Advertisement
Advertisement
Chhanda Sen

‘যোগ্যতার উপযুক্ত প্রচার পায়নি ছন্দা’

প্রয়াত ছন্দা সেন। কিংবদন্তি সংবাদ পাঠিকার স্মৃতিচারণে কলকাতা দূরদর্শনের প্রাক্তন সঞ্চালিকা চৈতালী দাশগুপ্ত।

Chhanda Sen reminisced about Chaitali Dasgupta
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 13, 2024 12:12 pm
  • Updated:September 13, 2024 12:12 pm  

ছন্দা ছিল সাধারণ, সহজাত, সুন্দর। এত ভালো ‘প্রেজেন্টার’ আর এত ভালো মানুষ কখনও দেখিনি। স্মৃতিতে ডুব দিলেন চৈতালী দাশগুপ্ত

ছন্দা চলে যাওয়ার সঙ্গেই সংবাদ-পাঠের জগতে একটি যুগের অবসান হল। আর, আমি হারালাম এক বন্ধু।

Advertisement

‘দূরদর্শন’-এর একদম শুরুর দিকের যে সংবাদ-পাঠকরা ছিলেন, ছন্দা তঁাদের অন‌্যতম। সাদামাঠা সাজপোশাক, অথচ প্রবল ব‌্যক্তিত্ব। যদিও একই দফতরে কাজ করেছি, তবে ওকে প্রথম দেখেছিলাম টিভির পর্দাতেই। এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম ওর ক্যারিশমায়। যেমন সাবলীল বাচনভঙ্গি, তেমনই দৃপ্ত চেহারা। সব মিলিয়ে আমার ভীষণ ভাল লাগা তৈরি হয়েছিল। তারপর যখন অফিসেই মুখোমুখি হলাম, সাধারণ প্রতিক্রিয়াতেই বলে ফেলেছিলাম, ‘তুমিই ছন্দা সেন!’ কারণ পর্দার মানুষটা আর সামনে দঁাড়ানো মানুষটার মধে‌্য যেন অনেক তফাত। এতটুকু সাজগোজ নেই। নেই মেক-আপ। অথচ, সেই মানুষটাই যখন ক‌্যামেরার সামনে ‘খবর’ পড়ে– তখন কী ব‌্যক্তিত্বময়ী ও সাবলীল। জবাবে বলেছিল, ‘হ‌্যঁা, কিন্তু মনে হচ্ছে না তো? মানে, পর্দায় যাকে দেখো তেমন মনে হচ্ছে না?’ বলেই হেসে ফেলে। আমাদের প্রথম আলাপটা শুরু হয়েছিল এইভাবে ‘তুমি’ দিয়েই। পরে সেটা ‘ছন্দা’ ও ‘তুই’ হয়ে যায়। ও আমার থেকে কয়েক বছরের বড় ছিল, তবে তার জন্য বন্ধুত্বে এতটুকু বাধা পড়েনি।

স্মৃতি সরণি। ছন্দা সেনের সঙ্গে চৈতালী দাশগুপ্ত। ছবি: লেখিকার ফেসবুক।

[আরও পড়ুন: জামিন পেলেন কেজরিওয়াল, জেলমুক্তি কবে?]

ছন্দারা যে-সময় খবর পড়েছে সেই সময়ের খবর-পাঠের সঙ্গে এখনকার সংবাদ পরিবেশনের আকাশপাতাল তফাত। টেলি প্রম্পটারও এসেছে বহু পরে। ওদের খবর পড়তে হত– হাতে লেখা কাগজ দেখেই। খবর শুরুর আগেই হয়তো হাতে পেত ওরা সেই কাগজগুলো। চটজলদি ধরতে হত পড়া। আবার, খবরের ‘লাইভ’ টেলিকাস্টের মাঝেই নিউজ ডিপার্টমেন্ট এসে নতুন ‘খবর’ লিখে পাশে রেখে দিয়ে চলে যেত। সেখান থেকেই ‘খবর’ ধরতে হত ওদের।
যেদিন দূরদর্শনের উদ্বোধন হয় সেদিন কিন্তু ছন্দা খবর পড়েনি। সেদিন ছিলেন তরুণ চক্রবর্তী। তবে ছন্দা তার কয়েক দিনের মধে‌্যই প্রথম খবর পড়েছিল– স্পষ্ট মনে আছে।

আসলে ছন্দা আর তরুণ, দু’জনেই কাগজে-কলমে ‘আকাশবাণী’-র স্টাফ ছিল। কিন্তু নিয়মিত দূরদর্শনেও খবর পড়তে আসত ওরা। এর মধে‌্যই গড়ে উঠেছিল আমাদের বন্ধুত্ব। তখন তো সাদা-কালো ছবি। ‘খবর’ পড়তে বসার আগে চুলটুকু সামান‌্য ঠিক করে নেওয়া ছাড়া কিছুই করতে দেখিনি ওকে। আসলে, তখন কেউ ফরসা হলেই তঁাকে একটু শ‌্যামলা করার দরকার পড়ত। ছন্দা ছিল স্বতঃই একটু শ‌্যামলা। ওর গায়ের রংটা খুব সুন্দর আসত ক‌্যামেরায়। মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল। নিজের চুলটা ঠিক করে নিয়েই বলত– ‘নে, এবার তোরা টোনডাউন কর’। মুখে সামান‌্য পাফ করা আর হাত দিয়ে চুল ঠিক করা ছাড়া কিছুই করতে দেখিনি। এটা নিয়ে আমাদের মধে‌্য নানা সময়ে অনেক মজার কথাবার্তা হত।

[আরও পড়ুন: ‘এবার মা দুর্গার কাছে শুধু শক্তি চাইব’, পুজো পরিকল্পনা জানালেন মধুমিতা]

ওর যতটা যোগ‌্যতা ছিল, তত প্রচার ও পায়নি। নিজেও খুব প্রচারবিমুখ ছিল। সামনে আসতে চাইত না। আড়ালেই থাকতে চাইত। একবার ‘দর্শকের দরবারে’ অনুষ্ঠানে জোরজবরদস্তি করেই ওকে এনে বসিয়েছিলাম। তখন দূরদর্শনের শুরুর দিকের অনেক গল্প বলেছিল। ছন্দা ছিল সাধারণ, সহজাত, সুন্দর। এত ভালো ‘প্রেজেন্টার’ আর এত ভাল মানুষ কখনও দেখিনি।
১৯৭৫ সালে যে-বন্ধুত্বের শুরু হয়েছিল আমাদের মধ্যে, তা চলেছিল ছন্দার জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত। বছরখানেকের বেশি সময় ধরেই খুব অসুস্থ ছিল। প্লাজমা রিপ্লেস হল।
তখন ওর মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। রোজ ওর মেয়েকে রাতে মেসেজ করতাম, কেমন আছে জানতে। শেষ মেসেজটার আর কোনও জবাব আসেনি।
                                                                                                                         (অনুলিখন)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement