অরুন্ধতী রায়চৌধুরী: পালটেছে বিরোধী, পালটেছে ক্ষমতা, অমর একুশে, নজরে সেই মমতা। গত ৩০ বছর ধরে মমতা এবং একুশে জুলাই যেন সমার্থক। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের থেকে এবছরের একুশে জুলাই একটু আলাদা। কারণ, এই মহাসমাবেশের দু’দিন আগেই বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোটের বৈঠক বসেছে কন্নড়ভূমে। উপস্থিত ছিলেন অসুস্থ কংগ্রেস ‘সুপ্রিমো’ সোনিয়া গান্ধী। আর সেই বৈঠকেই মধ্যমণি ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আসমুদ্রহিমাচলের প্রায় সব বিজেপি বিরোধী দলের নেতারা যোগ দিয়েছিলেন। সবাইকে অবাক করে কেন্দ্রের শাসকের বিরুদ্ধে এক হয়েছে ২৬টি দল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সব আঞ্চলিক দল এক হয়েছে। সহমত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নাম ‘ইন্ডিয়া’য়। বৈঠকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা ঈর্ষণীয়। শেষ পর্যন্ত মমতার ডাকেই সিলমোহর দিল বিরোধী জোট। “জোট চাই”, বলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি সকলের আগে ডাক দিয়েছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন এই একুশের মঞ্চ থেকেই, বলেছিলেন দিল্লি চলো। এই বৈঠকের প্রেক্ষিতেই আগামিকাল একুশে জুলাই। তৃণমূলের (TMC) বাৎসরিক সভা। যাঁরা তৃণমূলের নেতা-কর্মী তাঁদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন।
১৯৯৩ সালের মহাকরণ অভিযানে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু থেকে বহু উত্থান-পতন পেরিয়ে আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বলা যেতেই পারে মমতা তাঁর লক্ষ্যে সফল। ৩৪ বছর বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে আজ বামকে বিধানসভায় শূন্য করে দিয়েছে। একযুগ ধরে চলছে মমতার সরকার। তিন-তিনবার বিধানসভা, পঞ্চায়েত জয়ের হ্যাট্রিক। এবার একুশের ৩০ বছর পূর্ণ হবে। দলে দলে লোক আসবে। শাসকদল মনে করছে ভিড়ের রেকর্ড গড়বে বৃষ্টিস্নাত কলকাতার রাজপথ। এই কথাগুলি সমাবেশের প্রেক্ষিতে ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। কারণ, আজ অবধি কোনও একুশে জুলাই ফ্লপ হয়নি। এমনকী মমতার চরম দুর্দিনেও নয়। ২০০৪ সালে লোকসভা ভোট একা জিতেছিলেন মমতা। তবু জনস্রোত দেখেছিল শহিদ দিবস। ২০০৬ সালের বিধানসভা বা ২৩৫, তৃণমূল মাত্র ৩০। তবুও মানুষ একুশে জুলাইতে মানুষ দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন।
সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে কপ্টার দুর্যোগের জন্য দু’টি সভার বেশি প্রচার করতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিন্তু প্রথম সভাতেই তিনি পরিষ্কার করে দেন তাঁর পাখির চোখ ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন। বলেছিলেন, দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপি সরকারকে না সরাতে পারলে শেষ হবে না বাংলার অর্থনৈতিক অবরোধ। একশো দিনের কাজ থেকে নানা প্রকল্পে কেন্দ্রের অর্থের বঞ্চনা করার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন মমতা। সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রের ‘বাংলা বিরোধী’ মানসিকতার বিরুদ্ধে। সুর চড়িয়েছিলেন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি থেকে জিএসটি-সহ একাধিক ইস্যুতে। সেই প্রেক্ষিতে একুশের সভা থেকে মমতা কী বলবেন, তা খানিক স্পষ্ট।
আরও একটি রাজনৈতিক দিক আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিরোধী জোটের যা পরিসংখ্যান তাতে কংগ্রেস এককভাবে ম্যাজিক ফিগার পার করতে সক্ষম হবে না। সেই প্রেক্ষিতে ২৬ দলের মিলিত শক্তির উপরেই ভর করে আছে ‘ইন্ডিয়া’। যার যত বেশি আসন তার তত বেশি গুরুত্ব। তাই মমতা নিজের অঙ্ককে পরিপাটি করে রাখতে নেমে পড়েছেন। বরাবরের মতো বিয়াল্লিশে ৪২ তাঁর লক্ষ্য। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই একুশের মঞ্চ (Shahid Diwas 2023) থেকে বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশের শপথ নেবেন মমতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.