বব ডিলান, অ-জানা পেন্টিং, ৫৫ বছরের বেশি পুরনো: এমন সামগ্রীর দাম নিলামে আকাশছোঁয়া হবেই। কিন্তু এত দিন কোথায় ছিল এটি?
নাকের বদলে নরুন নয়। এ হল ‘ছবি’-র বদলে ভাগ্যগণনা। ‘ছবি’ বললে অবশ্য শিল্পের ঘরানাটিকে চিনতে অসুবিধা হতে পারে। টু বি প্রিসাইস, চিত্রশিল্প। অর্থাৎ পেন্টিং। সদ্য বব ডিলানের (Bob Dylan) একটি পেন্টিং নিলামে চড়েছিল ১ লক্ষ মার্কিন ডলারে। আর, সেই চিত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কপাল পরখের বিষয়টি।
পেন্টিংটি উডস্টকে থাকার সময়ে আঁকা। মোটর সাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট থেকে তখন সেরে উঠছেন বিশ্ববিশ্রুত সংগীতশিল্পী। ১৯৬৮ সাল। নির্জনতা ছিল, অবকাশ ছিল, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য ছিল গৃহকোণের নিরবচ্ছিন্ন প্রশ্রয়। সেই সময়, বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, শ’-খানেকের বেশি গান লিখেছেন ডিলান, যা একত্রে ‘বেসমেন্ট টেপ’ বলে পরিচিত। আর, ছবি-ও এঁকেছেন। আলোচ্য চিত্রশিল্পটি সেই সময়ের জাতক। পেন্টিংয়ের রংবাহার চোখে পড়ার মতো। উজ্জ্বল বর্ণচ্ছটায় আলাদা করে প্রতিভাসিত হচ্ছে ষাঁড়ের বাঁকানো শিং, বো-টাই, একজোড়া চোখ, আর অবশ্যই টুপি পরিহিত একজন মানুষের মুখাবয়ব। ‘মিউজিক্যাল সিম্বলস’ আছে। আছে লাল রঙের চোখে পড়ার মতো প্রয়োগ। যে-মানুষটির মুখ আভাসিত, তিনি কি স্বয়ং ডিলান? চোখ দু’টি কি কোনও সর্বদ্রষ্টার? স্পষ্ট করে উত্তর মেলে না এসব কৌতূহলের। চিত্রবিশারদরা আপাতত এই পেন্টিংকে ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট’ শৈলীর বলেই চিহ্নিত করতে আগ্রহী।
এটি কি বিক্রি করার জন্য এঁকেছিলেন ডিলান? না। খবরে প্রকাশ, স্যান্ডি লেপান্তো বলে কোনও নারীর জন্য এঁকেছিলেন পেন্টিংটি। স্যান্ডি, উডস্টকেরই বাসিন্দা, ছিলেন ডাকসাইটে সুন্দরী। আর, তাঁর ছিল মিস্টিক-বোধ। জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রগাঢ় আগ্রহ ছিল। অন্যের ভাগ্যগণনা করে দিতেন। ডিলানের সৃষ্টিসমূহ নিয়ে নিবিড় গবেষণা করেছেন আনে মার্গারেট ড্যানিয়েল। তাঁর মতে, উডস্টকের তৎকালীন সংস্কৃতির সঙ্গে ডিলানের কার্যধারার মিল আছে। সে-সময় অনেকেই, তাঁদের প্রতিভা ও কুশলতার প্রকাশ ঘটেছে যেসব শিল্পসামগ্রীতে, সেগুলি বিক্রি না-করে ‘এক্সচেঞ্জ’ করতেন। পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে অন্যের দক্ষতা ও পারদর্শিতার আঁচ পোহাতেন। ফলে, ডিলান যদি কারও জন্য এমন একটি পেন্টিং করে তাঁকে প্রদান করেন, আর বিনিময়ে সেই মানুষটির পারঙ্গম-বিদ্যার প্রতি মুখাপেক্ষী থেকে কিছু প্রত্যাশা করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
পেন্টিংটিতে বব ডিলানের ‘সিগনেচার’ আছে। এটি ‘ফেক’ নয়, সে-ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ-মুক্ত। বহু দিন লাপাতা থাকার পরে স্যান্ডি লেপান্তোর প্রাক্তন স্বামীর এস্টেট থেকে সম্প্রতি চিত্রশিল্পটির সন্ধান মিলেছে। বব ডিলান, অ-জানা পেন্টিং, ৫৫ বছরের বেশি পুরনো: এমন সামগ্রীর যে নিলামে আকাশছোঁয়া দাম উঠবে, বলা বাহুল্য। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ‘মূল্যবান’ হয়তো এসব প্রশ্ন: নিজের ভাগ্য নিয়ে কী জানতে চেয়েছিলেন বব ডিলান? যা জানতে চেয়েছিলেন, সদুত্তর পেয়েছিলেন তার? বাস্তবে মিলেছিল কি জ্যোতিষ-বাক্য?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.