রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: ইংরেজদের স্মৃতি বিজরিত কালচিনির হ্যামিল্টনগঞ্জের কালীপুজো এবার ১০২ বছরে পড়ল। এই পুজো ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে। পুজোর পাশাপাশি নদীর পাড়ে কালীবাড়ির মাঠে ১২ দিন ধরে মেলাও চলবে। এই মেলা এবছর ৮৪ বছরে পড়বে। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হরেক রকমের খেলার সামগ্রী, দোকান, নাগরদোলনা, চিত্রহার নিয়ে হাজির হবেন অনেক দোকানদার। এই পুজোর পুরোহিত কেদারনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আগে মাটির প্রতিমায় পুজো হত। মন্দির কমিটি ২০০২ সালে রাজস্থানের জয়পুর থেকে ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নিকশ কালো কষ্টিপাথরের মূর্তি বানিয়ে নিয়ে আসেন। এখন সেই মূর্তিতেই কালী পুজো এখানে। প্রতি বছরই এই পুজো দেখতে মানুষ ভিড় জমায়।”
১৯১৬ সালে ইংরেজ সাহেব হ্যামিল্টনের উৎসাহে এই কালীপুজো শুরু হয়। পুজো উপলক্ষে হ্যামিল্টনগঞ্জ কালী বাড়ির মাঠে বসে বিশাল মেলা। হ্যামিল্টনগঞ্জ কালী বাড়ি কমিটির সম্পাদক প্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বক্সা-ডুয়ার্স টি কোম্পানির ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় সে সময় ঝাড়খণ্ড থেকে আদিবাসী চা-শ্রমিকদের এই এলাকায় নিয়ে এসে চা-বাগানের পত্তন করেন ইংরেজরা। ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকদের আবদার মেনে এই এলাকায় কালীপুজোর প্রচলন করেছিলেন ইংরেজ সাহেব হ্যামিল্টন। সেসময় ঝাড়খণ্ড থেকে প্রতিমা ও পুরোহিত এখানে পুজো হত।”
জানা গিয়েছে, কালচিনির ডিমা, চিনচুলা, কালচিনি ও রায়মাটাং এই চা-বাগানগুলি ইংরেজ সাহেবদের অধীনে ছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন হ্যামিল্টন সাহেব। তাঁর নামেই হ্যামিল্টনগঞ্জ ও হ্যামিল্টনগঞ্জ স্টেশনের নামকরণ হয়। হ্যামিল্টন সাহেবই এই কালীপুজোর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ইংরেজদের সূচনা করা হ্যামিল্টনগঞ্জের এই কালীপুজোয় পাঁঠাবলির সঙ্গে আলাদা করে মোরগ বলির রেওয়াজ ছিল। ওই মোরগের মাংস রান্না হত। পুজোর আসরে মাদলে তাল উঠত। এখন অবশ্য মোরগ বলি হয় না। ইংরেজরা হ্যামিল্টনগঞ্জে মাটির প্রতিমা দিয়েই কালীপুজোর সূচনা করেছিল। অতীতে ইংরেজরা ঝাড়খণ্ড থেকে পুরোহিত এনে এই পুজো করত। কিন্তু এখন আর ঝাড়খণ্ড থেকে পুরোহিত আসে না।
[দেবীর স্বপ্নাদেশে ১২ বছর অন্তর বিসর্জন আউশগ্রামের সিদ্ধেশ্বরী মাতার]
স্থানীয় পুরোহিত কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এখন পুজো করেন। লোকশিল্পী গবেষক প্রমোদ নাথের মতে “ডুয়ার্সের বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠীর মানুষের মেলবন্ধনে এই মেলা দারুন ভুমিকা নেয়। যখন এই অঞ্চলে আনন্দের তেমন কোনও উপকরণ ছিল না তখন এই পুজো ও মেলা চা-বলয়ে আনন্দ মেলায় পরিণত হয়েছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.