চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বিশ্বজুড়ে শুধু হ্যালোউইন ডে পালিত হয় না, হিন্দুশাস্ত্র মতে বছরে একবার ভূত চতুর্দশীও আসে। যাকে ভূতদিবস বললে ভুল হয় না। সেই ভূত চতুর্দশীর রাতে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় আসানসোলের ভূতপিশাচদের। এদিন তেনাদের মদ-মাংসের ভোগ দিয়ে ফের পরেরদিন মন্ত্র বলে বেঁধে ফেলা হয় গাছের সঙ্গে। ৭০ বছর ধরে এই পরম্পরায় পুজো হয়ে আসছে আসানসোলের মহিশীলা কলোনিতে।
আসানসোলের মহিশীলা ১ নম্বর কলোনিতে পিয়ালবেড়া শ্মশানের বটগাছে নাকি ভূতদের বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন বামাক্ষ্যাপার অন্যতম প্রধান শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য। প্রায় সত্তর বছর আগেকার এই ঘটনা। বনমালীবাবু আজ আর নেই। তবে নাকি রয়ে গিয়েছে ভূতের দল। ভূত চতুর্দশীর রাতে তাদের কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। বলা চলে বাঁধন ছাড়া করা হয়। আর কালীপুজোর রাতে ফের বন্দি করা হয় অপদেবতাদের।
[জিএসটি জট ও আইনের প্যাঁচে বিলুপ্তির পথে হাওড়ার বাজি শিল্প]
বহুবছর আগে আসানসোলের রায় পরিবারের জমিদার জমি দান করেছিলেন তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্যকে। নদিয়ার নিবাসী বনমালী ভট্টাচার্য বামাক্ষ্যাপার শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন মাত্র ৭ বছর বয়সে। সেই তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্যকে আশ্রম করে সাধনা করার জন্য মহিশীলার পিয়ালবেড়া শ্মশানে জমি দান করেছিলেন আসানসোল গ্রামের রায় পরিবার। তখন পিয়ালবেড়া শ্মশান ছিল জঙ্গলে ভরা নির্জন এক স্থান। ভূতদের খুব উপদ্রব ছিল তখন। রাতে কারও মৃত্যু হলে ভয়ে শ্মশানে নিয়ে যেতে পারতেন না বাসিন্দারা। অপেক্ষা করতে হত সকালের জন্য। সেই নির্জন স্থানে সাধনা শুরু করেন বনমালীবাবু।
[ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে আজও অমলিন পাথুরিয়াঘাটা সর্বজনীনের কালীপুজো]
শুধু তাই নয়, এলাকায় যাতে অনিষ্ট করতে না পারে তাই সমস্ত ভূতদের একটি গাছে তিনি বেঁধে রেখে দিয়েছিলেন। সময় বদলেছে। পিয়ালবেড়া থাকলেও, আর শ্মশান নেই। সেই আশ্রমের মন্দির রয়ে গিয়েছে। আজও আছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। বনমালিবাবুল মারা গিয়েছেন, বহু বছর হল। বর্তমানে তাঁর ছেলে শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন ভূত চতুর্দশীতে সেখানে কালীপুজো করা হয়। মায়ের বীজমন্ত্রের পুজো হয়। শিবাভোগ ও ভৈরব ভোগ দেওয়া হয় পুজোর পরে। সেই ভোগ থাকে মদ ও মাংস। আর কালীপুজোর পরে সেই ভূতদের মন্ত্র বলে বেঁধে দেওয়া হয় গাছের সঙ্গে। ভূত চতুর্দশীতে এটাই নাকি পরম্পরা এখানকার। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে হ্যালোউইন ডে নিয়ে মাতামাতি করা হয়৷ কিন্তু এদেশে ভূত চতুর্দশী রয়েছে তা জানা নেই এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের। বছরে একটা দিন অন্তত বোঝা যায় বিশেষ দিন রয়েছে হিন্দু শাস্ত্রে।’’
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.