে।

Advertisement

‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক দলগুলি ফলাফলের জন‌্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে দায়ী করতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে তারা খোলসা করে রাহুল গান্ধীর নাম করছে না, কিন্তু ইঙ্গিত সেদিকেই। পঁাচ রাজে‌্যর মধে‌্য তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস জিতেছে। মিজোরামে অাঞ্চলিক দলের জয় হয়েছে। যাবতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে মধ‌্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের ফল। দেশের জনসংখ‌্যার ১৩ শতাংশের বাস এই তিন রাজে‌্য। এই তিন রাজে‌্য গত চার দশক ধরে লড়াই সরাসরি কংগ্রেস ও বিজেপির মধে‌্য।

[আরও পড়ুন: শিশিরের বিরুদ্ধে CBI তদন্ত? কুণাল ঘোষের আবেদনে পালটা চিঠি অমিত শাহর]

২০০৩ সালে এই তিন রাজে‌্য বিজেপির বিপুল জয়ের পরেও ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের পরাজয় হয়েছিল। অাবার ২০১৮-এ এই তিন রাজে‌্য বিজেপির পরাজয়ের পরও লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদির বিপুল জয় হয়। রাজে‌্যর বিধানসভা ভোটের ফলের সঙ্গে সবসময়ই লোকসভা ভোটের ফলাফলের যোগাযোগ খুবই কম। তবে এটা ঘটনা, লোকসভা ভোটের মুখে বিধানসভা ভোটের ফল রাজনৈতিক দলের মনোবল তৈরিতে ভূমিকা নেবে। এমনকী, অন‌্য রাজে‌্যর ভোটারদের উপরেও কিছুটা প্রভাব বিস্তার করবে। সেদিকটি মাথায় রেখেই বিজেপি এই তিন রাজে‌্যর ফলকে লোকসভা ভোটে ব‌্যবহার করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে।

একে মোকাবিলার জন‌্য পালটা প্রচারের কৌশল রচনা করতে হবে বিরোধীদেরও। সেই প্রচেষ্টা শুরুও হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), সমাজবাদী পার্টি-সহ ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের শরিকরা বলতে শুরু করেছে, কংগ্রেস তিন রাজে‌্য বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে অাসন সমঝোতায় গেলে এই ফল হত না। লোকসভা ভোটে যখন বিজেপি বিরোধীরা জোট করে লড়াইয়ে নামবে, তখন প্রেক্ষিতটাই বদলে যাবে।

[আরও পড়ুন: প্রাক ‘মিগজাউম’ প্রভাবে হালকা বৃষ্টি শুরু রাজ্যে, একধাক্কায় উষ্ণতা ৭ ডিগ্রি বাড়ল]

বাস্তবিকই এই ফলের মধে‌্যও ইন্ডিয়া জোটের জন‌্য অনেক অাশার দিক রয়েছে। তিন রাজে‌্য কংগ্রেস পরাজিত হলেও তাদের ভোট শতাংশ কিন্তু কমেনি। মধ‌্যপ্রদেশে ১৯৯০ সালে প্রথম বিজেপির সরকার গঠিত হয়। দু’-বছর চলেছিল সুন্দরলাল পাটোয়ার সেই সরকার। ২০০৩ সালে তিন-চতুর্থাংশ অাসন নিয়ে ফের জিতে আসে বিজেপির সরকার। মধ‌্যপ্রদেশের রাজনীতিতে সেটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। দিগ্বিজয় সিংয়ের রাজ‌্যপাটের অবসান ঘটে। টানা প্রায় দু’দশক বিজেপির শাসন চলছে হিন্দি বলয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ‌্যটিতে। ২০১৮-য় সামান‌্য কয়েকটি আসনে এগিয়ে কংগ্রেসের কমল নাথ সরকার গড়েছিলেন। কিন্তু সরকার স্থায়ী হয়নি। জে‌্যাতিরাদিত‌্য সিন্ধিয়া ২২ জন বিধায়ক নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় দু’বছরের মধে‌্য সরকারের পতন ঘটে।

মধ‌্যপ্রদেশের এই দ্বিমেরু রাজনীতিতে ২০০৩ থেকে বিজেপির আধিপত‌্য শুরু হলেও রাজে‌্য দুই প্রধান প্রতিপক্ষর মধে‌্য কিন্তু বরাবর ভোটের ব‌্যবধান খুবই কম। এবারও কংগ্রেস বিজেপির চেয়ে ৯৭টি আসন কম পেলেও ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা দূরে নেই। সবচেয়ে উল্লেখযোগ‌্য ঘটনা হল, ২০১৮-র নিরিখে মধ‌্যপ্রদেশে কংগ্রেসের ভোট কমেনি। ২০১৮-এ কংগ্রেস ৪০.৮৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার সেখানে কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ৪০.৪০ শতাংশ। রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে সরকার কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই রাজে‌্যও প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ছিল, এমনটা বলা যাবে না। ২০১৮-এ রাজস্থানে কংগ্রেসের ভোট ছিল ৩৯.৫৩ শতাংশ, এবার সেখানে ৩৯.৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, কংগ্রেসের ভোট মরুরাজে‌্যও কমেনি। ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের অপ্রত‌্যাশিত পরাজয় হলেও ভোট শতাংশ প্রায় একই আছে। ২০১৮-এ কংগ্রেস ছত্তিশগড়ে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার সেখানে তারা পেয়েছে ৪২.২৩ শতাংশ ভোট। তিন রাজে‌্য যদি গেরুয়া ঝড় উঠত তাহলে কংগ্রেসের ভোট শতাংশ কমে যেত। কংগ্রেসের অটুট সমর্থনভিত্তিই বলে দিচ্ছে যে, ভোটের সামান‌্য সুইং জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিয়েছে।

এই তিন রাজে‌্য কংগ্রেসের হারের কারণ মূলত রণকৌশলগত। সোজা কথায় বিজেপির নির্বাচনী ও প্রচার কৌশলের কাছে কংগ্রেসের পরাজয় ঘটেছে। প্রথমত, দ্বিমেরু এই তিন রাজে‌্য বিধানসভা ভোটের লড়াইকে বিজেপি সুকৌশলে ‘মোদি বনাম রাহুল’ এই ‘বাইনারি’-তে নিয়ে যেতে সফল হয়েছে। কংগ্রেসও সেই ফঁাদে পা দিয়েছে। কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের জয়ের পর কংগ্রেসের একশ্রেণির স্তাবক নেতা বিষয়টিকে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার সাফল‌্য হিসাবে দেখাতে শুরু করেন। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রাটি খায় না মাথায় দেয়, সে-সম্পর্কে ভোটারদের কোনও ধারণাই নেই। কেনই বা একজন নেতার একটি পদযাত্রা দেখে মানুষ দলে দলে ভোট দেবে, তাও বোধগম‌্য নয়। কর্নাটকে কংগ্রেসের রাজ‌্য নেতাদের ভূমিকাই ছিল প্রধান। িকন্তু লড়াইটা ‘মোদি বনাম রাহুল’ হলে যে মোদি বারবার এগিয়ে যাচ্ছেন, তা এই তিন রাজে‌্যর বিধানসভা ভোটে ফের স্পষ্ট হল। লড়াইটা ‘মোদি বনাম রাহুল’ রেখে বিজেপি ভাসমান ভোটারদের উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মধ‌্যপ্রদেশে ‘লাডলি বহেন’ কর্মসূচি বিজেপির পক্ষে খেলা ঘোরাতে সফল হয়েছে। মমতা বন্দে‌্যাপাধ‌্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের অনুকরণে ভোটের চারমাস আগে শিবরাজ সিং চৌহান ‘লাডলি বহেন’ কর্মসূচি গ্রহণ করেন। প্রথম দু’-মাসে মহিলাদের ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্টে তিনি হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। পরের দু’মাসে সেটা বাড়িয়ে ১২৫০ করে দেন। ভোটে জিতলে এই টাকাটা তিন হাজার হবে বলে শিবরাজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন দেখার শিবরাজ সেটা পারেন কি না! তবে এই একটি কর্মসূচি বিজেপিকে মধ‌্যপ্রদেশে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ ভোট বাড়িয়ে ক্ষমতা দখল করতে অনেকটা সাহায‌্য করেছে।

