Advertisement
Advertisement

হাতি, ঘোড়া ও সার্কাসের সুন্দরীরা…

সার্কাসের চেয়ে মোবাইল নেট-এর দুনিয়ায় মেয়েরা অনেক বেশি ঘাম ঝরায়৷

Circus-the good old nostalgia of winter season
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 18, 2016 5:16 pm
  • Updated:December 18, 2016 5:16 pm  

আজ থেকে বছর সতেরো আগে পরিবেশবিদদের আন্দোলনে যখন হাতি-ঘোড়া গেল রসাতল, সার্কাস হল নীরস তারপর যেন আর সেই দম রইল না৷ এখনও সার্কাস আসে বটে স্কুলের মাঠে৷ তবে কোনও শো ফুল হয় না৷ লিখেছেন  তরুণকান্তি দাস

ঘোড়ার যৌনতা, হস্তী-সংগম এবং তুমি৷ তিনটেই আমাদের গা-গরম করা, নাকে বিন্দু ঘাম এনে দেওয়া আলোচনার বিষয় হয়ে উঠত এই শীতকালে৷ হিমেল হাওয়া, খেজুর রস, শালুক ফুল, ভেড়ির মাছ, কবাডি ও সার্কাস৷ এটাই তো ছিল শৈত্য কাটানোর উপাদান৷ প্রতিটি উপাদেয় বটে৷ আমাদের স্কুল মাঠে নভেম্বরের মুখেই বিরাট তাঁবু লাট খেয়ে পড়ত৷ লোহার রেলিং ঘড়াং-ঘড়াং শব্দ তুলে নামত লরি থেকে৷ সেই সব সেজেগুজে উঠত একখানা গেট ও তার দু’পাশে দুইখানা টিকিট কাউণ্টার নিয়ে৷ জেণ্টস এবং লেডিস ভাগ করা৷ এর দিন চারেকের মধ্যে চলে আসত হাতি৷ তার পিছনে ছেলে-ছোকরার দল৷ শুঁড় দিয়ে একের পর এক গাছের ঘাড় মটকাতে মটকাতে তার প্রবেশ৷ ইয়া মোটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা৷ যার একটু দূরে ঘোড়া৷ খান দু’য়েক জিরাফ৷ এরই পাশে রেলিংবন্দি বাঘমামা৷ স্কুলের মাঠে উঠে আসা আস্ত আলিপুর চিড়িয়াখানা যেন৷ পাইথন, কাকাতুয়া, ময়না বা শিম্পাঞ্জি তো আছেই৷ বেশ মজার৷

Advertisement

রোজ তিনটে শো৷ প্রথম শো মানেই দূর গ্রামের সব মানুষ৷ আর রাতের শো শুধু কাছের বাসিন্দাদের৷ শীতের রাতে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে ফিরে যেতে যাঁদের কোনও কষ্ট নেই৷ কিন্তু আমাদের কাছে এইসব শো কিস্যু নয়৷ বরং ভোরবেলাটা খুব আকর্ষণীয়৷ সেটাই শো-কেস৷ এবং কেস জন্ডিস৷ রাজা-রাজড়াদের হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া থাকে৷ সার্কাসের মালিক? সে কি রাজা না কি? রাজাদের তো হারেম থাকে৷ এই যে প্যান্ডেলের মাথায় চারদিকে টিনে ছবি-ছাবা লাগানো সব প্রায় আঢাকা মেয়েগুলো-তারা সব? কেমন খাটো, পৃথুলা দেহ৷ মাচার উপর বসে মাইকে ঘোষণা করা হয় চলে এসেছে রাশিয়ার সুন্দরী…৷ আমাদের বুক ধুকপুক করে৷ ফস করে আগুন জ্বলে, যেন মাচিস৷ যেন দমকা টানে বিড়ির গনগনে মুখ৷ দশ ক্লাসের বেড়া টপকানো আমাদের শরীরেও তো তখন সবে লাভা স্রোত৷ রক্তের কণায় কণায় বারুদের দানা, ফুলকি৷ টিনে আঁকা (তখন তো প্রিণ্ট, ফ্লেক্স ছিল না) রাশিয়ান সুন্দরীর আধা-শরীর যেন ভিসুভিয়াস৷ শো শুরু৷ বাঘের হাঁ মুখের সামনে এক, দুই, তিন সুন্দরী৷ হিংস্রতম প্রাণীটি কেমন ম্যাদামারা হয়ে যায় এদের সামনে৷ এরা তার মুখে হাত ঢুকিয়ে দেয়৷ গায়ে হাত বোলায়৷ পিঠে চড়ে৷ এবং চুমু খায়৷ এবং তখনই মানুষ নয়, বাঘ হলে ভাল হত, শ্বাপদ জনম শ্রেয় বলে হা-হুতাশ চেপে বসত এই বুকে৷

