উত্তরবঙ্গে যে পরিমাণে অরণ্যচ্ছেদন হয়েছে, তাতে বায়ু কোথাও বাধা পাচ্ছে না, বন্ধুর ভূপ্রকৃতি এবং অরণ্যের কারণে যে বাধাটা আগে ছিল। জানালেন দেবজিৎ দত্ত।
উত্তরবঙ্গ সাধারণত টর্নেডোর জন্য বিখ্যাত নয়। দক্ষিণবঙ্গেও যে প্রভূত টর্নেডো হয়, তা নয়। বিগত তিন-চার বছরে হয়তো হালিশহর বা বনগাঁর মতো কোথাও কোথাও টর্নেডো হয়েছে, কিন্তু তার স্থায়িত্ব খুব বেশি নয়, এবং তা স্থানীয়ভাবেই ঘটেছে। টর্নেডো সচরাচর হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ দিকে– টেক্সাস, ফ্লোরিডা, অ্যালাবামা-তে, বা চিনের হোয়াংহো-ইয়াং সি কি-তে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়। এসব এলাকায় সমভূমি বিস্তৃত। ভূমিরূপে কোনও ওঠা-নামা নেই, কোনও বড় পাহাড় এসব জায়গায় নেই। সমুদ্রের দিক থেকে আসা বায়ু গরম, মেরুর দিক থেকে আসা বায়ু আবার ঠান্ডা। ফলে সহজেই তাদের সংঘর্ষ হয়।
আমাদের এখানে তা হয় না, কারণ এখানে হিমালয় আছে, যে-কারণে এখানে বায়ুর অভিমুখ একমুখী, মেরুর দিকের বায়ু এদিকে আসে না। মার্কিন দেশে পর্বতমালাগুলি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত, হিমালয়ের মতো পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত নয়। মেরুর ঠান্ডা বায়ু অনেকটা দক্ষিণ পর্যন্ত আসে, তা অনেকটা উপরে থাকে, আর সমুদ্রের উষ্ণ বায়ু থাকে নিচে। এদের সংঘর্ষে তৈরি হয় ঘূর্ণন, এবং সেই ঘূর্ণায়মান বায়ু মাটি স্পর্শ করে ধুলোবালি নিয়ে তা উপরে উঠতে শুরু করে। একেই টর্নেডো বলি আমরা।
উত্তরবঙ্গে তাহলে টর্নেডো হল কেন? আমার ব্যক্তিগত মতটা বলি। উত্তরবঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের মতো গরম পড়েনি। হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তরবঙ্গে শীতল বাতাস কিছুটা থেকে গিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের উষ্ণ বায়ুর সঙ্গে তার একটা সংঘাত হয়েছে। এর কারণ একটাই, উত্তরবঙ্গে যে পরিমাণে অরণ্যচ্ছেদন হয়েছে, তাতে বায়ু কোথাও বাধা পাচ্ছে না, বন্ধুর ভূপ্রকৃতি এবং অরণে্যর কারণে যে বাধাটা আগে ছিল। বিশ্ব উষ্ণায়ন এর মূলগত কারণ হতেই পারে, কিন্তু আদত কারণ হয়তো এই পরিমাণ প্রকৃতি ধ্বংসই। কারণ, শূন্যস্থান পেলেই সেই বায়ু মাটি থেকে অনেক বেশি পরিমাণ ধূলিকণা তুলে নিতে পারে।
আমেরিকায় যে পরিমাণ ক্ষতি করে টর্নেডো, তা-ও ছাপিয়ে রেকর্ড তৈরি হয়েছিল আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে, ১৯৮৯ সালে। সেখানে এত ধ্বংসের কারণ ছিল প্রচুর পরিমাণে টিনের বাড়ি। কংক্রিটের ইমারত হলে এতটা ক্ষতি হয়তো হত না। উত্তরবঙ্গেও এতটা ক্ষয়ক্ষতির কারণ মূলত এই টিনের বাড়ির আধিক্যই।
(কথা বলে অনুলিখিত)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.