দেবব্রত দাস, খাতড়া: কথায় আছে, এক রাতের কালীপুজো। তবে দেবী কালীর মূর্তি নয়, চক্রাকারের ত্রিশূলকেই মা কালীরূপে পুজো করে খাতড়ার পাটপুর গ্রামের মাহাতো পরিবার। এক রাতে পুজো হয়। পুজো শেষ হলেই সাঙ্গ হয় বিসর্জনপর্ব। কয়েক ঘন্টার শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরেই এক রাতের জন্য মাতোয়ারা হন পাটপুর গ্রামের বাসিন্দারা।
খাতড়া থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বর্ধিষ্ণু গ্রাম পাটপুর। এই গ্রামের কুর্মি সম্প্রদায়ের এই কালীপুজো। গ্রামের মাহাতো পরিবারের নিজস্ব মন্দিরে লোহার চক্রাকারের একটি ত্রিফলা ত্রিশূলকে কালীপুজোর রাতে পুজো করা হয়। গ্রামের মানুষের কাছে এই পুজো রক্ষাকালীর পুজো নামেই পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাহাতো পরিবারের আদিপুরুষ চণ্ডীচরণ মাহাতো এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। বংশ পরম্পরায় সেই পুজোয় চলে আসছে পাটপুর গ্রামের মাহাতো বাড়ির ঠাকুর মন্দিরে।
[ভূতের আতঙ্ক কাটাতেই মোটর কালীর পুজো শুরু বালুরঘাটে]
মূর্তি পুজোর বদলে কেন এই চক্রাকার ত্রিশূলের পুজো? মাহাতো পরিবারের বর্তমান বংশধর দশরথ মাহাতো বলেন, “এই পুজো আমার ঠাকুরদা চণ্ডীচরণ মাহাতো শুরু করে গিয়েছেন। তিনি কেন চক্রাকারের ত্রিশূলকে কালীরূপে পুজো করেছেন তার ইতিহাস আমাদের কাছে অজানা। তবে লোকমুখে শুনেছি, স্বপ্নাদেশ পেয়েই হয়তো তিনি এমন পুজো করেছিলেন। ঠাকুরদার মৃত্যুর পর বাবা, কাকারা এই পুজো করেছেন। এখন আমরা করছি”।
এই পুজোর অবশ্য অভিনবত্ব রয়েছে। মাহাতো পরিবারের খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির মন্দিরে একরাতের এই পুজো হয়। গ্রামের পাশের একটি খাল থেকে ঘট আনা হয়। সারা রাত ধরে পুজো চলে। ছাগ বলি হয়। পুজো শেষ হলে সূর্যোদয়ের পূর্বেই ঘট বিসর্জন করা হয়। এটাই রীতি এই পুজোর। দশরথবাবু বলেন, “বৈষ্ণব মতে অমাবস্যা তিথি ধরে আমাদের এই পুজো হয়। পুজোটা পারিবারিক হলেও গ্রামের মানুষ ভক্তিভরে পুজোয় অংশ নেন। হাজার দশেক টাকা খরচ হয়। মূর্তি পুজো নিষেধ রয়েছে। তাই আমরা পূর্বপুরুষদের চালু করা এই পুজোয় করে আসছি। পরিবারের সকলে এই পুজো করেন। পাকা মন্দির তৈরির ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অঘটনের আশঙ্কায় আমরা নতুন মন্দির নির্মাণ করিনি”।
[সোনার অলঙ্কার-সহ নিরঞ্জনে যায় ডোমকলের এই কালী প্রতিমা]
স্বপ্নাদেশের এই পুজোয় দেবী নিরাকার। চক্রাকারের ত্রিফলা ত্রিশূলকেই রক্ষাকালীরূপে পুজো করেন পাটপুরের মাহাতো পরিবার। আর এই এক রাতের পুজোকে ঘিরেই আনন্দে মেতে ওঠে পাটপুর গ্রাম।
ছবি: পরেশ মাইতি
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.