কালী প্রতিমার চক্ষুদান করছেন চিত্রকর রুবিনা বিবি। ছবি : রঞ্জন মাইতি।
সৈকত মাইতি, তমলুক: চারদিকে যখন হিংসা, বিভেদের রাজনীতি, তখন পাঁশকুড়ায় ফুটে উঠল এক অনন্য সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি। মুসলিম মৃৎশিল্পী গৃহবধূদের হাতেই সেজে উঠল কালীপ্রতিমা। রুবিনা, সুজাতাদের তুলির টানে পাঁশকুড়ায় সেজে উঠছেন দেবী।
পাঁশকুড়ার খণ্ডখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেশববাড় এলাকা। এই গ্রামের চিত্রকর পাড়ার প্রায় ১০ থেকে ১২টি পরিবারের বাস। দীর্ঘকাল ধরেই মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তারা। রুটিরুজির তাগিদে বাড়ির পুরুষরা ইন্দোর, রায়পুর, টাটার মতো ভিন রাজ্যে গিয়ে প্রতিমা গড়ে চলেছেন। রুবিনা চিত্রকর, সুজাতা চিত্রকর, তাপস চিত্রকররা মুসলিম হলেও বংশ পরম্পরায় হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করে আসছেন। তাই বিশ্বকর্মা থেকে শুরু করে দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী- প্রতি পুজোতেই নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন রুবিনা, সুজাতারা। এখানকার মৃৎশিল্পীদের পূর্বপুরুষরা কাপড়ের উপর আঠা দিয়ে কাগজ লাগাতেন। সেই কাগজেই থাকত তুলির টান। নানান দেবদেবীর গল্পগাথা, পৌরাণিক ঘটনা, বন্যা, খরা- তুলির টানে সবই ফুটে উঠত কাগজের মধ্যে। পটচিত্রী হিসেবেও এঁদের খ্যাতি রয়েছে। আগে চিত্রকররা সেই পটচিত্র নিয়েই পাড়ায় পাড়ায় গান শুনিয়ে সংসার চালাতেন। সেসব আর আজকের দিনে খুব একটা দেখা যায় না। তাই প্রতিমা গড়ার কাজকেই বেছে নিয়েছেন এই মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা।
এই প্রসঙ্গে মৃৎশিল্পী সুজাতা চিত্রকর বলেন, “ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আমরা ইদ, মহরম পালন করি। কিন্তু আমাদের সংসার চলে হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করেই। কিন্তু এই পেশাও বর্তমানে সংকটের পথে। কারণ, যেভাবে প্রতিমা তৈরির সামগ্রী বা কাঁচামালের দাম বাড়ছে তাতে সমস্ত কিছু খরচ পুষিয়ে তেমন লাভ থাকছে না। তবুও বাপ-ঠাকুরদাদের পেশাকে আঁকড়ে ধরে কোনওরকমে বেঁচে থাকা। তাই সরকারি যদি কোনও সাহায্য সহযোগিতা মেলে তাহলে খুবই উপকৃত হব আমরা।” এলাকার বাসিন্দা তথা খণ্ডখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সিদ্দিক মল্লিক বলেন, “বহু বছর ধরেই বংশপরম্পরায় এই চিত্রকর পরিবারের সদস্যরা প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। দীর্ঘকাল ধরে গ্রামীণ লোকশিল্পকলার সঙ্গে একাত্মভাবে জড়িয়ে থাকায় এই বাসিন্দাদের পারিবারিক পদবী চিত্রকর হয়ে গিয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.