আগুন জ্বালা লোহার শলাকা নিয়ে তাদের খেলা, তার উপর দিয়ে হাঁটা-চলা৷ জ্বলন্ত রেলিং-এর ভিতর দিয়ে শরীরটাকে ছুড়ে দিয়ে মন জয়৷ বাক্রু হয়ে থাকতাম৷ পাগল পাগল লাগত৷ এক মেয়ের শরীরে আরও পাঁচ৷ এর পেটে ও দাঁড়িয়ে৷ তার কাঁধে সে৷ আরও-আরও৷ নড়ে না৷ চড়ে না৷ পড়ে না৷ বাপ রে!

গরু যেমন একসঙ্গে খেয়ে পরে জাবর কাটে, তেমনটাই হাল হয় আমার৷ আমাদের৷ মনে মনে বন্ধুরা বেছে নিই পছন্দের সার্কাস-সুন্দরীকে৷ নিজের মতো করে বুকে টেনে নিই৷ আদর-আশকারার মায়াজাল হলেও তাতে ঠাস বুনোট থাকে৷ তাই সকালে একছুটে গিয়ে তাঁবুর কাছে উঁকিঝুঁকি মারি৷ ও বেরোল কি বের হল না৷ উঠেছে কি ঘুম থেকে? সার্কাসের সেই আধ-পোশাকেই ঘুমের দেশে যায় বুঝি৷ সার দিয়ে তাঁবু৷ পাশেই বাঁধা ঘোড়া-হাতি-জিরাফ-শিম্পাঞ্জি৷ ডানা গজানো বয়সে ঘোড়া, হাতির যৌনতা নিয়ে মশকরা করি৷ নিজেদের মধ্যে ‘নিষিদ্ধ’ জ্ঞানের ভাঁড় উপুড় করে ফেলি৷ আর মনে মনে কল্পনা করি সে ঢুকেছে আগুন-বলাকায়৷ সার্কাস মায়া আনে৷ মোহ আনে৷ রক্ত চলকে ওঠে৷

আজ থেকে বছর সতেরো আগে পরিবেশবিদদের আন্দোলনে যখন হাতি-ঘোড়া গেল রসাতল, সার্কাস হল নীরস তারপর যেন আর সেই দম রইল না৷ এখনও সার্কাস আসে বটে স্কুলের মাঠে৷ তবে কোনও শো ফুল হয় না৷ সার্কাসের চেয়ে মোবাইল নেট-এর দুনিয়ায় মেয়েরা অনেক বেশি ঘাম ঝরায়৷ অ্যানিমেশনে হাতি-ঘোড়া-বাঘ-ডাইনোসরদের কত না রূপ৷ আঙুলের ছোঁয়ায় কারসাজি!

কিন্তু শীতকালীন রস ও গন্ধ? সেই মেয়েটির প্রতীক্ষায় তাঁবুর যত কাছে যাওয়া যায় তার চেষ্টা? সব কিছুতেই ছুটি৷ শীতে মন আর যাযাবর হয় না৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement