Advertisement
Advertisement

৬০০ বছরের রীতি, কালীপুজোর সকালে এই মন্দিরে মায়ের চক্ষুদান হয়

গভীর রাতে বালিকার রূপ ধরে মন্দিরের পুকুরে স্নান করতে আসেন মা।

Basirhat: This Kali Puja has an interesting story

ছবিতে সংগ্রামপুরের দক্ষিণা কালী।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 30, 2018 5:25 pm
  • Updated:October 30, 2018 5:25 pm  

নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: বসিরহাটের সংগ্রামপুরের কালীমন্দিরের ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে আছে ছ’শো বছরের পুরানো ইতিহাস ও ঐতিহ্য। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। এখানে আজও অটুট পাঁঠা বলির প্রথা। পুরনো রীতি মেনে সংগ্রামপুরের এই মন্দিরের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও কালীপুজো হয় না। মন্দিরের এক সেবায়ত রানি চক্রবর্তী জানান,“মা এখানে দক্ষিণা কালী রূপে পূজিতা হন। খুব জাগ্রত আমাদের মা। দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরের পরই আমাদের মায়ের অবস্থান। তাই তো হাজার হাজার ভক্ত আসেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।”

মন্দিরের পুজারি মধুসূদন চক্রবর্তী জানান, রাজার দান করা জমিতে এই কালী মন্দির তৈরি। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দে স্বপ্নাদেশ পেয়ে জমিদানের পর তৈরি হয় মন্দির। হয়। তবে প্রথমেই মন্দির এমন ছিল না। কালে কালে তার পরিবর্তন ঘটেছে। রাজার সময় খড়ের চালের মন্দিরেই দেবী অধিষ্ঠিতা ছিলেন। তারপর ভক্তদের বদান্যতায় ও মন্দিরের উন্নয়ন কমিটির সৌজন্যে আজ মন্দিরের জন্য পাকা দালান হয়েছে। মন্দির প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পুজারিও ঠিক করে যান রাজা। মধুসূদনবাবুর পূর্বপুরুষদের গঙ্গা তীরবর্তী এলাকা নিয়ে এসে সংগ্রামপুরে বসতি গড়ে দিয়েছিলেন। এরপর  থেকে ওই চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরাই বংশানুক্রমে সংগ্রামপুরের কালীমন্দিরের পুজারি হয়ে আসছেন। এখন এই চক্রবর্তী পরিবারে আটজন শরিক। এক এক জন ন’দিন করে পুজো করেন।

Advertisement

[কালীপুজোয় ঝাড়গ্রামের কেশবডিহিতে তাক লাগাবে কাচের মণ্ডপ]

কথিত আছে যে, মা কালির সামনে থাকা ঘটটি এই সংগ্রাম পুরের জনৈক কোনও ব্যক্তিই পেয়েছিলেন। তার উপর ভিত্তি করেই এই মন্দির গড়ে ওঠে। তবে মন্দিরের মূর্তিটা কী দিয়ে তৈরি ও কে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত করেন তা কেউ জানেন না। এই মন্দিরে মা দক্ষিণা কালী রূপে বিরাজমান। মন্দিরে নিত্য পুজোর পাশাপাশি ভোগের বন্দোবস্তও রয়েছে। মাকে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। যেমন লুচি, চিড়ে, ফল, খিচুড়ি, পায়েস ইত্যাদি। এমনকী, কোনও কোনওদিন আমিষ ভোগও দেওয়া হয়। যদি কোনও ভক্ত পাঁঠা বলি দিতে আসেন তবে সেদিন দেবীকে বলির কাঁচা মাংস নিবেদন করা হয়। এই মন্দিরে বছরের বিভিন্ন সময় পুজো হয়। উল্লেখযোগ্য পুজোর মধ্যে ভাদ্র মাসে হয় ভদ্রা কালীপুজো, শ্যামা পুজোর রাত্রে শ্যামা কালী, চৈত্র মাসে হয় গামাটি পুজো ও শীতলা পুজো। এছাড়া এখানে জানুয়ারির ১ তারিখে কল্পতরু উৎসব, চৈত্রে চড়ক পুজোও হয়। সব মিলিয়ে সারা বছর জমজমাট থাকে সংগ্রামপুরের কালী মন্দির। ৬০০ বছরের রীতি মেনে শ্যামা পুজোর আগে নতুন করে মায়ের মূর্তিতে রং করা হয়। তবে মন্দিরের প্রবীণ পুজারিও জানেন না কি দিয়ে এই মন্দিরের মায়ের মূর্তি তৈরি হয়েছে। এটি আজও সবার কাছে রহস্যই থেকে গিয়েছে। এই মূর্তি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হবার সময় থেকে একই রকম রয়ে গিয়েছে। কোনও সংস্কার করার প্রয়োজন পড়েনি। শুধু শ্যামা পুজোর আগে রং করা হয় আর তাঁর জন্য আকৃতিতে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া শ্যামা পুজোর দিন প্রত্যেক বার মায়ের চক্ষু দানের প্রথা আছে এখানে। চক্ষু দান করা হয় সকাল আটটার মধ্যে। শিল্পী এসে মায়ের চোখ আঁকেন। পুজোর দিন কালী এখানে ভক্তদের দেওয়া বেনারসি শাড়ী পরেন প্রতিবার। সেই সঙ্গে মায়ের গায়ে থাকে বিভিন্ন সোনার অলঙ্কার যেমন হার, মুকুট, চুরি, নথ, দুল-সহ বিভিন্ন গয়না। দুপুরে যেমন নিত্য পুজো হয়, তেমনই হয় শ্যামা পুজোর দিনও। সন্ধ্যায় আরতির পর অমাবস্যার তিথি মেনে রাত দশটায় বিশেষ পুজো শুরু হয়। চলে সারা রাত। তৃতীয় প্রহরে পুজোর পর চতুর্থ প্রহরে অর্থাৎ ভোরের দিকে হয় বলি। তারপর আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি হয়। শাস্ত্র মতে হোম হলে প্রতিমার বিসর্জন হয়। এখানে দেবী প্রতিষ্ঠিত তাই হোম হয় না। 

[চক্রাকার ত্রিশূলকে কালীরূপে পুজো করে খাতড়ার পাটপুরের মাহাতো পরিবার]

এদিন মাকে যে ভোগ নিবেদন করা হয় তাঁর তালিকায় থাকে মটরের ডাল দিয়ে এঁচোড়ের তরকারি, কচুরমুখী ও চিংড়ি মাছের তরকারি, সাদা ভাত। পাঁঠা বলির কাঁচা মাংস। এই ভোগের তালিকায় আজ পর্যন্ত কোনও পরিবর্তন হয়নি। এই সময় এঁচোড় পাওয়ার কথা নয় তবুও প্রত্যেকবার কোন না কোন ভক্ত ঠিক নিয়ে চলে আসেন। বলি বন্ধ করে দিলে মা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। গ্রামে মড়ক লাগতে পারে। এই ভয়েই সংগ্রামপুরের মন্দিরে পাঁঠাবলির রেওয়াজ চলে আসছে। মন্দিরের তরফে প্রতি শ্যামাপুজোর রাতে একটা পাঁঠা বলি হয়। তবে ভক্তরা অনেকেই পাঁঠা নিয়ে আসেন। তাই সারাবছরই বলি চলে। সংগ্রামপুরের মন্দির নিয়ে গল্পকথা শেষ নেই। মন্দিরের পিছনের পুকুরে লালপেড়ে শাড়ি পরা ছোট্ট মেয়েকে স্নান করতে দেখেছেন অনেকেই। বাসিন্দাদের মতে  ওই ছট্টো মেয়েটিই স্বয়ং মা কালী। তাই গ্রামবাসীদের ধারনা মা তাঁদের মধ্যেই থাকেন। তাঁদের সব ইচ্ছেই পূরণ করেন। কিন্তু  যদি বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মা রক্তের স্বাদ পেতে গ্রামের কোনও অমঙ্গল করতে পারেন।

[ভূতের আতঙ্ক কাটাতেই মোটর কালীর পুজো শুরু বালুরঘাটে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement