Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bangladesh

বিশৃঙ্খল আরশিনগর!

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি স্থাপনে কেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল?

Bangladesh Violence after Political change
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:August 8, 2024 5:30 pm
  • Updated:August 8, 2024 5:30 pm  

অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে উঠলেও বাংলাদেশ আদপেও মৌলবাদী শক্তির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে কি? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি স্থাপনে কেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল? লিখছেন বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস। দেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিন আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেহারা কেমন হবে? তাতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কারা মন্ত্রী হবেন? কত দিন পর জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অগ্রাধিকারে কোন-কোন ইস্যু স্থান পাবে? প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কই-বা কী হবে? আগামী দিনে ‘বঙ্গবন্ধু’-র ভূমিকাকে পুরোপুরি মুছে দিয়ে নতুন ভাবনায় বাংলাদেশ পরিচালিত হবে কি না! এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আগামী অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।

Advertisement

বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনার প্রস্থান, আওয়ামি লিগ সরকারের পতন, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ঘোষণার পরেও বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত চলছে হত্যালীলা, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ এবং আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের ধারাবাহিক হত্যালীলা। ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধু-র স্মৃতিবিজড়িত সংগ্রহশালা থেকে শুরু করে আওয়ামি লিগের সদর দপ্তর সমেত প্রায় সমস্ত দলীয় অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীদের একাংশ। গত কয়েক দিনে অগণিত মানুষের প্রাণ গিয়েছে এই দেশে। তালিবানি সন্ত্রাসের স্মৃতি উসকে রাস্তায় ঝুলতে দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক নেতার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। আওয়াম লীগের এক নেতার হোটেলে আগুন লাগিয়ে ২৪ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। দেশ জুড়ে ১৫০ জন পুলিশকর্মীকে খুন করা হয়েছে।

 

[আরও পড়ুন: সিবিআই জালে বন্দি কেজরি! ২০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ল জেল হেফাজত]

এই নৃশংস হত্যালীলা সাধারণ গণ-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের দ্বারা কখনওই সংগঠিত হতে পারে না। যেভাবে মানুষকে মেরে ঝুলিয়ে প্রদর্শন করা হচ্ছে, তার সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবানি সন্ত্রাস বা আন্তর্জাতিক ইসলামিক মৌলবাদী সন্ত্রাসের কাজের ধারার সঙ্গে মিল দেখা যাচ্ছে।আর এখানেই ভয়। অর্থনীতিবিদ ইউনুসকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে উঠলেও বাংলাদেশ আদপেও মৌলবাদী শক্তির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে কি?

সামরিক বাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার পরে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ জুড়ে হত্যালীলা চললেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এখানেও সংশয়–যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাষ্ট্র সংঘর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি স্থাপনে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল, তারা বাংলাদেশের শান্তি স্থাপনে কেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল? তাহলে কি হাসিনাকে সরানোর প্রশ্নে সেনা-জামাতের মধ্যে কোনও পূর্ব সমঝোতা হয়েছিল? যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর তাঁর প্রথম প্রেস বিবৃতিতে বারবার জামাতের সঙ্গে তাঁর আলোচনাকে তুলে ধরছিলেন!

সেনা দায়িত্ব নেওয়ার পর জেল ভেঙে জঙ্গিদের মুক্ত করা হয়েছে। যেটা বিশ্ব শান্তির প্রশ্নে যথেষ্ট উদ্বেগের। জামাতের শর্ত মেনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নির্বিচারে আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মীদের হত্যা, এমনকী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন সংগঠিত করার ছাড়পত্র দেয়নি তো? হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে যদি সেনা-জামাতের গোপন সমঝোতা হয়ে থাকে, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফেরা কঠিনতর হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি স্থায়ীভাবে বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ভারতকে নতুন করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। হাসিনা সরকার মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে কোণঠাসা করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
নতুন সরকারে জামাতের প্রভাব থাকলে নতুন করে উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলি আবার মাথাচাড়া দেবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? নতুন করে বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তির প্রভাবে সংখ্যালঘু হিন্দুরা ভারতে পুনরায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে না– তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?

হাসিনা সরকার প্রথম কয়েকটি বছর ’৭১-এর যুদ্ধ-অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দান করে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কিছু সময়ের জন্য দৃঢ় অবস্থান দেখাতে পারলেও– পরবর্তী সময়ে সে-দেশে বিরোধী শূন্য রাজনীতি যতই প্রতিষ্ঠা করেছে, ততই মৌলবাদীদের সঙ্গে সমঝোতা করে গোদি বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে। গণতন্ত্রর প্রসার না-ঘটিয়ে বিরোধী-শূন্য করার রাজনীতিতে শেখ হাসিনা মেতে উঠেছিলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচিত প্রতিপক্ষকে আইনসভার বাইরে রেখে অজান্তেই অপরিচিত শত্রুর চক্রবূ‌্যহে ঢুকে পড়েছিলেন। সেই
অজানা শত্রুর ছোবলেই তাঁকে দেশত্যাগ করতে হল। দেশত্যাগের আগে তিনি তাই নিজের দল আওয়ামি লিগের নেতাদের সঙ্গে কোনও বৈঠক করেছিলেন বলে জানা যায়নি। এমনকী, দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলকে অন্ধকারে রেখে। তিনি পদত্যাগ করে দলের কাউকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারতেন। তিনি পদত্যাগ করে অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসালে গণরোষ থেমে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ‘আমি’-সর্বস্ব নেত্রীর পক্ষে এত উদার হওয়া সম্ভব ছিল না।

 

[আরও পড়ুন: জম্মু সামলাবে দেশের প্রাচীন আধাসামরিক বাহিনী! জঙ্গি দমনে নয়া কৌশল কেন্দ্রের]

আওয়ামি লিগের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। বেঘোরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে দলের কর্মী সমর্থক ও নেতাদের। দলের মধ্যেও একনায়কতন্ত্রর প্রভাব হাসিনার পতনের অন্যতম কারণ ছিল। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশ্নে পড়শি দেশ ভারত নীরব
দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষায় (এই লেখা যখন ছাপা হতে যাচ্ছে তখনও পর্যন্ত) আন্তর্জাতিক স্তরে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রত্যক্ষ উদ্যোগ নেয়নি বলেই খবর। কেন কেন্দ্রীয় সরকার সে-দেশে ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরেও বাংলাদেশের সংকটকে রাষ্ট্র সংঘর সাধারণ সভায় আলোচনার জন্য দাবি তুলছে না!

কেন নয়াদিল্লি রাষ্ট্র সংঘর স্থায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করছে না? রাষ্ট্র সংঘর সনদ অনুসারে এরকম অরাজক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের ‘যৌথ নিরাপত্তা’-র নীতি প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। কেন ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমেত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে বাংলাদেশের শান্তি স্থাপনের প্রশ্নে বহুমুখী আলোচনার দাবি তুলছে না? বাংলাদেশের প্রশ্নে মোদি সরকারের বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরের সংসদে দেওয়া বিবৃতি কিন্তু যথেষ্ট নয়। দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের শান্তি স্থাপনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিকে ভারতের সঙ্গ পাওয়া খুব জরুরি। এই ক্ষেত্রে ভারতকে আরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি।

(মতামত নিজস্ব)
লেখক অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement