রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব বহু ব্রিটিশ। সাধারণ করদাতার টাকায় অতি-ধনী রাজ পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়েও হইচই কম নয়। কিন্তু রাজতন্ত্রকে ব্রিটেন জাতীয় সম্পদ রূপে দেখতে অভ্যস্ত। প্রতীকী অর্থে, অর্থনৈতিকভাবেও। তাই তো ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স’ যদি একটি হাই-স্ট্রিট ব্র্যান্ড পরেন, তার স্টক বিক্রি হয়ে যায় কয়েক মিনিটে। কিন্তু এর চেয়েও প্রভাবশালী ও ব্যাপক রূপকথা লাগবে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে। কলমে অতনু বিশ্বাস
১৯৫৩-র এক ব্রিটিশ তথ্যচিত্র ‘আ কুইন ইজ ক্রাউন্ড’, ক্রিস্টোফার ফ্রাইয়ের লেখা। ঠিক ৭০ বছর আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক নিয়ে। সেখানে বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা লরেন্স অলিভিয়ারের কণ্ঠে ঘটনার ভাষ্য। এখনকার রাজা তৃতীয় চার্লসের একটা ছোট্ট ভূমিকা সেখানে- বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দা থেকে একটা ছোট ছেলের ভূমিকায়।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে-তে ইংল্যান্ডের রাজা-রানির রাজ্যাভিষেক প্রায় হাজার বছরের ইতিকথা। ১৯৫৩-য় দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকটা অবশ্য নানা কারণেই ইতিহাস-সৃষ্টিকারী। সেই প্রথমবার অভিষেক সম্প্রচারিত হয় টেলিভিশনে। দেখে ব্রিটেনের ২৭ মিলিয়ন এবং বিশ্বজুড়ে আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ। রানির অভিষেক নিয়ে বিবিসি-র লোভনীয় এবং দীর্ঘ টিভি কভারেজ তো একটা পুরো প্রজন্মকেই টেলিভিশন কিনতে অনুপ্রাণিত করে। এবং ইংল্যান্ডের ইতিহাসে প্রিন্স চার্লসই প্রথম সন্তান, যিনি প্রত্যক্ষ করেন মায়ের রাজ্যাভিষেক। অনুষ্ঠানটির জন্য শিশুদের হাতে-আঁকা একটি আমন্ত্রণপত্র পেয়েছিলেন তিনি।
সাহিত্যে কিংবা চলচ্চিত্রে ব্রিটেনের রাজার রাজ্যাভিষেকের কথা ভাবতে গেলে মনে পড়তে বাধ্য ছ’শো বছর আগের প্রিন্স হ্যাল-এর কথা। রুপোলি পর্দায় এই বিখ্যাত রাজ্যাভিষেক দৃশ্যটি শেক্সপিয়র থেকেই তুলে আনা। রাজ্যাভিষেকের মধ্য দিয়ে প্রিন্স হ্যাল হয়ে ওঠেন রাজা পঞ্চম হেনরি।
অরসন ওয়েলসের ১৯৬৬-র চলচ্চিত্র ‘চাইম্স অ্যাট মিডনাইট’। ইউরোপে চলেছিল ‘ফলস্টাফ’ নামে। সেখানে হ্যালের ভূমিকায় কিথ ব্যাক্সটার। শেক্সপিয়রের পাঠকের কাছে প্রিন্স হ্যাল এক দায়িত্বজ্ঞানহীন যুবক। হ্যালের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ‘স্যর’ জন ফলস্টাফের, যাকে শেক্সপিয়রের শ্রেষ্ঠ চরিত্র বলে মনে করেন অনেকেই। যা-ই হোক, হ্যালের রাজ্যাভিষেক একেবারে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো- দায়িত্ব