রাজা দাস, বালুরঘাট: শতাব্দী প্রাচীন জাগ্রত বালুরঘাটের বুড়া কালীর পুজোকে ঘিরে এখন থেকেই ভক্ত ও কতৃপক্ষর মধ্যে শুরু হয়েছে আলাদা উদ্দিপনা। পুলিশি কড়া নিরাপত্তায় পূজিতা হন ইতিহাস বিজরিত প্রাচীন কালীমাতা।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কয়েকটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত কালীর মধ্যে অন্যতম বালুরঘাট শহরের তহবাজার এলাকার বুড়া কালী। পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনেই হয় এই মায়ের পুজো। তবে কালের স্রোত ও সময়ের সঙ্গে পুজোর কিছু নিয়ম পরিবর্তিত হয়েছে বর্তমানে। শতাব্দী প্রাচীন হলেও এই পুজোকে কেন্দ্র করে জেলাবাসীর মনে অফুরন্তু বিশ্বাস রয়েছে। কালীপুজোর দিন ও রাতে এই পূজাকে ঘিরে ভক্তদের ঢল নামে চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার বুড়া কালীবাড়িতে পুজো দেওয়ার লম্বা লাইন পরে ভক্তদের। এখন বিশালাকৃতি মন্দিরের পূজিতা হন এই কালী। প্রতিবারের মতো এবারও পুজোর দিন মায়ের সম্পূর্ণ বিগ্রহে সোনা-রূপার অলঙ্কারে সুসজ্জিত করা হবে। পুজোতে এখন পাঁঠা বলি, শোল মাছ বলি হয়। তবে আগে নাকি ২০ কিলো ওজনের শোল মাছ বলি হত। এই পুজোকে ঘিরে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর নয়, পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ও মালদা জেলা থেকেও প্রচুর ভক্ত বা দর্শনার্থীদের সমাগম হয়।
জনশ্রুতি আছে, কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়া কালীমাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে নাকি আত্রেয়ী নদী বইত। বর্তমানে বুড়া কালী মন্দির থেকে অনেকটা পশ্চিমে সরে গিয়েছে এই নদী। শোনা যায়, মন্দির ও বাজারের জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল। শতাব্দীর প্রাচীন পুজো হলেই এই পুজোর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না। এক সময় আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়া কালীমাতার বিগ্রহ। এক তন্ত্রসাধক সেই সময় ওই বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে পুজো দেন। তারপর থেকেই টিনের ঘেরা দিয়ে ছাপরা ঘরে বুড়া কালীমাতার পুজো শুরু হয়েছিলো। রানী রাসমণি এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। বজরায় করে এসে তিনি আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে মায়ের পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কলকাতায়। এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে আরও জনশ্রুতি। সন্ধ্যের পর নাকি ফুলের অপরূপ সুগন্ধ পাওয়া যেত এই এলাকা থেকে। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত তেমন কোনও গাছ বা জঙ্গল ছিল না। শোনা যেত, নূপুরের আওয়াজ। সেই সব নাকি এখন গল্প মনে হয় অনেকের। তা সত্ত্বেও জেলাবাসীর অগাধ বিশ্বাস বুড়া কালীমাতার উপর। এখন অত্যন্ত বিশ্বাসের সহিত পুজিত হন মা। পুজোর দিন দর্শনার্থীদের দেওয়া হয় অন্ন ও খিচুড়ি ভোগ। এবারও কয়েক হাজার ভোগের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গতবার সাড়ে তিন হাজার হাঁড়ি খিচুড়ি ভোগের পাশাপাশি পাঁঠা বলি হয়েছে ২১টি। সেই সঙ্গে অন্যান্য ভোগ মিলিয়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে কমিটির তরফে ।
কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা নন্দদুলাল বিশ্বাস বলেন, পুজোর সময়কালটা সঠিক তাঁদের জানা নেই। তবে বুড়া কালীমাতা খুব জাগ্রত। প্রচুর মানুষ বিশ্বাস সহকারে মানত করেন। এই পুজোকে ঘিরেই জেলার মানুষের একটা আলাদা আবেগ রয়েছে।
ছবি: রতন দে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.