মিত্র ‘ক্যাশলেস’ কারে কয়?

সকলেই বলছেন ক্যাশলেস৷ তোপ দেগে কেউ বলছেন বেসলেস৷ ছাপোষা মধ্যবিত্তের কাছে পুরো ব্যাপারটাই হোপলেস৷ কেউ কেউ বুঝেই উঠতে পারছেন না কী করলে কী হবে? উপায় বাতলালেন সুপর্ণা মজুমদার৷

হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত৷ টাকা নিয়ে এত যে হবে মাথার ব্যামো, আগে কি কেউ জানত? জানলে আর মাস পয়লার দিনে এটিএম-ব্যাঙ্কে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হত না৷ বাজারের থলেটা অত হালকা হত না৷ এটা নেই, ওটা নেই শুনে গিন্নির খোঁটাও শুনতে হত না৷ মানিকতলা বাজারে অত সুন্দর ইলিশ মাছটা শুধু কানকো টিপে দেখেই ফিরে আসতে হত না৷

হায় রে বিধাতা, টাকা থেকেও নেই! এই ‘নেই’ রাজ্যের উপায় কী?

বড়বাবুদের এই মনের কথা বুঝেই হয়তো উপায়টা দিনকয়েক আগে বাতলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ‘ক্যাশলেস’ লেনদেন৷ ক্যাশলেস? চায়ের দোকানের আড্ডায় অফিসের নতুন ছোকরাটির মুখে শব্দটা শুনে এই প্রতিক্রিয়াই ছিল বড়বাবুর৷ এত বছরের সার্ভিস লাইফে এই প্রথম শুনলেন৷ খায় না মাথায় দেয় কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না৷ কিন্তু, দু’দিনের ছোকরার কাছে কি আর মুখ ফুটে কথাটা জিজ্ঞেস করা যায়? না, একেবারেই না! কিন্তু ক’দিন আর এভাবে চলবে? জানতে হবেই৷ বাড়ি এসেও মাথায় ‘ক্যাশলেস’ শব্দটাই ঘুরপাক খেতে লাগল৷ প্রশ্নটা শুধু ‘বড়বাবু’দেরই নয়, প্রশ্নটা এখন আমার, আপনার এবং প্রায় সবারই৷ এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে গিয়ে সামনে এল ক্যাশলেস লেনদেনের এই পাঁচ উপায়৷

ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (UPI)- ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মোবাইলে এসএমএস পাঠানোর মতোই সহজ এই উপায়৷ এর জন্য কী করতে হবে?

• আপনার ব্যাঙ্কের এটিএম-এর সঙ্গে নিজের মোবাইল নম্বরটি রেজিস্টার করে নিন৷
• ইপিআই অ্যাপটি নিজের মোবাইল নম্বরে ডাউনলোড করে নিন৷
• নিজের একটি ইউনিক আইডি তৈরি করুন৷
• নিজের ইউপিআই পিন সেট করে নিন৷
• তারপর এর মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনগুলি করে নিতে পারবেন আপনি৷ প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য ব্যক্তিকে টাকাও পাঠাতে পারবেন৷

ই-ওয়ালেট – শুধু মোবাইল নয় আপনার কম্পিউটারের মাধ্যমেও এই উপায়ে লেনদেন করা যাবে৷ এর জন্য

• নিজের সুবিধামতো একটি ই-ওয়ালেট সার্ভিস ডাউনলোড করে নিন৷
• সেখানে নিজের মোবাইল নম্বরটি রেজিস্টার করুন৷
• তারপর তা নিজের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিন৷
• সিনেমা হল থেকে রেস্তোঁরা সব জায়গায় এখন ই-ওয়ালেটের চাহিদা বেড়েছে৷ যখন প্রয়োজন হবে শুধু রিচার্জ করে নেবেন৷

পয়েন্ট অফ সেল (PoS), কার্ড: এই ব্যবস্থার সঙ্গে কমবেশি অনেকেই পরিচিত৷ এর জন্য কোথাও কোনও রেজিস্টার করতে হবে না আপনাকে৷ কখনও কোনও কেনাকাটার দরকার পড়লে৷

• নিজের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডটি মেশিনে সোয়াইপ করুন৷
• সেট করা পিন নম্বর দিন৷
• তারপর স্লিপ বের হলে তাতে স্বাক্ষর করে দিন৷
• শুধু দেশে কেন, দেশের বাইরেও এই ব্যবস্থার মাধ্যমের লেনদেনের নানা সুবিধা পাওয়া যায়৷

আধার এনাবেলড পেমেন্ট সিস্টেম (AEPS) – আধারের আধারেই নগদহীন লেনদেন করতে পারবেন এবার৷ এর জন্য

• নিজের আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি সংযুক্ত করে নিন৷
• এরপর নিজের আধার নম্বরটি মনে রাখবেন আর আধারের একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখবেন৷
• আর যে ব্যাঙ্কের সঙ্গে আধার কার্ডটি সংযুক্ত করেছেন তার নাম মনে রাখবেন৷

আধার বায়োমেট্রিকে দেওয়া ফিঙ্গার প্রিন্টই এই লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনার পরিচয়ের সাক্ষী হবে৷ এর জন্য কোনও রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই৷ শুধু লেনদেন নয় টাকা তোলা, জমা ও ট্রান্সফারও এই সিস্টেমের মাধ্যমে করতে পারবেন৷

আনস্ট্রাকচার্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা (USSD) – এর মাধ্যমে মোবাইল টু মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফারও করতে পারবেন৷ শুধু

• নিজের মোবাইল নম্বরই নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিন৷
• ফোন থেকে *99# ডায়াল করুন
• আপনার ব্যাঙ্কের শাখার  IFSC কোড দিয়ে পরিচিতি দিন৷
• মেনু থেকে ফান্ড ট্রান্সফার-MMID সিলেক্ট করুন৷
• গ্রহিতার MMID ও মোবাইল নম্বর দিন৷

ট্রান্সফার অ্যামাউন্ট ও নিজের MPIN দিন, একটা স্পেস দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বরের চারটি সংখ্যা লিখবেন৷ আর আপনার টাকা পৌঁছে যাবে গন্তব্যে৷

এর জন্য স্মার্টফোন কিংবা মোবাইলে ইন্টারনেটেরও প্রয়োজন নেই৷