গ্রহণের এবং অতীতকে নির্মমভাবে ছেঁটে ফেলার মুহূর্ত সেটা। রাজ্যাভিষেকের দিনে রাজা পঞ্চম হেনরির কাছে ছুটে আসেন ফলস্টাফ। রাজা তাঁকে বলেন, ফলস্টাফ একজন নিরর্থক ব্যক্তি, যিনি হ্যালের স্বপ্নে ছিলেন। রাজা এখন জেগে আছেন, এবং স্বপ্ন আর সেখানকার ব্যক্তিটি নেই। ট্র্যাজিক, নিঃসন্দেহে। কিন্তু ন্যায়সংগত শাসন এবং প্রত্যাশা-পূরণের জন্য এ যেন রাজা পঞ্চম হেনরির এক সঠিক ত্যাগ-স্বীকার। পঞ্চম হেনরির অভিষেক ঘিরে সাম্প্রতিক ছবি হল ২০১৯-এ ডেভিড মিচোড-এর ‘দ্য কিং’। পঞ্চম হেনরির চরিত্রে টিমোথি শ্যালামে। রাজ্যাভিষেক সেখানে ধর্মীয় ব্যাপার। এবং খেয়াল করলে দেখা যাবে, অভিষেক অনুষ্ঠানে ফলস্টাফের অনুপ্রবেশ নেই।
মে মাসে ঘটা করে হল রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক। এ নিয়ে ব্রিটেনেও চাপানউতোরের কমতি ছিল না কিছু।
যা-ই হোক, ইংল্যান্ডের কোনও রাজার অভিষেক-কালে পঞ্চম হেনরির ছায়া ফিরে ফিরে আসবেই। রাজ্যাভিষেকের সেই মনোগ্রাহী চলচ্চিত্রায়ণ দর্শককে এখনও মুগ্ধ করে বলেই হয়তো। একুশ শতকের রাজার রাজ্যাভিষেক অবশ্যই ভিন্ন গোত্রের। হইচই যতই হোক, ব্রিটেনের রাজ পরিবার সাধারণ মানুষের চোখে গরিমা হারিয়েছে অনেকটাই। হারিয়ে যাচ্ছে রূপকথার মায়ামেদুর বিস্ময়টুকুও। দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাত দশকের বেশি শাসনকাল হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে জাপটে ধরে পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় তাঁর স্থবির উপস্থিতির ধারাবিবরণী হয়েই থেকেছে।
আসলে, রাজা-রানি থাকলেই রূপকথার গল্প তৈরি হয় না। আবার ক্বচিৎ কখনও হয়ও। ওই যে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘রাজা এড্ওআর্ড্ ভ্রমণে বেরলেন দেশ-দেশান্তরে।… যত-সব রাজদূত, রাষ্ট্রনায়ক, বণিক্সম্রাট্, লেখনীবজ্রপাণি সংবাদপাত্রিকের ঘেঁষাঘেঁষি ভিড়ের মধ্যে একটা কোন্ ছোটো রন্ধ্র দিয়ে রাজার চোখে পড়ল এক অকুলীন আমেরিকানী। শব্দভেদী সমারোহের স্বরবর্ষণ মুহূর্তে হয়ে গেল অবাস্তব, কালো পর্দা পড়ে গেল ইতিহাসের অসংখ্য-দীপদীপ্ত রঙ্গমঞ্চের উপর।’ শুধুমাত্র প্রেমের জন্য রানি এলিজাবেথের জ্যাঠামশাই- ব্রিটেনের ৩২৬ দিনের রাজা- অষ্টম এডওয়ার্ডের সিংহাসন ছেড়ে দেওয়ার গল্পের শুরুটা এমনই। তারপর রাজা যখন একবার বিবাহ-বিচ্ছিন্না এবং দ্বিতীয়বার বিবাহবিচ্ছেদ করতে উদ্যোগী, ‘আমেরিকানী’ ওয়ালিস সিম্পসন-কে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পরে বিয়ে করতে মরিয়া, তাতে ঘোরতর আপত্তি চার্চ অফ ইংল্যান্ডের। বেঁকে বসেন প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বল্ডউইন-ও। রাজার সামনে তিনটি পথ- বিয়ের চিন্তা ত্যাগ করা, মন্ত্রিসভার আপত্তিতেও বিয়ে করা, আর সিংহাসন ছেড়ে দেওয়া। রাজা বেছে নিলেন তৃতীয় পথটি। ছেড়ে দিলেন ইংল্যান্ডের রাজ-সিংহাসন। তাই তো তৈরি হল ইংল্যান্ডের রাজাদের সহস্রাব্দের ইতিহাসে বোধকরি একমাত্র সত্যিকারের রূপকথাখানা। রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন ‘দুর্লভ, দুর্মূল্য’ ছোটগল্প। সেটা ১৯৩৬। রাজা হলেন তাঁরই ভাই, ষষ্ঠ জর্জ। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা তো একেই বলে। অষ্টম এডওয়ার্ড রাজত্ব না ছাড়লে ভবিষ্যতে ‘রানি’-ও হতেন না দ্বিতীয় এলিজাবেথ- ষষ্ঠ জর্জের বড় মেয়ে লিলিবেট। আর, এখন অভিষেক হত না তৃতীয় চার্লসেরও।
অষ্টম এডওয়ার্ডের পরে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে ঘিরে রূপকথার কাছাকাছি ঘটনা সম্ভবত দুটো মাত্র। তার একটা অবশ্যই লেডি ডায়ানা।বিশ শতকের সবচেয়ে বিস্ময়কর চিত্রগুলির একটি হল দুই অল্পবয়সি রাজপুত্র- প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারি- মায়ের কফিনের পিছনে হাঁটছে, আর বিশ্ব তা দেখছে যুগপৎ দুঃখে এবং আতঙ্কে। দ্বিতীয় ঘটনাটিরও কেন্দ্রীয় চরিত্র হ্যারি-ই। তিনি বিয়ে করলেন বিবাহ-বিচ্ছিন্না মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেত্রী মেগান মার্কেল-কে, যিনি আবার হ্যারির চেয়ে তিন বছরের বড়। বিয়েটা রানির অনুমতি নিয়েই। আর, সেখানেই যেন সম্পূর্ণ হয় একটা সামাজিক বৃত্ত। রানি এলিজাবেথের জীবনকালেই যার শুরু। যখন প্রেমের জন্য বিশাল সাম্রাজ্যের এক রাজা তুচ্ছ করেন রাজত্বকে। হ্যারি-মেগানের বিয়ে যেন সেই বিন্দুতেই সমাপতিত। পরে হ্যারি-মেগানের সন্তানের গাত্রবর্ণ নিয়ে অসূয়ার অভিযোগ কিংবা রাজ পরিবারের নিবিড় যোগসূত্র ছিন্ন করে তাদের মার্কিন মুলুকে বসতি স্থাপন- এসব যে চার্লসের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকেও সমৃদ্ধ করেনি, বলা বাহুল্য। মৃত্যুর ২৫ বছর পরে এখনও অক্ষুণ্ণ লেডি ডায়ানার বিপুল জনপ্রিয়তা। হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-ও কম বিতর্কের রসদ জোগায়নি।
তৃতীয় চার্লসের অভিষেক-কালে বারবার বোঝা যায়, চার্লস কিছুতেই এলিজাবেথ নন। সময়টাও বদলেছে। ৭০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভারত-সহ একের পর এক কলোনি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার অভিঘাতে আহত ব্রিটিশ সমাজে নতুন যুবতী রানির অভিষেকে সামাজিক আলোড়ন ওঠে বেশ। অর্থনীতিও চাঙ্গা হয় খানিকটা। ২৫ বছর বয়সে দ্বিতীয় এলিজাবেথের রানি হওয়াটা যেন যুদ্ধোত্তর দেশে দেশপ্রেমের বেদনার মেঘের মুকুট পরার মতো ঘটনা। এখনকার রাজা বুড়ো চার্লস সেখানে রাজা হয়েছেন ৭৪ বছর বয়সে, ক্লান্ত অতীত এবং অপ্রীতিকর পারিবারিক নাটকের বোঝা মাথায় নিয়ে। চার্লসের নিজের জীবনে স্ত্রী ডায়ানার প্রতি অবিচার-সহ ব্যভিচারের নির্লজ্জ ছায়া, তাঁর এক ভাই সম্প্রতি একটি বড় যৌন নিপীড়ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন, এবং এক বিদ্রোহী ছেলেকে সামলাতেও তিনি ব্যর্থ।
তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক যেন বাড়িয়ে দিয়েছে ‘কুইন’ ক্যামিলা, হ্যারি-মেগান, বা এলিজাবেথ-পরবর্তী যুগে রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। আসলে, রাজতন্ত্রের মধ্য দিয়েই ব্রিটেন এখনও তার আধিপত্য বজায় রাখে কমনওয়েলথের দেশগুলির উপরে- খানিকটা হলেও, বিশেষ করে যে ১৫টি দেশে ব্রিটেনের রাজা-ই সাংবিধানিক প্রধান এখনও। সাম্প্রতিক অতীতে অবশ্য সেই বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে প্রজাতন্ত্র হতে চাইছে অনেক দেশ। বছর দেড়েক আগে যেমন বেরিয়ে এল বার্বাডোজ। জামাইকার মতো দেশও প্রজাতন্ত্র হতে চাইছে। অবশ্য রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব বহু ব্রিটিশও। সাধারণ করদাতার টাকায় অতি-ধনী রাজ পরিবারের বিলাসবহুল জীবন-যাপন এবং রাজার রাজ্যাভিষেকের বিপুল ব্যয় বহন করা নিয়েও হইচই কম নয়। চার্লসের সম্পত্তির পরিমাণই ১.৮ বিলিয়ন পাউন্ড। প্রাক্তন উপনিবেশগুলি থেকে আনা
রাজ পরিবারের বহুমূল্য সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও ওঠে। ওঠে উপনিবেশে একসময়ে করা অত্যাচার কিংবা দাস-ব্যবসার জন্য এখন ক্ষমা চাওয়ার দাবিও। এবং সেসবের মধ্যে ঘৃত সঞ্চারিত হয় যখন রাজ্যাভিষেকের প্রেক্ষিতে ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর মতো সংবাদপত্র ‘কস্ট অফ দ্য ক্রাউন’ নামের অনুসন্ধানমূলক সিরিজ ছাপায়।
সব মিলিয়ে তাই রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এবং প্রশ্নটা গাঢ়ও হতে থাকে। এটাই কি ব্রিটেনের রাজার শেষ রাজ্যাভিষেক? অবশ্য এতটাও ভাবতে রাজি নন প্রত্যেকে। রাজ পরিবারের জন্য ব্যয়ভার যেমন বিপুল, রাজতন্ত্র সে-দেশের অর্থনীতিতে খানিক জলসিঞ্চনও করে বইকি। লন্ডনে সবসময়ই কয়েক মিলিয়ন ট্যুরিস্ট, রাজতন্ত্রের ভাঙা ভাঙা টুকরো যাদের অন্যতম আকর্ষণ। উইলাম-কেটের বিয়ে, হ্যারি-মেগানের বিয়ে, রানির হীরক-জয়ন্তী, চার্লসের অভিষেক- সব অনুষ্ঠানেই বিপুল ট্যুরিস্ট সমাগম হয়, হয় প্রচুর বিক্রিবাটা। অর্থনীতিতে খানিকটা হলেও জোয়ার তোলে বইকি এসব।
