Advertisement
Advertisement
Couple Adopted Child

মেদিনীপুর থেকে সুদূর নিউজার্সি, সঙ্গীতের অপ্রত্যাশিত ঘর!

সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা। খড়গপুর স্টেশনে মাস ছয়েকের ছোট্ট শিশু গড়াগড়ি যাচ্ছে।

American Couple adopted a child from Midnapur Home
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:January 8, 2025 8:46 pm
  • Updated:January 8, 2025 8:46 pm  

জীবন কতখানি অপ্রত‌্যাশিত, তা প্রমাণিত মেদিনীপুর বিদ‌্যাসাগর হোমের খুদে সঙ্গীতের তের জীবন থেকে। তার নতুন ঠিকানা আমেরিকা! 

সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা। খড়গপুর স্টেশনে মাস ছয়েকের এক ছোট্ট শিশু গড়াগড়ি যাচ্ছে। কেউ তাকে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছে এক অনিশ্চিত অনির্ণেয় অস্তিত্বে। কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশু চাইল্ড লাইনের সহযোগিতায় চলে এল মেদিনীপুর বিদ‌্যাসাগর হোমের স্পেশালাইজড্‌ অ‌্যাডপশন এজেন্সিতে। সেই ছোট্ট ছেলের নাম রাখা হল সঙ্গীত। আর, সঙ্গীত  সেই অনাথ আশ্রমের আদর-যত্নে তার জীবনের প্রথম সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে এখন পড়েছে সাড়ে চার বছরে। মুখে তার আধো-আধো বাংলা। রং তার বাঙালি শ‌্যামল।

Advertisement

আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে উড়ে এলেন লিউরেন্স দম্পতি। তাঁরা ইতিমধ্যে দুই কন‌্যাসন্তানের জনক-জননী। দম্পতির এবার সাধ একটি পুত্রের। তাঁরা দত্তক নিলেন খুদে সঙ্গীতকে। ছোট্ট সঙ্গীত মা এলিজাবেথের কোল থেকে তার হোমের সব্বাইকে জানিয়ে গেল, ‘আমি মাম-এর সঙ্গে আমেরিকা যাচ্ছি।’ জীবন সত্যিই কত অনিশ্চিত ও অপ্রত‌্যাশিত খুদের এই একটা বাক্য ধরা থাকল! মাত্র ক’বছর আগে এই শিশুটি পড়েছিল স্টেশনে। কী নির্মম!
সঙ্গীতের ভাগ্যে এই আচমকা আমূল পরিবর্তন আমাদের দাঁড় করায় সেই চিরকালের বিহ্বল প্রশ্নের সামনে, কোনও নিশ্চিত উত্তর আমরা কি খুঁজে পেয়েছি? খুঁজে না-পেয়ে আমরা কি মেনে নিতে বাধ‌্য হয়নি জীবনের অফুরন্ত অনিশ্চয়তা? যে-জীবন প্রতি মুহূর্তে বিচিত্রভাবে, আনন্দ-বেদনায়, কতরকমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাপন করে চলেছি, অভিজ্ঞ হচ্ছি, সেই জীবনকে আমরা কতটুকু বুঝি? জীবনটা কি সত্যি নিজেই চালালাম? না কি অন‌্য কেউ নেপথ‌্য থেকে চালাচ্ছে?

যাপিত জীবনে কেউ-কেউ আমরা ক্রমাগত সফল হতে-হতে, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, ধনদৌলতের ক্রমিক উচ্চতায় পৌঁছতে-পৌঁছতে অনেক সময় ভাবি, এই সমস্ত প্রাপ্তি আমারই উপার্জন, আমারই বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা, কর্মক্ষমতার সোনালি শস‌্য। এই প্রসঙ্গে কারও-কারও মনে পড়তে পারে লিও টলস্তয়ের বিপুল উপন‌্যাস ‘ওয়ার অ‌্যান্ড পিস’-এর আপাতসামান‌্য এই উক্তি: যুদ্ধজয়ের শেষে, যুদ্ধক্ষেত্রে গর্বিত নেপোলিয়ন দাঁড়ালেন কোমরে হাত রেখে। তাকালেন আকাশের দিকে। কী বিশাল ওই আকাশ! কী ক্ষুদ্র নেপোলিয়ন!

মানুষ যে অদৃষ্টের হাতে এক সামান‌্য, ক্ষুদ্র, ক্ষমতাহীন হেলার পুতুল তা কিন্তু জীবন বারবার প্রমাণ করে। মহাকাব‌্য, পুরাণে, বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির সাহিত্যে, দর্শনে মানুষের অসহায় ক্ষুদ্রতার কথা ফিরে-ফিরে এসেছে কতভাবে। আমাদের চারপাশের ঘটনা নিত‌্যনতুনভাবে প্রমাণ দিচ্ছে কীভাবে ভাগ‌্য আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খড়কুটোর মতো, অচেনা দিকে, অপ্রত‌্যাশিত দুর্ভাগ্যে আশাতীত সৌভাগ্যে ! এই যে আচমকা অদৃষ্টের খুদে সংগীতকে উড়িয়ে নিয়ে গেল, তার ভাষা, সংস্কৃতি, মাতৃভূমির সমস্ত শিকড় উপড়ে ফেলে, একেবারে আনকোরা জীবনপ্রবাহে, তার কতটুকু মঙ্গলজনক, আর কোথায় লুকিয়ে আছে বিপদের বীজ, তা কি জানি আমরা এই মুহূর্তে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement