Advertisement
Advertisement
R G Kar

পুজো এবং প্রতিবাদ ভিন্ন

পুজোর সমারোহে রাজনীতির ছোঁয়া না আনাই ভালো।

A few political influencer behind the curtain instigates not to take financial help in Durga Puja in the context of R G Kar incident
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 4, 2024 10:12 am
  • Updated:September 4, 2024 10:12 am

প্রতিবাদের অনেক ক্ষেত্র অাছে, অনেক পথ আছে। যে যেভাবে খুশি প্রতিবাদ করুন। ‘জাস্টিস’ না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই থামবে না। কিন্তু পুজো পুজোর মতো হোক। পুজোর সমারোহে রাজনীতির ছোঁয়া না আনাই ভালো। লিখছেন কিংশুক প্রামাণিক

আর জি করে মর্মান্তিক কাণ্ডের প্রতিবাদে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান না নেওয়ার কথা বলছে পর্দার আড়াল থেকে কিছু রাজনৈতিক লোক। সোশ‌্যাল মিডিয়ায় প্রবল প্রচারও চালানো হয়েছে। যদিও তাদের ইচ্ছাপূরণ হচ্ছে না। অনুদান পাওয়া ৪৩ হাজার পুজোর মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র চার-পাঁচটি ক্লাব ছাড়া এই ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। বরং গতবারের চেয়ে এবার পুজো অনুদান পাওয়া পুজো কমিটির সংখ্যা বাড়তে পারে বলে সরকারি সূত্রে খবর।

Advertisement

যারা অনুদানে ঘা দিয়ে সরকারকে অাঘাত করতে চাইছে– তাদের জেনে রাখা উচিত, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে অাছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় দেড় মাস ধরে। এই উপার্জনই অনেকের সারা বছরের রুজি-রোজগার। একজন ফুটপাতের হকার থেকে মণ্ডপ নির্মাণকর্মী– প্রান্তিক মানুষের ভরসা শারদোৎসব। যত পুজো, তত তাদের লাভ। তাই পুজোর সমারোহে রাজনীতির ছেঁায়া না অানাই ভাল। পুজো অামার, অাপনার, সবার। প্রতিবাদের অনেক ক্ষেত্র অাছে, অনেক পথ অাছে। যে যেভাবে খুশি প্রতিবাদ করুন। ‘জাস্টিস’ না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই থামবে না। কিন্তু পুজো পুজোর মতো হোক।

[আরও পড়ুন: পথ অবরোধের চেষ্টায় বাধা দিতেই মহিলা ডিএসপির চুলের মুঠি ধরে টান বিক্ষোভকারীর!]

ধর্ষণ সমাজের অভিশাপ। মানবজাতির অাদিমতম অপরাধ। যুগ-যুগান্তরে সমাজের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু অামরা এই অাঘাত থেকে বেরিয়ে অাসতে পারিনি। এক শ্রেণির পশু সমাজে ঘাপটি মেরে অাছে। প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে তারা যা খুশি করতে পারে। তাই প্রতিদিন শহরে-গ্রামে পাশবিক ঘটনা ঘটে। প্রচারের অভাবে হারিয়ে যায় হতভাগ্যের অসহায় কান্না। কিন্তু কখনও কখনও কোনও ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়ে যায়। তেমনই এক সাংঘাতিক কাণ্ড ৯ অাগস্ট ভোর রাতে আর জি কর হাসপাতালের ভিতর ঘটে। মানুষের ক্ষোভে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক কন্যাটির পরিণতি সমাজের সব স্তরের মানুষের মনে ক্ষত তৈরি করেছে। সবার মনে ব্যথা। তাই এত প্রতিবাদ, এতরকম পেশার মানুষের প্রতিবাদে অংশগ্রহণ। তিন সপ্তাহ অতিক্রান্ত, ঘাতকের সাজার জন্য মানুষ অপেক্ষায়।

