দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: বাংলার ১২৯৯ সাল। চুঁচুড়া তামলিপাড়ার গৃহবধূ সত্যময়ী দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়ির কাছ দিয়েই বয়ে যাওয়া গঙ্গা ঘাটে ছুটে যান। স্বপ্নাদেশ মতো গঙ্গাঘাট থেকে তুলে আনেন এক খণ্ড নিমকাঠ। ওই একই দিনে মায়ের ইচ্ছায় স্বপ্নাদেশ পান চুঁচুড়া পেয়ারাবাগানের আরেক ব্যক্তি। সেইমতো সত্যময়ী দেবীর বাড়িতে হাজির হন তিনি। ওই ব্যক্তিকে মা স্বপ্নে আদেশ দিয়েছিলেন ৯ টাকার বিনিময়ে তাঁর প্রতিমা তৈরি করতে। দৈব নির্দেশ মেনে ৯ টাকায় দক্ষিণা কালীর মূর্তি তৈরি করেছিলেন ওই ব্যক্তি। কথিত আছে মায়ের মূর্তি তৈরির পরই সাধক বামাক্ষ্যাপা একদিন নৌকায় চুঁচুড়ার তামলিপাড়ার গঙ্গাঘাটে এসে নামেন। তারপর গঙ্গাঘাট থেকে পায়ে হেঁটে সত্যময়ী দেবীর বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিলেন। সেদিন সত্যময়ী দেবীর বাড়িতে ক্ষ্যাপা ছেলেই মায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজও তামলিপাড়ার সেই বাড়িতে সাধক বামাক্ষ্যাপার প্রতিষ্ঠিত মায়ের প্রতিমার নিয়মিত পুজোপাঠ হয়।
[পরীক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষকের ভূমিকায়, কালীপুজোর বিচারক দুর্গাপুজোর কর্তারা]
প্রতি অমাবস্যাতে নিয়ম করে হোম-যজ্ঞের পাশাপাশি কার্তিক মাসের অমাবস্যায় আজও রীতিমতো নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে মায়ের পুজো হয়ে থাকে। সাধক বামাক্ষ্যাপার জীবনীতে চুঁচুড়ার তামলিপাড়ার সত্যময়ী দেবীর বাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে। যে বাড়িতে একদিন মায়ের ক্ষ্যাপা ছেলে বামাক্ষ্যাপা পা রেখেছিলেন সেই বাড়িই আজ অবহেলিত। বার্ধক্যের ভারে সে ক্রমশ অবলুপ্তির পথে। কলকাতা ও আশেপাশের বহু মানুষ জানেন না যে তামলিপাড়ার এক অখ্যাত গলিতে এই সত্যময়ী দেবীর বাড়িতে স্বয়ং বামাক্ষ্যাপার পদধূলি পড়েছিল। একইরকমভাবে অবহেলার শিকার সেই ঘাটটি যে ঘাটে বামাক্ষ্যাপার নৌকো ভিড়েছিল।
মায়ের ভক্ত সত্যময়ী দেবী পুণ্যার্জনের জন্য ওই ঘাটে স্নান করতেন। পাড়ার লোক তাকে দাসীপিসি বলে ডাকতেন। তাই পরবর্তীকালে ওই গঙ্গার ঘাটটি দাসীপিসির ঘাট বলে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে গঙ্গার সৌন্দর্য্যায়নের পিছনে বহু অর্থ ব্যয় হচ্ছে অথচ দাসীপিসির ঘাট যেন অবহেলার শিকার হয়ে ক্রমশ অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এলাকার মানুষের দাবি যেখানে সাধক, ঋষি, মনীষিদের সম্মান জানানোর জন্য প্রশাসন বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেখানে ঐতিহাসিক গুরুত্বের বিচারে এই ঘাটকে রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য। সত্যময়ী দেবীর পরিবারের রমা মুখোপাধ্যায় জানান, সাধক বামাক্ষ্যাপা তাঁদের বাড়িতে দু’বার পা রেখেছিলেন। সেই সময় থেকে কালীপুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে। রমাদেবী বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী আজও তাঁরা পুজোটা করছেন। আগামী দিনে কি হবে জানেন না। তিনি জানান, কালীপুজোর দিন পাঁঠাবলির পাশাপাশি চালকুমড়ো বলির প্রথা আছে। তবে পাঁঠাবলির নিয়ম মেনে তাদের তিন মাস বয়সি কোনও পাঁঠাকে বলি দিতে হয়। অনেকে আবার মানত করলে তাদের বাড়িতে এসে পাঁঠাবলি দিয়ে যান। এহেন ঐতিহ্যমণ্ডিত সাধক বামাক্ষ্যাপার পদধূলি ধন্য সত্যময়ী দেবীর বাড়ি একদিন অবহেলায় স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে যাবে না কে বলতে পারে।
[৬০০ বছরের রীতি, কালীপুজোর সকালে এই মন্দিরে মায়ের চক্ষুদান হয়]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.