সন্দীপ চক্রবর্তী: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার (Naba Joar) কর্মসূচি বারো দিন পেরিয়ে গেল। ২৪ এপ্রিল তিনি ঘর ছেড়েছিলেন, নিজের ঘরে আবার ঢুকবেন ২৪ জুন। মাঝের ৬০ দিন কাটবে রাস্তায়। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর সংশয় আর প্রশ্ন তুলেছিল বিভিন্ন মহল। তার মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেমন রয়েছে, রয়েছে একটি শ্রেণীর সংবাদমাধ্যম। ঠিক বারো দিন পর দেখা গেল এই সব মহলকে মোক্ষম জবাব দিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। দিতে পেরেছেন কারণ জনতা তাঁকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।
গণতন্ত্রে মানুষই যে শেষ কথা বলে সেটা কাউকে আলাদা করে বোঝানোর নেই। অতীত ইতিহাস বা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, যে কোনও সময়ে নেতারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে বা সমালোচনার জবাব দিতে বেছে নিয়েছেন জনতাকে। সেক্ষেত্রে একটা ঝুঁকিও থেকে যায়। অভিষেকের ক্ষেত্রেও সেই ঝুঁকি ছিল। ঝুঁকি নিতে জানতে হয়। রাজনীতিতে বিশেষ করে। সারা দেশে যেটা হয়নি সেই পথে হাঁটলেন তিনি। পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। ভোটের আগে ভোট, যেটা বলা হচ্ছে মতামত গ্রহণ। যে কোনও বড় দলের এমন কর্মসূচিতে শৃঙ্খলা লাগে। অভিষেকের চ্যালেঞ্জ যেন আরও শৃঙ্খলিত করা।
কোচবিহারের দিনহাটা থেকে শুরু করে শুরু হয়েছিল নতুন যাত্রা। নাম দেওয়া হল, জনসংযোগ যাত্রা। তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় (TMC) সাধারণ সম্পাদক। উত্তরবঙ্গের সব জেলা পেরিয়ে শুক্রবার ৫ মে প্রবেশ করেন দক্ষিণবঙ্গে। নবজোয়ার-এর কর্মসূচি প্রতিদিনই ছাপিয়ে গিয়েছে। ভেঙেছে উৎসাহ উদ্দীপনার রেকর্ড। মানুষ ওকে সামনে পেয়ে উদ্বেল হয়েছে। একটিবার শুধু অভিষেককে ছোঁয়ার চেষ্টা। দেখলাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু ওকে দেখার অপেক্ষা।
আট থেকে আশি, এমনকি মালদহে ১২৭ বছরের বৃদ্ধা চলে এলেন ওকে আশীর্বাদ করতে। ৩০ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যখন সারা বাংলা ঘুরে যখন এমন ধরনের এক যাত্রা শুরু করেন, তখন তিনি বিরোধী নেত্রী।
অভিষেক মানুষের কাধে চড়ে পেরিয়ে যাচ্ছেন পথ। সমালোচক বা বিরোধী বা মিডিয়াকে কী জবাব দিলেন?
১. দলে নিজের কতৃত্ব বাড়িয়ে নিলেন।
২. দলের এক সন্ধিক্ষণে ঘুরে ঘুরে একজোট করলেন দলীয় নেতাদের।
৩. বাংলার মানুষকে আরও বেশি করে জানতে পারলেন, মানুষের সঙ্গে আরও একাত্ম বোধ তৈরি হল। খুব বেশি করে চিনে নিলেন গ্রাম বাংলাকে, যে গ্রামই ভিত্তি।
৪. মিডিয়ার সঙ্গে কথা কম, মানুষের কথা শুনলেন বেশি। দেখলেন কোথায় খামতি রয়েছে।
৫. তৃণমূলে যুক্ত করে নিলেন অতি সাধারণ মানুষকেও। তাঁরাও এসে ভোট দিয়েছেন এই মতামতের ব্যালটে। অন্য দলের তুলনায় এটাই করতে চাইছেন ইউএসপি হিসেবে, নেতা নির্ভরতা কমিয়ে মানুষের দল হিসেবে আরও গড়ে তোলা।
বস্তুত, যখন বিরোধী দলের নেতারা কলকাতা ভিত্তিক রাজনীতিতে বেশি উৎসাহী এবং মিডিয়াতে ভর করে বাইট দিতে আগ্রহী, তখন অভিষেক অন্যরকম। ব্যতিক্রমী। এই অভিষেক মিডিয়াকে নিয়ে বেশি আগ্রহী নন। তাই মালদহ বা মুর্শিদাবাদে ওকে গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তিনিও সেটা মাথা পেতে নেন, পালটা জবাব দিয়ে মানুষকেও সেই পাপড়ি ফিরিয়ে দেন। ছোট্ট ছেলেটির থেকে পতাকা চেয়ে নেন আর বয়স্কদের থেকে প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। ওকে চুমুতে ভরিয়ে দেয় শিশু বা বৃদ্ধ। যুবরা ভেসে যান বাংলার এই দামাল ছেলেকে নিয়ে।
এখানেই সার্থকতা পেয়ে গিয়েছেন অভিষেক। জন প্লাবন নব জোয়ারে। মানুষের ভিড়ে ভেসে যাওয়াটাই তো চাইছিলেন অভিষেক। যেটা পাওয়া সফল রাজনীতির শর্ত আর যে কোনও নেতার কাছে ঈর্ষার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.