নৈহাটির বড় কালী।
আকাশনীল ভট্টাচার্য,বারাকপুর: শ্যামাপুজোর আয়োজনে বারাসতের সঙ্গে সমানে টক্কর দেয় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শহর নৈহাটি। এখানকার শ্যামাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ অরবিন্দ রোডের বড় কালী, অর্থাৎ বড়মা-র পুজো। এবারে এই পুজো ৮৯ বছরে পড়ল। এই পুজোর প্রতিমাতেই রয়েছে বিশেষত্ব। নৈহাটির বড়মা উচ্চতায় ২১ফুট। ঘন কৃষ্ণবর্ণ প্রতিমা স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা। এখানে কোজাগরী পূর্ণিমার সন্ধ্যায় বড়কালীর কাঠামো পুজো হয়। তারপর সেই কাঠামোতেই মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। নৈহাটির বড়মা খুবই জাগ্রত বলেই বিশ্বাস স্থানীয়দের। মায়ের কাছে কোনও কিছু চাইলে ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই মায়ের আশীর্বাদ পেয়ে ভক্তরাও মুক্ত হস্তে অনুদান দেন।
স্থানীয় অরবিন্দ রোডের ধর্মশালা মোড়ে আগে রক্ষাকালীর পুজো হত। রাতে দেবীকে পুজো করে গভীর রাতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। পরবর্তীকালে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরে নদিয়া জুটমিলের কর্মী ভবেশ চক্রবর্তী বড়মা-র পুজোর প্রচলন করলেন। নৈহাটির অন্যান্য কালী প্রতিমার চেয়ে এখানকার মূর্তির উচ্চতা অনেক বেশি। সেকারণেই বড় কালী নামকরণে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন দেবী। আগে এখানে পাঁঠা বলি হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বলি প্রথারও বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে রীতি মেনে ভোগ এখনও দেওয়া হয়। পুজোর রাতে বড়মা-র ভোগে থাকে পোলাও,খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি,লুচি, চাটনি,পায়েস। বিসর্জনের আগের দিন রাতে দেবীকে লাড্ডু ভোগ দেওয়ার প্রথাও অটুট রয়েছে।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা বড়মার টানে পুজোর দিনে নৈহাটিতে ছুটে আসেন।ভক্তদের বিশ্বাস, জাগ্রত দেবী ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। ইচ্ছেপূরণ হলে ভক্তরা দেবীকে সোনা-রুপোর অলঙ্কারে ভরিয়ে দেন। ভক্তদের দেওয়া দেড় কোটি টাকার গয়না স্থানীয় একটি ব্যাংকের লকারে বছরভর গচ্ছিত থাকে। পুজোর দিন সেই লকার থেকেই গয়না এনে দেবীকে পরানো হয়। এই পুজোতে কোনওরকম চাঁদা নেওয়া হয় না। সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ও ভক্তদের অনুদানেই পুজো পেয়ে আসছেন নৈহাটির বড়মা। শুধু স্থানীয়রাই নন, জাগ্রত বড়মা-র টানেই আসানসোল,দুর্গাপুর থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকেও কালী পুজোর দিন ভক্তরা এখানে আসেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.