Advertisement
Advertisement
Screen Time

স্ক্রিনে ভাসা জ্ঞানবাচক ‘উপদেশ’ আসলে সংশয়ী করে তোলে

ভারতীয়দের গড় ‘স্ক্রিন টাইম’ দৈনিক ৭ ঘণ্টার সামান্য বেশি।

A write up about Indians' screen time
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 17, 2024 3:57 pm
  • Updated:October 17, 2024 3:57 pm  

সস্তা, চটকদার, ভাসা-ভাসা বাক্যে সাজানো নানা উপদেশ আমাদের ‘স্ক্রিন টাইম’ জুড়ে ভেসে বেড়ায়। আমাদের সংশয়ী ও সন্দেহপ্রবণ করে।

৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। বিশ্বের গড় ‘স্ক্রিন টাইম’। মানে, প্রতিদিন একজন যে-সময়টুকু কাটায় তার স্মার্টফোনের সঙ্গে। সামান্য পুরনো একটি তথ্য বলছে– ভারতীয়দের গড় ‘স্ক্রিন টাইম’ ৭ ঘণ্টার সামান্য বেশি। এতে ই-কর্মাস থেকে টিউটোরিয়াল থেকে সিনেমা দেখা– অনেক রকমের কর্মকাণ্ড শামিল থাকতে পারে, তবে ‘স্ক্রিন টাইম’ বলতে মুখ্যত ধরে নেওয়া হয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যয় করা সময়কে। ইদানীং স্ক্রিন টাইমে প্রায় ভেসে ওঠে আশ্চর্য কিছু জ্ঞানবাচক চেতাবনি। সেটা কখনও রিল হয়ে, কখনও-বা নিউজ হিসাবে।

Advertisement

যেমন, ‘কী করে ঝগড়ায় সবসময় জিতবেন? রইল ৫টি গোপন টিপ্‌স’। যেমন, ‘কী করে টক্সিক মেয়েদের সহজে চিনে নেবেন? রইল ৪টি লক্ষণ। এর মধ্যে শেষটি জেনে আপনি স্তম্ভিত হয়ে যাবেন’। যেমন, ‘কী করে বন্ধুবৃত্তে লুকিয়ে থাকা শত্রুকে চিনতে পারবেন। জেনে নিন ৬টি উপায়’। এ যেন নেশার মতো, নিশির ডাকের মতো। একবার ক্লিক করার অপেক্ষা। তারপর ভেসে যাওয়া স্রোতে। অধিকাংশ সময়ই গূঢ়, প্রকৃত, মনকে উদ্ভাসিত করার মতো তথ্য জানতে পারা যায় না। মহাদেশসদৃশ এমন ভূখণ্ড আবিষ্কৃত হয় না, যেখানে পা দিতে না-পারলে জীবন বৃথা হয়ে যাবে। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব চেতাবনি গর্ভস্রাবের নামান্তর। সস্তা, চটকদার, ভাসা-ভাসা বাক্যে সাজানো এসব উপদেশ আমাদের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়। আমাদের করে তোলে বাস্তববিচ্ছিন্ন। এই ধরনের পরামর্শ জীবনকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় মোহিত করে তোলে।

এবার দু’টি প্রশ্ন। প্রথমটি, কারা এই ধরনের রিল বা নিউজের উপভোক্তা? দ্বিতীয়টি, উপভোক্তা যারা-ই হোক, তারা কি এসব চেতাবনির অন্তঃসারশূন্য ছবিটা ধরতে পারে না? এরপর দোষ সার্বিকভাবে এসে পড়ে ডিজিটাল মিডিয়ার বাণিজ্যকৌশল ও আগ্রাসী প্রচারের উপর। কিন্তু ত্রুটির কথা উঠলে, সমীক্ষণের প্রশ্ন তুললে, আমাদের নজর ঘোরাতে হবে সংস্কৃতির অবমূল্যায়নের দিকে। যার সঙ্গে লতায়পাতায় জড়িয়ে আছে ব্যক্তিমানুষের খেয়ালখুশি। ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল’-এর বিখ্যাত তাত্ত্বিক থিওডোর অ্যাডোর্নো এই প্রবণতাকে বলেছিলেন ‘সিউডো-ইন্ডিভিজুয়েশন’।

এমনিতে ‘ইন্ডিভিজুয়েশন’ কথার অর্থ হল, স্বতন্ত্র মানুষ হয়ে ওঠা– বোধ ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটিয়ে। কিন্তু এর আগে যখন ‘সিউডো’ কথাটি যোগ হচ্ছে, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না, আসলে থিওডোর অ্যাডোর্নো মুচকি হেসে প্রশ্ন করছেন– ‘স্বতন্ত্র’ হতে চাওয়ার বাজারচালিত বাহারি মানসিকতাকে। ‘মার্কেট’ কী করে আমাদের মধ্যে এই ফঁাপা, মেকি, চালবাজিসর্বস্ব স্বাতন্ত্রে্যর ধারণাকে ঢুকিয়ে দিতে চায়? সেই উপলক্ষটি হল ‘ফ্রি চয়েস’। ডিজিটাল মিডিয়ায় বিনোদনের অজস্র উপকরণ ছুটে বেড়াচ্ছে অষ্টপ্রহর। সেসবের সম্মোহনী শক্তি উপভোক্তার মনে ‘সিউডো-ইন্ডিভিজুয়েশন’ তৈরি করে। উপভোক্তা ভাবতে শুরু করে– যেসব তথ্যের সংস্পর্শে সে আসছে, তা তাকে স্বাতন্ত্র্য অর্জনে সহায়তা করবে। কারও সর্বনাশ, কারও পৌষমাস হয়তো একেই বলে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement