সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২৭০ জন সাংসদ, ৭০ জন মন্ত্রী, ৪০ জন স্টার প্রচারক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথদের মতো হেভিওয়েট নেতার জনসভা। করা হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের চেষ্টাও। কিন্তু, কিছুতেই যেন টলানো গেল না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের (Arvind Kejriwal) কুরসি। হ্যাঁ, তিনি কিছুটা ধাক্কা খেলেন। আপের আসন কমল। প্রত্যাশার তুলনায় ভাল ফল করল বিজেপি। কিন্তু, গেরুয়া শিবির যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দিল্লি দখলের উদ্দেশ্যে নেমেছিল, তা ব্যর্থ করে দেওয়াটা নিঃসন্দেহে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম সেরা সাফল্য।
কিন্তু, কোন জাদুমন্ত্র বলে এই সাফল্য পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী? দিল্লির মানুষ বলছে, উন্নয়ন। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই জাতীয় স্তরের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। তাঁর ফোকাস ছিল অন্ধ বিজেপি বিরোধিতা থেকে সরে এসে রাজ্যের উন্নয়নে মনোনিবেশ করা। গত কয়েক বছরে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। দিল্লির সরকারি স্কুলগুলি পরিকাঠামোগত দিক থেকে অনেক নামী বেসরকারি স্কুলের থেকেও ভাল। দিল্লির হাসপাতালগুলিতে সব নাগরিকের জন্য ফ্রিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। প্রত্যেক পাড়ায় তৈরি হয়েছে ‘মহল্লা ক্লিনিং’। ফলে হয়রানি কমেছে নাগরিকদের। এতো গেল পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। কেজরির খয়রাতির উদাহরণও কম নয়। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি। মহিলাদের জন্য পরিবহণক্ষেত্রে বড়সড় ছাড়, এছাড়াও মহিলাদের সুরক্ষার জন্য পাড়ায় পাড়ায় মার্শাল নিয়োগ। এমন হাজারো পরিকল্পনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
তবে কি স্রেফ এই উন্নয়নের নৌকায় ভর করেই দিল্লি জিতলেন কেজরিওয়াল? সেটাও নয়। উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেকে অকারণ বিতর্ক থেকে সরিয়ে রাখাটাও তাঁর সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। শেষবেলায় বিজেপি যখন শাহিনবাগকে সামনে রেখে দিল্লিতে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছে, তখন পুরোপুরি নীরব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পালটা নরম হিন্দুত্ব বা উগ্র সংখ্যালঘুপ্রেম কোনওটাই দেখাননি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অন্য বিরোধীরা যখন অন্ধভাবে বিজেপি বিরোধিতা করে চলেছে, তখনও কেজরিওয়াল নিজেকে বিতর্ক থেকে সরিয়ে রেখেছেন। দিল্লি ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকার যখন রাম মন্দির ট্রাস্ট ঘোষণা করল, অনেকেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। আম আদমি পার্টি কিন্তু, বিজেপির সেই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় না করিয়ে সমর্থনই করেছে। মোট কথা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল অন্ধ বিজেপি বিরোধিতা ছেড়ে, নিজের কাজে মন দিয়েছিলেন। আর সেটাই তাঁকে,তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদে বসিয়ে দিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.