সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমরা জিতিনি তাতে কি, বিজেপিও তো জেতেনি! দিল্লি নির্বাচনের পর এমনটাই নাকি বলছেন কংগ্রেস (Congress) কর্মীরা। তাঁদের হাবভাবে স্পষ্ট নিজেদের জয়ের থেকেও তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিজেপির হার। আম আদমি পার্টির এই সাফল্যে তাই খুব একটা অখুশি নয় কংগ্রেস। হোক না নিজেদের ভাঁড়ার শূন্য। তাঁদের ভোটেই তো জিতছে আপ। এটা ভেবেই খুশি কংগ্রেস শিবির। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরি তো বলেই দিলেন, “সবাই জানত কেজরিওয়াল জিতবেন। তাঁর এই জয় বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে জয়।”
ভোটের ফলপ্রকাশের আগেই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কেটিএস তুলসী (KTS Tulsi) ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আম আদমি পার্টিকে জেতাতে নির্বাচনী লড়াই থেকে নিজেদের অনেকটাই সরিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস। কারণ, কংগ্রেস ভোট বেশি পেলে, ভোট কাটাকাটির অঙ্কে আসলে সুবিধা পেয়ে যেত বিজেপিই। ভোটের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তুলসীর ভবিষ্যদ্বাণী অনেকাংশে সত্যি। যে যে জায়গাগুলিতে কংগ্রেস মোটামুটি ভাল ফল করেছে সেইসব জায়গাগুলিতে বিজেপি কঠিন লড়াই দিচ্ছে আপকে। যদিও, এই সংখ্যাটা ভীষণ কম। গান্ধীনগর কেন্দ্রে কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে কংগ্রেসের ভোট কাটার জেরে গান্ধীনগর কেন্দ্রটি আপের হাতছাড়া হয়ে গেল। সেখানে এখনও এগিয়ে বিজেপি প্রার্থী। অন্য কোথাও কংগ্রেস প্রার্থী তেমন ভোট কাটেননি।
এখন প্রশ্ন হল, কংগ্রেস কি সত্যিই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রেখেছিল, নাকি মানুষই তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছে? দিল্লি নির্বাচনের প্রচার পর্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় কোনও নেতা ভোট চাইতেই যাননি মানুষের কাছে। রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী একেবারে শেষবেলায় দুটি জনসভা করলেন। সোনিয়া তো সেটাও করেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো দূরের কথা, রাজ্যস্তরের শীর্ষনেতারাও সেভাবে ভোটের প্রচারে আসেননি। কপিল সিব্বল, সন্দীপ দীক্ষিত, অজয় মাকেনদের সেভাবে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘুরা কংগ্রেসের থেকে আম আদমি পার্টিকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযুক্ত দল বলে মনে করেছে। সেকারণেই কংগ্রেসের পুরো সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক চলে গিয়েছে আম আদমি পার্টির দখলে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেই যেখানে কংগ্রেস ২২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল, সেখানে এবারে মাত্র সাড়ে চার শতাংশ ভোট গিয়েছে কংগ্রেসের দখলে। কংগ্রেসের ভোটব্যাংকে ধস নামিয়েই প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে আম আদমি পার্টি।
ওয়াকিবহাল মহলের মত, বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেসের নীচুতলার কর্মীরাই আম আদমি পার্টির হয়ে ভোট করিয়েছেন। নতুবা, এত বেশি ভোট রাতারাতি কংগ্রেস থেকে আপে ট্রান্সাফার হওয়া সম্ভব ছিল না। বিজেপিকে হারাতেই এই কৌশল নিয়েছিল রাহুল গান্ধীর দল। এখন প্রশ্ন হল, এই রণকৌশলে কি কংগ্রেসের আদৌ কোনও লাভ হল। বিজেপি তো হারল, কিন্তু হাত শিবির নিজেরাও তো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। একটি সর্বভারতীয় দল দেশের রাজধানীতে সাড়ে ৪ শতাংশ ভোট পাচ্ছে, সেটা কি আদৌ গোটা দেশের কর্মীদের জন্য ভাল বার্তা দেয়? এ প্রশ্নের উত্তর জানেন রাহুল গান্ধীরাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.