তৃতীয়ত, ছত্তিশগড়ে শেষ মুহূর্তে কংগ্রেসের মুখ‌্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের বিরুদ্ধে অানা দুর্নীতির অভিযোগ বিজেপি প্রচারের তুঙ্গে নিয়ে যেতে সফল হয়েছে। চতুর্থত, রাজস্থানে গত তিন দশক ধরে চলতে থাকা পঁাচ বছর অন্তর সরকার পরিবর্তনের রেওয়াজটি এবার বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। পঞ্চমত, বিজেপি যখন ‘মোদি গ‌‌্যারান্টি’ নাম দিয়ে রেউড়ি বিলিকে ভোটে হাতিয়ার করেছে, তখন কংগ্রেস জাত গণনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টা করেছে। অথচ জাত গণনার ইসু‌্যটি এখনও তেমন দাগ কাটতে পারেনি বিহার, উত্তরপ্রদেশেই।

ষষ্ঠত, কমল নাথ, ভূপেশ বাঘেল কিংবা অশোক গেহলটের মতো কংগ্রেসের প্রবীণ নেতার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং অন‌্যান‌্য বিজেপি বিরোধী দলের সঙ্গে অহংকারপূর্ণ আচরণ কংগ্রেসের ক্ষতি করেছে। এই কথাটি মমতা বন্দে‌্যাপাধ‌্যায়-সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা বলার চেষ্টা করছেন। তিন রাজে‌্যর রাজনীতি দ্বিমেরু হলেও এসপি, বিএসপি, আপ ইত‌্যাদি কয়েকটি ছোট দলের ভোটব‌্যাঙ্ক রয়েছে। সেটাকে কংগ্রেস গুরুত্ব দিলেই পরিস্থিতি অনেক বদলাতে পারত।

তিন রাজে‌্যর ভোটের ফলপ্রকাশের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরে আতঙ্ক ছিল। ২০২৪-এর ফল নিয়েও তঁারা নিশ্চিন্তে ছিলেন না। হিমাচল প্রদেশ ও কর্নাটকে পরাজয়ের পর বিজেপি নেতৃত্বের উদ্বেগ বাড়িয়েছে মূল‌্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনীতির বেহাল দশা, বৈষম‌্য বৃদ্ধি ইত‌্যাদি বিষয় নিয়ে। তিন রাজে‌্য জয় রাতারাতি একটা ভিন্ন আবহ তৈরি করেছে। িকন্তু মাথায় রাখতে হবে, বাস্তব অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দঁাড়াতে হবে। লড়াই যদি ‘মোদি বনাম রাহুল’ এই ‘বাইনারি’-র উপর দঁাড়িয়ে হয়, তাহলে ’২৪-এর পরিণতি একইরকম হতে পারে।

কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোট যদি নতুন কোনও কৌশলে হাজির হতে পারে, তাহলে বিধানসভা ভোটের এই ফলের পুনরাবৃত্তি ’২৪-এ ঘটবে, এমন কোনও গ‌্যারান্টি দেওয়া যায় না। জাত গণনা, মোদি-আদানি সম্পর্ক ইত‌্যাদির বাইরে তুরুপের তাস করার জন‌্য ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নতুন কোনও স্লোগানেরও সন্ধান করতে হবে। নতুন চেহারায় ও নতুন স্লোগান সামনে রেখে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ২০২৪-এর ভোটের প্রচারে আবির্ভূত হলে ছবিটা সম্পূর্ণই বদলে যেতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, বিজেপিও (BJP) অাগামী চার মাস হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এই জয়ের উচ্ছ্বাস যে কিছুদিনের মধে‌্য হারিয়ে যাবে, সেটা তারাও জানে। রামমন্দির উদ্‌ঘাটন-সহ অারও কিছু কর্মসূচি তারা লোকসভা ভোটের জন‌্য সাজিয়ে রেখেছে। ফলে সময় নষ্ট না করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নব কলেবরে মাঠে নামতে হবে দ্রুত।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement