Advertisement
Advertisement
T20 World Cup Final 2024

‘দেশে কাপ নিয়ে আয়’, শিষ্য রোহিতের কাছে আবদার গুরু দীনেশের

রোহিতের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।

T20 World Cup Final 2024: Dinesh Lad wants to see Rohit Sharma lifts the WC

গুরু দীনেশ। ছাত্র রোহিত। শিষ্যের কাছে কাপ আবদার গুরুর।

Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:June 29, 2024 2:10 pm
  • Updated:June 29, 2024 4:17 pm  

কৃশানু মজুমদার: মেঘের উপর দিয়ে হাঁটছেন রোহিত গুরুনাথ শর্মা (Rohit Sharma)। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার ঘাতক হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁর গাণ্ডীব। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ চারের ম্যাচেও হিটম্যানের ব্যাট কথা বলেছে। শনিসন্ধ্যায় বিশ্বকাপের মেগাফাইনাল। দক্ষিণ আফ্রিকা তৈরি। তৈরি রোহিত শর্মাও। ভারত অধিনায়কের ছেলেবেলার কোচ দীনেশ লাড (Dinesh Lad) সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বললেন, ”ভারতের ম্যাচ থাকলে আমি ঘরের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসেই খেলা দেখতে পছন্দ করি। জায়গা ছেড়ে উঠি না। আজকের ফাইনালেও আমি একই কাজ করব। রোহিতের জন্য বলব, কাপটা দেশে নিয়ে আয়।”
ক্যাপ্টেন রোহিতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে ভারত। গোটা দেশের প্রার্থনায় হিটম্যান। আব্বাসউদ্দিন যেভাবে গান ধরতেন, ”আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে…।” ঠিক সেই ভাবেই দেশের আর্তি, বিশ্বকাপ ফাইনালেও ছায়া দিয়ে যান তিনি। 

[আরও পড়ুন: মেসির চোটের সঙ্গে আর্জেন্টিনার চিন্তা বাড়াচ্ছেন কোচও, পেরু ম্যাচে নেই স্কালোনি

রোহিত শর্মাকে নিয়ে এই গণহিস্টিরিয়া দেখার পরে জনপ্রিয় কবিতার লাইনগুলো মনে পড়তে বাধ্য,
একটা দুরন্ত ছয় মারল ছেলেটা।  জ্যোৎস্না পার হয়ে বলটা গিয়ে পড়ল আসামের জঙ্গলে, সেখানে তিনজন টেররিস্ট বসে আছে সাইনাইড খাবে বলে তিনজনই লাফিয়ে উঠল, আঃ মৃত্যু! দাঁড়াও!
আর একটা ছয় দেখে যেতে চাই।
জ্যোৎস্না পার হয়ে, পার হয়ে, বল এসে পড়ল এবার
বম্বের ধারাভিতে-এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি
তিনজন মারামারি করছিল রুটি তরকা নিয়ে, থেমে গেল। জোয়ারের মত বেরিয়ে গেল গোটা ঝোপড়ি
খেতে-না-পাওয়া জ্যোৎস্নায় থমকে দাঁড়ানো ভারতবর্ষ। 

Advertisement
ICC T20 World Cup 2024: Rohit Sharma opens up on India's chances in finals
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে রোহিতের ব্যাট।

শনিবার রাতে রোহিতরা এমনই জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে দিন। আশায় গোটা দেশ। চাইছেন তাঁর কোচ দীনেশও। আবেগের বাষ্প গলায় নিয়ে তিনি বলছেন, ”আজ রোহিত কাপ হাতে তুললে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যাবে আমার। মনে পড়ে যাবে ১৯৯৯ সাল। আমি প্রথমবার রোহিত শর্মাকে দেখেছিলাম। সেই ছোট্ট ছেলেটাই আজ দেশের অধিনায়ক। সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটার। গুরু হিসেবে গর্ববোধ হয়।”
দীনেশ থামেন। শ্বাস নেন। তাঁর ছাত্র রোহিতকে ব্যাট হাতে ক্রিজে দেখলে ভক্ত-অনুরাগীরা অস্ফুটে বলে ওঠেন, ”যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।”
টিম ইন্ডিয়া আর বিশ্বকাপের মাঝে দাঁড়িয়ে সেই রোহিত শর্মাই। তাঁর দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। দীনেশ টাইমমেশিন না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন পুরনো দিনে। স্মৃতির পাতা উলটে বলছেন, ”২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত খুবই খারাপ সময় গিয়েছে রোহিতের। ক্রিকেটের প্রতি মন ছিল না। কয়েকটা সিরিজে ভাল পারফর্ম করতে পারেনি। তার উপরে ২০১১ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পায়নি। বিরাট কোহালি ঢুকে গেল বিশ্বকাপ দলে। মাঠের বাইরে থেকে রোহিতকে বসে দেখতে হল ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। এটা প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছিল রোহিতকে।’’
সেই সময়ে ছাত্রকে গুরু বুঝিয়েছিলেন, ‘‘ক্রিকেটের জন্যই আজ তোর যত নাম ডাক। সেই ক্রিকেটকে অবহেলা করছিস কেন?’’ তার পরই বদলে যাওয়া রোহিত শর্মাকে দেখতে শুরু করে দেশ। যত সময় যাচ্ছে, তত রোহিত শর্মা ধরা দিচ্ছেন অন্য অবতারে।
ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে (T20 World Cup Final 2024) পৌঁছনোর পরে কাঁদতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে উঠেও হার মানতে হয়েছিল রোহিতের ভারতকে। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালেও রোহিতের দল হার মেনেছিল। ভেঙে পড়েছিলেন রোহিত।  

ICC T20 World 2024: Here are the top records form Semifinal
দেশের শ্বাসপ্রশ্বাসে রোহিত শর্মা।

এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। প্রায়শ্চিত্তর সুযোগ পাচ্ছেন হিটম্যান। মনে পড়ে যায় রোহিতের হেডস্যর রাহুল দ্রাবিড়ের বিখ্যাত সেই মন্তব্য, ”আশা ছাড়তে নেই। আপনি যেটা ভাল পারেন সেটা মনপ্রাণ দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে করুন। দেখবেন হয়তো কোথাও একটা ন্যায়বিচার অপেক্ষা করে আছে। আসবেই এমন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু আপনাকে পড়ে থাকতে হবে নিজের নিষ্ঠা নিয়ে।”
রোহিতও কি ন্যায়বিচার পাবেন? দীনেশ বলছেন, ”সব সময়ে পজিটিভ থাকে রোহিত। দলের প্রত্যেকের পাশে এসে দাঁড়ায়। বোলার-ব্যাটারদের দারুণ ভাবে পরিচালিত করে। এটাই তো ওর পজিটিভ দিক।” ইতিবাচক রোহিতেই ভরসা সবার। দীনেশ লাড ফিরে যাচ্ছেন রোহিতকে কোচিং করানোর দিনগুলোয়। দীনেশ গল্প বলে চলেন, ”জানেন তো, মুম্বইয়ের ক্রিকেটমহলে প্রচলিত রয়েছে, উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা একেবারেই চলবে না। ভাল ডেলিভারিতে আউট হলে অন্য কথা। কিন্তু, খারাপ বলে আউট হওয়া মহা অপরাধ। রোহিত তখন স্কুলের ছাত্র। এগারো-বারো বছর বয়স হবে। একটা ম্যাচে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে এল। ম্যাচটা ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। রোহিতের স্কুল স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও জয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরে এল। ম্যাচটা হারতে হয়েছিল। রোহিতের আউট হওয়ার ধরন দেখে আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। রোহিতের কানের পাশে কষিয়ে একটা চড় মেরে বসলাম।”
গুরুর সেই শিক্ষা নিশ্চয় এখনও মনে আছে রোহিতের। আউট হওয়ার পরে মাথা নাড়তে নাড়়তে ফিরে যান ডাগ আউটে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন। কোথায় ভুল হয়ে গেল, তা বোঝার চেষ্টা করেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নার্ভাস নাইন্টিতে ফিরে যাওয়ার পরে রোহিতকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ”৫০-১০০-র পিছনে ছুটি না।” দীনেশ বলছেন, ”ফাইনালে শুরুটা রোহিত ভালো করলে বাকি ব্যাটাররাও ভালো মনে খেলতে পারবে। রোহিতকে শুরুটা ভালো করতে হবেই।”
রোহিত শর্মা জনগনমণের অধিনায়ক। বহুদূরের মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো ভারতের স্বপ্নের সওদাগরকে ছেলেবেলার কোচ বলছেন, ”দেশে কাপ নিয়ে আয়। আমি তো গর্বিত হবই। দেশের সবাই খুশি হবে।”

[আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে ভাসবে টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল! কখন হবে খেলা? কী বলছে আইসিসির নিয়ম?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement