Advertisement
Advertisement

বিশ্বাস করুন সব সাদা ছিল কালো হয়ে গেল!

দেশ গড়তে গেলে যে ‘স্যাক্রিফাইস’-এর কথা আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছে, তাতে কেন চিরকাল মালদহের ওই কৃষকই বলি হবে?

All which are white turned into black
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 4, 2016 4:41 pm
  • Updated:December 4, 2016 4:53 pm  

দেশ গড়তে গেলে যে ‘স্যাক্রিফাইস’-এর কথা আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছে, তাতে কেন চিরকাল মালদহের ওই কৃষকই বলি হবে? সমবায় ব্যাঙ্ক এরকম খালি কেন? আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাঁদের নেই? যারা সারাবছর কিছু করে না? ফাংশনে গান গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে, যাত্রা করে রোজগার করে? তাদের এই যে একটা বন্ধ্যা বছর উপহার দিলেন, তার বেলা? যাক গে, সবকিছুই আপনাদের আগেই পড়া৷ আমি নস্ট্রাডামুস বা অমর্ত্য সেনও নই৷ তবে আমার কাছে এমন একটা গল্প আছে, যেটা বোধহয় আপনাদের জানা নেই৷ অরুণোদয় 

rahul-post-edit_web

Advertisement

সুকুমার রায় আমাদের যত প্রিয়ই হোন না কেন, হযবরল কি একজন গুজরাতি মানুষের প্রিয় কবিতা হওয়া সম্ভব? না হলে বেড়ালকে রুমাল বানানোর সিদ্ধান্ত নেবেন কেন হঠাৎ? নিশ্চয়ই দেশের ভাল হবে, দশের ভাল হবে৷ হতেই হবে৷ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যা চলছে তা তো আরও অনবদ্য৷ স্মার্টফোনের দুনিয়ায় সকলেই অমর্ত্য, সকলেই বিমূর্ত৷ এ বলছে গেল গেল গেল৷ ও বলছে “স্বচ্ছ ভারতিলো, উদিলো নরেন মোদি…” কেউ বলছে মোদির জন্যই কালো টাকা লুকোতে না পেরে অ্যাম্বেলিকাল কর্ড গলায় জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছেন উদুরপুরের গাইনোকলজিস্ট শঙ্কর মাইতি৷ অতএব ‘জয় স্বচ্ছ ভারত’৷ সংবাদ মাধ্যমে দেখছি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পেয়ে পাওনাদারদের মেটাতে না পেরে মালদহের কৃষকের আত্মহত্যা৷ তখন আবার হঠাত্‍ করে ভারতটা ঘষা কাচের মতো ঠেকে৷ আমার অবস্থান বড় বিচিত্র৷ আমি রাহুল৷ ফিল্মে, সিরিয়ালে অভিনয় করি৷ কিন্তু এত বড়লোক নই যে সাদাকালোর চাপে চেপ্টে জেব্রা হয়ে যাব৷ আবার টাচ উড এতটা গরিবও নই যে দিন আনি দিন খাই-এর দশা৷ সত্যি বলতে, আমার যতটুকু যা সমস্যা হচ্ছে তা বড়জোর শৈশবের লোডশেডিং-মার্কা৷ মানে আজ বিরক্তি হলেও এটাই হবে পরবর্তীকালের নস্টালজিয়া৷ কারণ আমাদের ‘মল’-এর পৃথিবীতে কার্ডেই কাজ চলে যায়৷ শুধু পার্কিং-এর জন্য যতটুকু (যেটা জোগাড় করতেও সর্ষেফুল দেখছি যদিও)৷ কিন্তু কিছু মানুষকে আমি নিজের সামনে দেখছি যন্ত্রণা ভোগ করতে৷ নিজের দোষ ছাড়া৷ দেশ বানানোর এই যে ‘Todays pain, tomorrows gain’ মার্কা কথাবার্তা এদের, আমার আপনার প্লাস্টিক মানির পৃথিবী থেকে সেটা বলতে যাবেন না৷ বিপদ হবে৷ দেখুন মেলামেশার জায়গা থেকেই বলতে পারি, সত্যিকারের বড়লোক কতটা ৫০০-১০০০ এ জমায় তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷ টাকা সাইফন করার অনেক পতি এদের জানা আছে৷ আর সত্যিকারের বড়লোক ডাক্তারকে সব সত্যি না বললেও সিএ-কে সব সত্যি বলেই রাখেন৷

আমি প্রত্যক্ষ ভাবে যে কাজের সঙ্গে জড়িয়ে অর্থাত্‍ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তার দৈনন্দিন কাজও তো ক্যাশ নির্ভর৷ ক্যাশ মানেই তো কালো নয়৷ কিন্তু জুনিয়র টেকনিশিয়ান থেকে ক্যাটারার থেকে জেনারেটর–এদের উপার্জন সবটাই ক্যাশ-এ৷ রীতিমতো রশিদ দিয়েই হয়, কিন্তু ক্যাশে হয়৷ আবারও বলছি আমাদের যাদের অ্যাকাউণ্টে টাকা সরাসরি পড়ে যায় তাদের সের’ম সমস্যা নেই৷ কিন্তু আর্ট-সেটিং এর প্রায় প্রত্যেকেই ওড়িশার লোক৷ রাজু আমার খুবই কাছের৷ ওড়িশাতে ওর দাদার অ্যাক্সিডেণ্ট হয়েছে৷ ওর কাছে টাকা আছে৷ সাহায্য করার উপায় নেই৷ ‘অরণ্যদেব’-এর মতো ছবি যার শ্রেষ্ঠাংশে যিশু সেনগুপ্ত ও মীর-এর মতো তারকা অভিনয় করেছে, তার রিলিজ কবে হবে কেউ জানে না৷ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রযোজক৷ কারণ দর্শকের কাছে সিনেমার টিকিট এখন বিলাসিতা৷ একই খবর হরনাথ চক্রবর্তীর ‘অমর প্রেম’-এর৷ এগুলো আমার বা আমাদের সরাসরি ভোগান্তির অভিজ্ঞতা৷
আমার বাড়ির তলায় যে সোমনাথ ক্যাটারার, সে আমার যাবতীয় অনুষ্ঠানের কাজ করে৷ তার অফিসে যে দৃশ্য তা কহতব্য নয়৷ প্যান্ডেলের মিস্ত্রিরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে৷ তাদের ২০০ টাকা রোজ৷ সোমনাথদার বিশ্বস্ত এদের মধ্যে অনেকে৷ ১০ দিনের রোজ বলে ২০০০ টাকার নোট দিলেও তাদের সেই টাকা নিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না৷ ভাঙাতেই পারছে না যে৷ তাদের চোখে যে ধ্বংসের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি তা যদি স্বচ্ছ ভারতের মতো দেখতে হয় তাহলে আমি খুবই ভীত৷ আমার বোধ অল্প এবং কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে আমি লিখছি না৷ কিন্তু ব্যাঙ্কের সামনে লাইন কমছে না, বাড়ছে৷ দেশ গড়তে গেলে যে ‘স্যাক্রিফাইস’-এর কথা আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছে তাতে কেন চিরকাল মালদহের ওই কৃষকই বলি হবে? সে তো বোধহয় ইকনমির মানে বা বানানও জানত না৷ সমবায় ব্যাঙ্ক এরকম খালি কেন? আর ব্যাঙ্ক যাদের নেই? যারা সারাবছর কিছু করে না? ফাংশনে গান গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে, যাত্রা করে রোজগার করে? তাদের এই যে একটা বন্ধ্যা বছর উপহার দিলেন তার বেলা? যাকগে, সবকিছুই আপনাদের আগেই পড়া৷ আমি নস্ট্রাডামুস বা অমর্ত্য সেনও নই৷ তবে আমার কাছে এমন একটা গল্প আছে যেটা বোধহয় আপনাদের জানা নেই৷

এটা জয়ন্তী চক্রবর্তীর গল্প৷ ১৯৭১ সাল৷ পূর্ব পাকিস্তান তখন উত্তাল৷ জয়ন্তীর স্বামী, জনা ডাক্তার রাজশাহিতে তখন পসারের শিখরে৷ রাজাকারদের (গুপ্তচর) হাতে কিছু বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের খুন করার লিস্ট এসে পৌঁছয়৷ তাতে জনা ডাক্তার অর্থাত্‍ প্রকাশ চক্রবর্তীর নাম ছিল৷ কলকাতার সন্তোষপুরে বাড়ি কেনাই ছিল৷ রাজাকারদের একজন ছিলেন জনা ডাক্তারের রোগী৷ তার কাছ থেকে খবর পেয়ে জনা ডাক্তার নিজের দেশ, নিজের পসার ফেলে রওনা দেওয়ার আগে অবশ্য এই খবরটা পেয়ে যান যে তার মাকে নেপালদিঘির দেশের বাড়িতে কুপিয়ে খুন করে সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে পাক সেনারা৷ কলকাতায় সে সময় জনা ডাক্তার নিয়ে এসেছিলেন অনেকটা ক্যাশ৷ প্রায় ৯০ হাজার টাকার মতো৷ তখন পাকিস্তানি টাকা বদলাতে যেতে হয় শিয়ালদহে৷ জনা ডাক্তার যাদবপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ এমন সময় দেখা দেশের লোক সাহা-দা’র সঙ্গে৷ জয়ন্তীর স্পষ্ট মনে আছে, দিনটা শুক্রবার৷ সাহাদা বললেন, “আজ বদলাবেন না, সোমবার পাকিস্তানি টাকার দর উঠবে৷” জনা ডাক্তার স্টেশন থেকে ফিরে এলেন৷ সেদিন রাতে ইয়াহিয়া খান যাবতীয় পাকিস্তানি নোট বাতিল করে দিলেন৷ বিশ্বাস করুন, সবটা সাদা ছিল৷ কাগজ হয়ে গেল৷ একটা পরিবার পথে বসে গেল৷ জয়ন্তী আমার দিদার নাম৷ দাদু ছিলেন জনা ডাক্তার৷ এ গল্প আমার বহুদিনের চেনা৷ দাদুর রোজগারের বড় বড় নোট বর্ষার জমা জলে মহানন্দে নৌকা বানিয়ে আমরা নাতি-নাতনিরা ছেড়েছি, না বুঝেই৷ ডিমনিটাইজেশনের খবর পেয়ে দিদাকে ফোন করলাম৷ জিজ্ঞাসা করলাম, “কী বুঝছ?” দিদা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “কী আবার? অভ্যাস হয়ে যাবে৷” একটা প্রচণ্ড সত্যি৷ আমাদের বড্ড বেশি বু‌দ্ধি৷ মাটির ঘাস শেষ হয়ে গেলে অন্যকিছু বানিয়ে নিই৷ ধুস ল্যামার্ক! ধর্ম সব ঘাস খেয়ে চলে গেল, তাও বুদ্ধির জোরে মাটিতেই উৎপাদন করে চলেছি৷ ইস বুদ্ধিটা যদি একটু কম হত? একবার যদি ধর্ম ছেড়ে জিরাফের মতো আকাশের দিকে তাকাতাম৷ না হয় উঁচু ডালের পাতা খাওয়ার ধান্দাতেই৷ ইস ল্যামার্ক৷ অভ্যাস৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement