Advertisement
Advertisement
America

বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস নয়

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের ক্ষত দু’-দশক ধরে সামলাতে হয়েছে সাধারণ আফগানদের।

America learned it the hard way in Afghanistan | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:July 27, 2021 2:40 pm
  • Updated:July 27, 2021 2:40 pm  

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দিন যত এগিয়ে আসছে, তত কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তালিবান সেনা। উপমহাদেশের এই কৌশলগত অঞ্চলে ফের ইসলামি মৌলবাদের জোরালো উত্থান কোনদিকে পরিস্থিতিকে নিয়ে যায়, তা এখন নজরে রাখার। কিন্তু গত দু’-দশকের শিক্ষা: ফের ব্যর্থ মার্কিন ‘ওয়ার অন টেরর’ ও পুনর্গঠনের গালভরা প্রতিশ্রুতি। লিখছেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

দু’-দশক আগে আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে (Afghanistan) তার ‘ওয়ার অন টেরর’ কর্মসূচি শুরু করল, তখন মার্কিন সাংবাদিক উইলিয়াম ব্লুম তাঁর একটি বইয়ে লিখেছিলেন- ‘বিভিন্ন দেশে বোমা মেরে সেখানকার জনবসতি, শহরগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া, আর যারা মরল না, তাদের তাড়া করে ফেরা, এবং সেই দেশের পুনর্গঠনের জন্য কিছু না করা-ই আমেরিকান ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।’ ওই মার্কিন সাংবাদিক লিখেছিলেন, ভিয়েতনামেও ঠিক একই ঘটনা দেখা গিয়েছে। উত্তর ভিয়েতনামের পুনর্গঠনের জন্য ১৯৭৩ সালে আমেরিকা যে অর্থসাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পরবর্তী তিন দশকেও দিয়ে উঠতে পারেনি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন বোমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল লাওস ও কাম্পুচিয়াও। সেখানকার পুনর্গঠনে আমেরিকা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। আটের দশকে মার্কিন বোমার লক্ষ্য ছিল তাদেরই প্রতিবেশী গ্রানাডা ও পানামা। কিন্তু সেই দেশের পুনর্গঠনেও আমেরিকার ভূমিকা দেখা যায়নি। ১৯৯১ সালে টানা ৪০ দিন মার্কিন বোমাবর্ষণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল ইরাক। আধুনিক একটা সাজানো-গোছানো দেশের উন্নত পরিকাঠামো মার্কিন বোমারু বিমানের অভিঘাতে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। সে-ঘটনা টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারপর ৩০ বছরে টাইগ্রিস নদী দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু সেই সুসজ্জিত বাগদাদকে কি আমরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখেছি?

Advertisement

[আরও পড়ুন: শেষ হতে চলেছে আমেরিকার ‘Mission Iraq’, লাগাতার যুদ্ধে ইতি টেনে ঘোষণা বাইডেনের]

আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক তৎপরতা যখন বেড়েছিল, তখন সংবাদমাধ্যমে প্রচার ছিল এটাই যে, তালিবানদের নির্দয় শাসন থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা! আমেরিকা এই অভিযানকে চিত্রিত করেছিল আল-কায়েদা, তালিবান-সহ ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ অভিযান বলে। ৯/১১-তে আমেরিকার উপর সন্ত্রাসবাদী হানায় আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের কোনও যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের ক্ষত দু’-দশক ধরে সামলাতে হয়েছে তাদেরই। ১৯৮০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’-র পৃষ্ঠপোষকতায় ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন যে তৈরি হয়েছিল, সে কাহিনি ইতিহাস বইয়ে কার্যত জায়গা করে নিয়েছে। তালিবানদের রুখতেই আফগানিস্তানে নাজিবুল্লার সরকার সোভিয়েত সেনার সাহায্য নিয়েছিল। তারই ফলশ্রুতিতে গৃহযুদ্ধ চলেছিল একদশক ধরে। নয়ের দশকের মাঝামাঝি তালিবানদের নির্দয় শাসনের খপ্পরে যখন আফগানিস্তান, তখন ওসামা বিন লাদেন মার্কিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২০০১-এ জর্জ বুশের নির্দেশে মার্কিন বোমারু বিমান আফগানিস্তানের আকাশে ছেয়ে যাওয়ার পর পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, আফগান নারী ফের বোরখার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে। লাদেনকে খতম করা গেলেও সন্ত্রাসবাদ ও তালিবানদের নির্মূল করা যায়নি, তা আজ বোঝা যাচ্ছে। দু’-দশক ধরে আফগানিস্তানের কাঙ্ক্ষিত পুনর্গঠনের কাজও যেমন হয়নি, তেমনই মুক্তি হয়নি আফগান নারীরও। আরও মধ্যযুগীয় ডামাডোলে পৌঁছেছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকে অবশেষে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হচ্ছে। কিন্তু মার্কিন সেনা চলে যাচ্ছে আফগানিস্তান-সহ এই অঞ্চলকে আরও বিপদের মুখে দাঁড় করিয়ে। এই সপ্তাহেই কাবুল হয়ে ভারতে আসছেন আমেরিকান বিদেশ সচিব অ্যান্থনি ব্লিংকেন। তাঁর ভারত (India) সফরের সময় আফগান সমস্যাই যে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দিন যত এগিয়ে আসছে, তত কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তালিবান সেনা। তালিবানরা ক্রমাগত হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। তালিবানদের সামনে অসহায় লাগছে আফগান সেনাবাহিনীকে। আফগানিস্তানের স্থায়ী শান্তি ফেরাতে আমেরিকা তালিবানদের নিয়ে যতগুলি বৈঠক করেছে, তা সবই কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। আফগানিস্তান যে ফের সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হতে চলেছে, তা ক্রমশ স্পষ্ট। এতে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই খুশি হতে পারে, কিন্তু উদ্বেগ বাড়ছে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে।

সুযোগ বুঝে চাপ বাড়াচ্ছে পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে সওয়াল করেছেন- কাশ্মীরের মানুষ ঠিক করুক তারা স্বাধীনতা চায়, না পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। ইমরানের এই বক্তব্য পাকিস্তানের এতদিনের ঘোষিত কাশ্মীর নীতির পরিপন্থী। এর আগে পাকিস্তান বলে এসেছে, রাষ্ট্রসংঘের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীরে গণভোট হোক এবং সেখানকার মানুষ রায় দিক তারা ভারতের সঙ্গে যাবে, না পাকিস্তানের সঙ্গে যাবে। অবস্থান বদল করে ইমরান বললেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আসবে, না স্বাধীন রাষ্ট্র চাই- সেকথা কাশ্মীরের মানুষ বলুক। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বদল হওয়ায় পাকিস্তানের যে এই সুরবদল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। উপমহাদেশের এই কৌশলগত অঞ্চলে ফের ইসলামি মৌলবাদের জোরাল উত্থান কোনদিকে পরিস্থিতিকে নিয়ে যায়, তা এখন নজরে রাখার। কিন্তু গত দু’-দশকের শিক্ষা: ফের ব্যর্থ মার্কিন ‘ওয়ার অন টেরর’ ও পুনর্গঠনের গালভরা প্রতিশ্রুতি। কাবুলের নারীর যে দুর্দিন ফের আসন্ন, সেই বার্তা মিলছে তালিবান (Taliban) জঙ্গিদের বন্দুকের নলে।

[আরও পড়ুন: চিনকে দানব প্রতিপন্ন করা বন্ধ করুক America, কড়া বার্তা বেজিংয়ের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement