কুণাল ঘোষ: শুভ নববর্ষ।
ভাল থাকুন। ভাল রাখুন। ভাল থাকতে ঠিক কী করা যেতে পারে ভাবুন। পরিচিতদের ভাবতে বলুন।
কোনটা আমাদের অগ্রাধিকার? সিট (SIT) না সিবিআই (CBI), তরজায় মেতে থাকা, নাকি পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, ওষুধের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিজনিত যে চাপ প্রতিটি পরিবারে নেমে আসছে, তার প্রতিবাদ? কোনটা নিয়ে বেশি ভাবব? নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা থেকে চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ বাদ, নাকি বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যতিক্রমী খারাপ ঘটনাকে নিয়ম বলে দেখানোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টা?
দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন আজ ক’টা বাড়িতে জরুরি মোমবাতি, লম্ফ, হ্যারিকেন তৈরি থাকে। লোডশেডিংয়ের কষ্ট শোনালে আজকের প্রজন্ম ভাবে গল্পকথা।
একটু ভাববেন, তুলনা করবেন, বাংলার আগের জমানা বনাম এখন। তুলনা করবেন, আজ দেশের অন্য রাজ্যের হালহকিকত এবং বাংলার পরিস্থিতি।
বাংলা অনেকটাই এগিয়ে। এবং এগিয়েই চলেছে। এটা বাস্তব। তথ্যে এবং মানুষের অভিজ্ঞতায়, দুই মাপকাঠিতেই। আর এই এগিয়ে চলাটাই সহ্য হচ্ছে না বিরোধীদের। জাতীয় রাজনীতিতে বাংলা মডেলকে গ্রহণ করছেন সারা দেশের মানুষ। তাই বাংলাকে বদনাম করতে পরিকল্পিত বৃহত্তর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে অনেক বড় এবং একাধিক স্বার্থান্বেষী মহল। নতুন বঙ্গাব্দের সূচনায় সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলি, বাংলা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিচ্ছে। বিরাট কর্মযজ্ঞ। বড় অভিযান।
২০১১-র ঐতিহাসিক পরিবর্তনের আগে কী ছিল বাংলার অবস্থা? সর্বত্র নেতিবাচক ধারণা। বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় সিপিএমের ভুল নীতিতে চূড়ান্ত অপশাসন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস। তখন আন্দোলনের নামে বন্ধ, বিশৃঙ্খলা, তাণ্ডব। শিল্পের সর্বনাশ। বেকারসংখ্যা বৃদ্ধি। কলকারখানা বন্ধ। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ইংরেজির অবলুপ্তি। শিক্ষকদের বেতন সময়মতো না হওয়া। কম্পিউটারের বিরোধিতা। কয়েকটা প্রজন্মকে শেষ করেছে সিপিএম। আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পরপর সন্ত্রাস, গণহত্যা। বানতলা থেকে সিঙ্গুর, পরপর ধর্ষণ, হত্যা হয়েছে। কৃষকের জমি দখল হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর হার্মাদদের হামলায়। বাংলার মনীষীদের, তারকাদের যথাযথ সম্মানটুকু পর্যন্ত তখনকার সরকার দেয়নি।
সর্বত্র পার্টিবাজি করে রাজ্যকে ক্রমশ পিছিয়ে দিয়েছিল। পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল, সমস্যায় জর্জরিত। আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে, আইনশৃঙ্খলায়—— সব দিক থেকে সারা দেশে এবং সারা বিশ্বে বাংলা সম্পর্কে ধারণা হয়েছিল অত্যন্ত খারাপ। সিপিএম বা বামেদের শুরুর দিকের কিছু ইতিবাচক চেষ্টা ক্রমশ দলবাজিতে পরিণত হয়। বিনয় চৌধুরি তো কবেই বলে গিয়েছিলে “কনট্রাক্টরদের সরকার।”
২০১১ সালে বাংলার মানুষের সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেস যখন সরকার পরিচালনায় এল, তখন পরিস্থিতি খুব খারাপ। সেই অবস্থা থেকে সবরকম প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে সরকারকে চলতে হয়েছে। তার মধ্যেই কাজ চলেছে। উন্নয়নের তালিকা দীর্ঘ। এইভাবে একটি লেখায় সবটা লেখা অসম্ভব। রাজ্যস্তর থেকে শুরু করে জেলা, গ্রাম, বুথস্তর পর্যন্ত মানুষ দেখছেন, উপলব্ধি করছেন উন্নয়ন। বাংলার কার্যত প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার, সব বয়সের, বিভিন্ন পেশার মানুষ পাচ্ছেন স্কিমগুলির সুবিধা। লকডাউনের দিনগুলিতেও তাই সারা দেশে মাথাপিছু আয় কমে আর বাংলায় বেড়ে যায়। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা। মানুষের এবং বিশেষভাবে মা—বোনেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। পরিকাঠামোয়। সামাজিক সুরক্ষায়। সম্প্রীতিতে। ঐক্যে। আত্মমর্যাদায়।