এখনকার ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে লেডি ডায়ানার মতো জনপ্রিয় অবশ্য কেউ নেই। খানিকটা সেই জায়গা নিতে পারতেন যিনি, সেই মেগান মার্কেলও দলছুট। হয়তো খানিক বাধ্য হয়েই। তবুও, হালের ব্রিটেনে, ‘কেট মিডল্টন প্রভাব’ এতটাই শক্তিশালী যে, ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স’ যদি একটি হাই-স্ট্রিট ব্র্যান্ড পরেন, তার স্টক বিক্রি হয়ে যায় কয়েক মিনিটের মধ্যে। ২০১৩-য় প্রিন্স জর্জের জন্মের ফলশ্রুতিতে ব্রিটেনের খুচরো বিক্রিতেই আনুমানিক ২৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড আয় হয়েছে। উইলিয়াম-কেটের দ্বিতীয় সন্তান প্রিন্সেস শার্লট যখন জন্মায়, ব্রিটেনের ‘সেন্টার ফর রিটেইল রিসার্চ’-এর হিসাব অনুসারে তা স্বল্পমেয়াদেই ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বৃদ্ধি ঘটায়। এবং কেটের এই সন্তান মেয়ে হওয়ায় তা নাকি দীর্ঘমেয়াদে ব্রিটেনের ফ্যাশন দুনিয়ার অর্থনীতিতে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠবে, এমন অনুমান করেন পরিকল্পনা-বিশারদরা। আবার রাজতন্ত্র ঘিরে থাকে যে গভীর রহস্যময়তা, তার আবেশে এবং তাকে নিংড়ে ব্যবহার করার ফলশ্রুতিতে মিডিয়া এবং শিল্পক্ষেত্রেও জোগান ঘটে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ডের। ‘দ্য ক্রাউন’ এবং ‘ভিক্টোরিয়া’-র মতো পিরিয়ড ড্রামার বিপুল জনপ্রিয়তা এসবেরই উদাহরণ মাত্র।
আসলে, রাজতন্ত্রকে ব্রিটেন তার জাতীয় সম্পদ রূপে দেখতেই অভ্যস্ত। প্রতীকী অর্থে। এবং অর্থনৈতিকভাবেও। ব্রেক্সিট-উত্তর ব্রিটেনে রাজকীয় কূটনীতি হয়তো এখনও প্রাসঙ্গিক! আবার রাজতন্ত্র উঠে গেলেই ব্রিটেনের চাই একজন প্রেসিডেন্ট। রাজা-রানিরা কিন্তু প্রেসিডেন্টের কাজটা করে আসছেন। এবং করে আসছেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠেই। যথেষ্ট প্রশংসনীয়ভাবে।
তবু, এই ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটিশ রাজতন্ত্র বেশিদিন টিকবে কি না, সে নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। টিকে থাকতে গেলে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে অভিযোজন করতেই হবে সময়ের সঙ্গে। শুধুমাত্র জীবন্ত জীবাশ্ম হয়ে না-থেকে উঠতে হবে আধুনিক সময়ের প্রতিভূ হয়ে। অভিষেক-কালে রাজা চার্লস হয়তো ভেবেছেন, এই দিনটার জন্যই তিনি অপেক্ষা করেছেন সারা জীবন। কিংবা, কে বলতে পারে, সেটাই হয়তো ছিল তাঁর সবচেয়ে কঠিন দিন। প্রিন্স হ্যালের পঞ্চম হেনরি হয়ে ওঠা সহজ ছিল না, নিশ্চয়ই। বদলে যাওয়া পঞ্চম হেনরি স্পষ্টত দায়িত্বের বোঝা মাথায় নেন এই দিনে। আপাতত, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র তার রূপকথার ছোঁয়াটুকু খুঁজে বেড়াচ্ছে হন্যে হয়ে। এবং সব মিলিয়ে, দিনের শেষে, একটু রূপকথার ছোঁয়া না থাকলে কিন্তু রাজতন্ত্রের ষোলো আনা মিছে।
(মতামত নিজস্ব)
লেখক আইএসআই কলকাতার অধ্যাপক
[email protected]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.