‘খানমিগো’ একটি ‘টিউটরিং বট’। অর্থাৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নির্মিত এক শিক্ষা-সহযোগী। এমন এক শিক্ষক বা সহপাঠী যদি ক্লাসরুমে থাকে, তবে ছাত্রছাত্রীর চিন্তা কীসের?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিওয়ার্কের একটি এলিমেন্টারি স্কুলের ক্লাসরুম। এক শিক্ষিকা ক্লাসের হোয়াইট বোর্ডে লিখেছেন ‘কনসোন্যান্ট’ শব্দটি। বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর কাছে শব্দটি অজানা, সে-কথা বুঝে শিক্ষিকা বললেন, ‘খানমিগো-কে জিজ্ঞেস করো, কনসোন্যান্ট কী। দেখো ও কী উত্তর দেয়।’
শুনলে আশ্চর্য লাগলেও ‘খানমিগো’ একটি ‘টিউটরিং বট’। অর্থাৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নির্মিত এক শিক্ষা-সহযোগী। এমন এক শিক্ষক বা সহপাঠী যদি ক্লাসরুমে থাকে, তবে ছাত্রছাত্রীর চিন্তা কীসের? বিশেষ করে শিক্ষক যখন তার সাহায্য নিতে বলছেন ছাত্রছাত্রীদের, তখন তো কেল্লা ফতে! কিন্তু এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমালোচকরা। এই বিশেষ বট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক ধরনের পাইলট টেস্টিং চলছে এই স্কুলগুলিতে। ‘খান অ্যাকাডেমি’ বলে একটি সংস্থার বানানো এই বটটি কীভাবে কাজ করছে- তা দেখতে চেয়েই এই উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু আশঙ্কা করছেন অনেকেই, শিক্ষা গ্রহণের পথ ছায়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে না তো এর ফলে?
‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ কেবলমাত্র একটি বিষয়ে তথ্য ধারণ করে না। বিবিধ বিষয়ে সঞ্চিত তথ্যভাণ্ডার কাঁচামাল হিসাবে জমা করা হচ্ছে সেই যান্ত্রিক মগজে। সেই তথ্যভাণ্ডারের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে কী করে বের করবে এআই? এখানেই প্রযুক্তির কেরামতি লুকিয়ে। কিন্তু প্রযুক্তি পা পিছলোতে পারে যে কোনও মুহূর্তে, এ-কথাও নেহাত অজানা নয়। সেক্ষেত্রে তথ্যবিভ্রাট ঘটা কি একেবারেই অসম্ভব? এমন অজস্র উদাহরণ তো ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে, যেখানে চ্যাটজিপিটি বা ‘ওপেনএআই’ ভুল তথ্য পরিবেশন করেছে। সাফল্যের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যর্থতারও নজির রয়েছে। কাজেই স্কুলের মতো একটি জায়গা, যেখানে শিক্ষা দান ও গ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান, দক্ষতা এবং সারস্বত বোঝাপড়ার প্রাথমিক ভিত রচিত হবে, সেখানে কীভাবে এমন যান্ত্রিক একটি পদ্ধতির উপর নিশ্চেষ্ট ভরসা রাখা সম্ভব?
শিক্ষক যদি পড়ুয়াকে ইন্ধন দেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে, পড়ুয়াও যদি সেই বুদ্ধিমত্তার উপরেই নির্ভরশীল হতে থাকে, তাহলে যে বোধের বিকাশ সীমাবদ্ধ হবে, বলা বাহুল্য। তার সঙ্গেই বিপদ ঘনাবে, যদি ‘এআই’-এর দেওয়া উত্তরকে বেদবাক্যের মতো অভ্রান্ত ধরে নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সমৃদ্ধ করার রাস্তা খোঁজে। ভ্রান্তি এবং বিচ্যুতিতে ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত হতে থাকলে তা অশনি সংকেতই হবে। আর শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষী যোগাযোগের উপরও নির্ভরশীল। যে শিক্ষা সহজেই প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়াতে আস্থা রাখছে, তা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। এই দিকগুলি চিন্তা করা প্রয়োজন, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারে স্কুলগুলিকে গিনিপিগ বানানোর আগে। নাহলে যে ক্ষতি হবে, তা মেরামত করার সময় পাওয়া যাবে না। ‘অন্ধকার’ না জানলে ‘আলো’ কী, সে-জ্ঞান অধরা থাকে, তেমনই ‘রিয়েল’ না জানলে ‘ফেক’ চেনা সম্ভব নয়। ‘এআই’ দিয়ে রিয়েলিটি চেক না করাই মঙ্গল, বিশেষত শিশু-পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.