দেশের অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে তুলনা করুন। কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তরের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে দেখুন। মানুষের কাজে বাংলা কোথাও প্রথম, কোথাও দ্বিতীয়। পঞ্চায়েতেও একসঙ্গে চোদ্দোটি পুরস্কার পেল বাংলা। রাজ্যের কন্যাশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্প বিশ্বের দরবারে সেরার সম্মান পাচ্ছে। আর্থিকভাবে দুর্বলরা অর্থসাহায্য পাচ্ছেন। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। লগ্নি আসছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য—— সব ক্ষেত্রে বিনা খরচে পরিষেবা। মানুষের জীবনযুদ্ধের পাশে যতরকমভাবে সম্ভব সরকার দাঁড়াচ্ছে। পাহাড় শান্ত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চালু। জঙ্গলমহল শান্ত। শহর থেকে জেলা, সৌন্দর্যায়ন ও পরিকাঠামোয় চাঙ্গা পর্যটন শিল্প। কৃষকের জমি সুরক্ষিত, আবার শিল্পও হচ্ছে। বাংলার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিপণন হচ্ছে বিশ্বের দরবারে। নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সমৃদ্ধ করছে মেধাসম্পদকে। লগ্নিকারীরা বাংলায় আসছেন। বাংলার মনীষীরা, বাংলার গর্ব প্রতিষ্ঠিত নাগরিকরা সম্মান পাচ্ছেন বাংলার মাটিতেই। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, খেলা, হস্তশিল্প, উৎসব, চলচ্চিত্র—— সব দিক থেকে আরও এক নবজাগরণ চলছে বাংলায়। এমনকী, উপেক্ষিত প্রত্যন্ত গ্রামীণ বাউল, লোকশিল্পীরাও যাতে সম্মান পান, আমরা সেদিকেও নজর রাখি। রাস্তা, আলো, জল, সেতুর কাজ চলছে। বাড়ি বাড়ি কলের জলের ব্যাপক কর্মসূচি সাড়া ফেলছে।
রাজ্য সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে চলছে। সঙ্গে সংবেদনশীল পুলিশ, প্রশাসন। অপ্রিয় বাজে ঘটনা কমছে। দু—তিনটি ঘটলেও পুলিশ রং না দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঘটনা কমছে। আমরা কড়াভাবে দেখছি প্রশাসনও যাতে তীব্র থাকে। ধর্ষণ খারাপ। কিন্তু বিজেপির রাজ্যের মতো মেয়েটির আত্মীয়দের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় না এখানে। এটা বাংলা। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
মানুষ এই কারণেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির ডেলি প্যাসেঞ্জারি করা সারা দেশ থেকে আসা নেতা বা সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চক্রান্ত সত্ত্বেও তাদের প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আশীর্বাদ করে আবারও বাংলার উন্নয়নের কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছেন।
এত বড় দল। সরকার। সিস্টেম। কাজের তীব্র গতি। ৯৮%, ৯৯% ঠিক কাজের মধ্যে ১%, ২% ভুল থাকতে পারে। হচ্ছে। কিন্তু ভুল চিহ্নিত হচ্ছে। সরকার, দল ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোনও ঘটনার তদন্তের আগেই পরিকল্পিত কুৎসায় নেতিবাচক ধারণা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এইসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সরকার কাজ করছে। ধর্ষণ কুৎসিত। এই সরকার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। জ্যোতি বসুর বানতলার সংলাপ, “এরকম তো কতই হয়” বা যোগীরাজ্যে নির্যাতিতার আত্মীয়দের খুন করার কুৎসিত ঘটনা এই বাংলায় হয় না।
আসলে বাংলার উন্নয়নের মডেলটা সারা দেশে গৃহীত হচ্ছে। তাই প্রতিপক্ষ ভীত। সেই কারণেই সবদিক থেকে বাংলাকে বদনাম করার একটা অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। বাংলার মানুষ মাথা উঁচু করে ২০২১-এ রায় দিয়েছেন। প্রতিশোধ চাই পিছনের দরজা দিয়ে। তাই চক্রান্ত, গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলিকে প্রভাবিত এবং অপব্যবহার করেই বদনাম করার জাল বিছানো চলছে।
ভাবুন, প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, এই চক্রান্ত রুখতে হবে। বাংলাকে ভাল রাখতে হবে। ভাবুন, সহনাগরিকদের সঠিক পথে ভাবতে সাহায্য করুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.