এই চেতনা, অনুভূতি, দায়িত্ববোধ একটি সুষ্ঠু সমাজের বার্তা বহন করে। বাঙালির বিবেক মরুভূমি হয়ে যায়নি। বরং তারা হারিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ থেকে মণিপুর, মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্রের মানুষকে। হাথরস, বিলকিস, বদলাপুরের বর্বরোচিত অত্যাচার, কুস্তিগির সাক্ষীর সাংঘাতিক পরিণতির পরও সেই রাজে্যর মানুষ এভাবে পথে নামেনি। মণিপুরে মহিলাদের নগ্ন প্যারেড, প্রকাশে্য যৌনাঙ্গে অাঘাতের পরও তাদের সমাজে প্রতিবাদের ঝড়টি এমন রূপ নেয়নি। কিন্তু বাংলার বিবেক অাজও কতটা জাগ্রত তা গোটা দেশকে দেখিয়ে দিল। নবজাগরণ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, চিরদিন সন্ধিক্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছে এই রাজ্য, অাবারও অামরাই এগিয়ে এলাম।

[আরও পড়ুন: প্রতিবাদে হাসি কেন? প্রশ্ন উঠতেই স্বস্তিকার পালটা, ‘পিরিয়ড হলে…’]

মানুষের প্রতিবাদের সেই অভিঘাতের জেরে মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় যে ‘ধর্ষণ-খুনের শাস্তি মৃতু্যদণ্ড’ বিলটি পাশ হল, তাও নজিরবিহীন। দেশকে পথ দেখাল বাংলা। জোর করে জমি নেওয়ার ব্রিটিশ অাইন যেভাবে বাতিল করে নতুন জমি নীতি তৈরিতে পথ দেখিয়েছিল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মানুষ, ঠিক তেমনই নজির হয়ে রইল ‘অপরাজিতা’ বিল। শত বৈরিতা সত্ত্বেও শাসক দল তৃণমূলের অানা প্রস্তাবে সায় দিতে বাধ্য হল বিরোধী দল বিজেপি।
এখন অামাদের প্রশ্ন সিবিঅাই অফিসারদের কাছে– অার কত দিন সময় নেবেন অাপনারা? অার কত দিন মিছিল করে জাস্টিস চাইবে মানুষ? অার কত দিন সহপাঠীকে হারানোর কষ্ট ভোগ করবেন জুনিয়র ডাক্তাররা? এবার নির্যাতিতার সব হারানো মা-বাবার বিচার দিন। অার. জি. কর হাসপাতালের প্রশাসনিক দুর্নীতি খঁুজে বের করে চোরেদের সাজা দেওয়ার অনেক সময় হাতে পড়ে থাকবে। কিন্তু ‘অপরাজিতা’-কে একজন, না কি একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ এবং খুন করল, সেই তদন্ত কোথায় গেল! ফোকাস কেন হারিয়ে যাচ্ছে? যত দিন খুনিরা সাজা না পাবে অামাদের বুকের জ্বালা যাবে না।

দুর্গাপুজো বাঙালির জীবনে এক প্রবাহের মতো। অধীর অাগ্রহে অামরা সবাই শরতের মাঠে কাশফুল দেখার অপেক্ষায় থাকি। এই উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে যেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়, তেমনই এই উৎসব সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করে। সরকার যে অনুদান দেয় তা কোনও ব্যক্তির কাছে যায় না, এটা সমষ্টিগত বিষয়। উৎসব-পরবকে উৎসাহ দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই কাজটাই করে।

পুজো মানে নতুনের উৎসব। সুপ্রাচীন কাল থেকে সেই ধারা চলছে। নতুন জামা-কাপড়, নতুন গান, নতুন সিনেমা, নতুন প্রেম। জীবনকে নতুন করে শুরু করার নামও পুজো। সবাই সেই অায়োজনে অংশ নেয়। এই পরম্পরায় পুজো ক্রমশ হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। কালক্রমে থিমের পুুজো এক নতুন পর্ব রচনা করেছে। মৃৎ ও কারুশিল্পের এক নতুন ধারার সূচনা এই থিম থেকেই। মা দুর্গার উপস্থিতি অার-পঁাচটা দেবদেবীর মতো নয়। তঁার ভিতরে এক ‘কন্যারূপেণ’ মহাশক্তির বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। তঁার সপরিবার মর্তে অাগমন, অসুর দমন, সমাজে অভয়া শক্তির জাগরণ ঘটায়। তিনি দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করেন।

কাজেই পুজো শুধু একটি ধর্মীয় পরব নয়, এক মহামিলনমেলা। মানুষের উৎসব। সিপিএম অামলে কমিউনিস্ট নেতৃত্ব অাদর্শগত কারণে পুজো উপাচারের উল্টোপথে হঁাটলেও ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণের জন্য পুজোর বিরুদ্ধে কখনও যায়নি। বরং পুজোর ক’টা দিন জনসংযোগের উপর জোর দিত তারা। বারোয়ারি পুজোগুলিতে পিছন থেকে থাকত। কিন্তু মমতা বন্দে্যাপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পুজোয় সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ঘটে। সরকারই নিজে পুজোকে প্রোমোট করে। অনেকগুলি নতুন কাজ মমতা করেছেন। এক, বারোয়ারি তথা সর্বজনীন পুজোগুলির অ্যাকাউন্টে সরাসরি অনুদান। যা প্রতি বছর বাড়ছে। এ-বছর ৮৫ হাজার। অাগামী বছর হবে ১ লক্ষ। সঙ্গে বিদ্যুৎ-সহ নানা বিষয়ে ছাড়। দুই, শয়ে-শয়ে পুজোর উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তিন, পুজোশেষে কলকাতা ও জেলায় শোভাযাত্রাকে কার্নিভালের রূপ দেওয়া। কলকাতার রেড রোডের কার্নিভাল কলকাতার সৌন্দর্যে নতুন অধ্যায়।

দুর্গাপুজোয় প্রায় ৪৩ হাজার ক্লাবকে অনুদান দেয় রাজ্য সরকার। কোনও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়, মূলত বারোয়ারি পুজোয় এই অর্থ দেওয়া হয়। এক-একটি পুজোর সঙ্গে ৫০ থেকে হাজারখানেক মানুষ যুক্ত থাকে। মমতা বন্দে্যাপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম অনুদান চালু হয়। কলকাতার বড় বাজেটের পুজোর কাছে হয়তো এই ৮৫ হাজার টাকা কোনও টাকাই নয়। কিন্তু সবার পুজো তো আর বড় বাজেটের নয়। চঁাদা তুলে চালাতে হয়। সরকারি অনুদান চালু হওয়ার ফলে বহু পুজো উদে্যাক্তার মুখে হাসি ফুটেছে। এমনও অনেক পুজো অাছে অনুদানের টাকা না পেলে বন্ধ হয়ে যেত। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনুদান চালু হওয়ার পর চাঁদার জুলুমের অভিযোগও অনেক কমে গিয়েছে। অার জি করের ঘটনার পর প্রতিবাদের নানা ধরনের মধ্যে হঠাৎ করে অনুদান না-নেওয়ার প্রচার শুরু হয় সোশ‌্যাল মিডিয়ায়। সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও পরোক্ষে চাপ তৈরির চেষ্টা হয় পুজো কমিটির ভিতরে। অনুদান ফেরানো নিয়ে অনেক পুজো কমিটিতে অালোচনাও হয়। কেউ অবশ্য ফঁাদে পা দিতে চায়নি। দিনের শেষে সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, পুজো ও প্রতিবাদ এক নয়।

আর জি কর বিচার পাক। পুজোও হোক।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement