কিংবদন্তির জন্মদিন আজ।
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ ভারতীয় ক্রিকেটে স্মরণীয় এক সপ্তাহ। ৭ জুলাই ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্মদিন ছিল। ৮ জুলাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। আজ ভারতীয় ক্রিকেটের আরেক কিংবদন্তির জন্মদিন। তিনি সুনীল গাভাসকর। ৭৫ বছরে পা দিলেন লিটল মাস্টার। তার আগে বোরিয়া মজুমদারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন।
বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন আপনি। তারপর জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার। একটু টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে শুরুতে আলোচনা করি। কী মনে হয় এই ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ আর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারে?
গাভাসকর: অবশ্যই। আমার মনে হয় পরে পরেক দু’মাস ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সবরকমভাবে চেষ্টা করবে যাতে হার্দিক পাণ্ডিয়াকে টেস্ট খেলানো যায়। হার্দিক যদি দিনে দশ ওভার বোলিং করে, তারপর ব্যাটিং করতে যায়, তাহলে ভারতীয় টিমের ব্যালান্স আরও বেড়ে যাবে। আর অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও জিততে পারে।
সানিভাই, আপনি অধিনায়ক হিসাবে ১৯৮৫-তে বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ জিতেছিলেন। আমাদের অন্যতম সেরা জয়গুলোর মধ্যে ওটা একটা। রোহিতকে ক্যাপ্টেন হিসাবে আপনি কীভাবে দেখেন?
গাভাসকর: দুর্ধর্ষ অধিনায়ক রোহিত। কিছু অধিনায়ক হয় যারা একেবারে সহজাত নেতা। রোহিত আর এমএস ধোনি সেই গোত্রের মধ্যে পড়ে। অনেকের কাছেই অধিনায়কের ব্যাপারটা আলাদা চাপের। কিন্তু রোহিত কখনও চাপে পড়ে না। ওকে দেখে মনে হয় ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব ও সবসময় উপভোগ করে। সবসময় রিল্যাক্সড থাকে। রোহিত যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দেয়, সেটা আমার খুব ভালো লাগে।
একটা প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছা করছে, ধরুন আপনাদের ১৯৮৫ আর ২০১১-র বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় টিমের মধ্যে যদি একটা ম্যাচ হয়, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই খুব উপভোগ্য হবে।
গাভাসকর: নিশ্চয়ই। আমাদের ওই দলটা দুর্দান্ত ছিল। আর ২০১১-র ওই টিম কিন্তু অনেক বেশি ওয়ান ডে খেলেছে। ওরা আমাদের হয়তো হারিয়ে দিতে পারে। তবে সেটা শেষ বলে।
১৯৭১-এর ত্রিনিদাদে সেই রোমাঞ্চকর জয়ে উইনিং স্ট্রোকটা আপনিই নিয়েছিলেন।
গাভাসকর: এত বছর পরেও যখন ওই কথাগুলো মনে করি, তখন রীতিমতো অবিশ্বাস্য মনে হয়। আমরা ওই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ১২৪ তাড়া করছিলাম। আবিদ আলি ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে উপরে তুলে নিয়ে এসেছিল। উনি দুর্দান্ত রান নিতেন। আর যখনই আমরা দ্রুত সিঙ্গলস নিতে শুরু করলাম তখন ওরা রানআউটের জন্য ডিরেক্ট থ্রো করার চেষ্টা করছিল। যারজন্য বেশ কয়েকটা ওভার থ্রো হয়। সেগুলো আমাদের কাজটা কিছুটা সহজ করেছিল। তিন বছর পর ম্যাঞ্চেস্টারে আমার সেঞ্চুরি পূর্ণ করতেও আবিদ আলি সাহায্য করেছিল। আমি নিশ্চিত টিমের অন্য কোনও ক্রিকেটার থাকলে ওই সিঙ্গলসগুলো হত না।
কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টারে আপনার আর আবিদ আলির ৮৫ রানের পার্টনারশিপে ভারতকে জেতাতে পারেনি। কিন্তু তিন বছর আগে পোর্ট অফ স্পেনের দ্বিতীয় টেস্টে আপনাদের ৪১ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ আজও ভারতীয় টিমের অন্যতম সোনালি অধ্যায় হিসাবে থেকে গিয়েছে।
গাভাসকর: আর্থার ব্যারেট গুগলি করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওটা শট বল হয়ে যায়। প্রায় মাঝ পিচে পড়েছিল বলটা। আমি পুল মারি। বাউন্ডারি হয়, আর ম্যাচটা জিতে যাই। অবিশ্বাস্য একটা জয় ছিল।
ইমরান খান বারবারই একটা কথা বলেছেন, আপনার আগে ভারতীয়দের মধ্যে পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কেউ এত ভালো ব্যাট করত না। আপনিই ধারণাটা সম্পূর্ণ বদলে দেন।
গাভাসকর: আসলে কী বলুন তো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম প্রচার করছিল, ভারতীয়রা নাকি পেস বোলিং খেলতে পারে না। আপনি এমন একটা টিম দেখান, আমি ইংল্যান্ডের কথাও বলছি যারা অনায়াসে কোয়ালিটি পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সাবলীল। কেউ নয়। আটের দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের কী অবস্থা হয়েছিল? তখন কী কেউ বলেছিল ইংল্যান্ড পেস অ্যাটাক খেলতে পারে না? অস্ট্রেলিয়াও দুরমুশ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে। কই, তখন তো কেউ বলেনি অজিরা পেস বোলিং সামলাতে পারে না? আসলে ভারতের বিরুদ্ধেই এটা প্রচার করা হচ্ছিল।
আপনার পুত্র রোহন একটা ঘটনা শেয়ার করেছিল। সুধীর নায়েকের সঙ্গে ১৯৭৪-এ যেটা হয়েছিল। সুধীর নায়েকের বিরুদ্ধে দোকান থেকে মোজা তুলে নেওয়ার অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।
গাভাসকর: হ্যাঁ। আমি কখনও মার্ট অ্যান্ড স্পেন্সার থেকে কোনও কিছু কিনিনি।
এটা কি নীরব প্রতিবাদ?
গাভাসকর: অবশ্যই। অন্যায় হয়েছিল। আমি সুধীরকে বহুদিন ধরে চিনতাম। আমরা এক সঙ্গে টেনিস বল ক্রিকেট খেলেছি। আমরা খুব কাছাকাছিই থাকতাম। সুধীর ওরকম কিছু করতেই পারে না। ওই ঘটনার পর আমি কলোনেল অধিকারীকে বলেছিলাম, সুধীরের সঙ্গে ঘর শেয়ার করব। ওই ঘটনার পর অনেকেই টিটকিরি করা শুরু করেছিল। চেষ্টা করেছিলাম ওই পরিস্থতি থেকে সুধীরকে রক্ষা করতে।
শেষ প্রশ্ন, ১৯৭১-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের ওই জয়টা কি ভারতের বিশ্বকাপ কিংবা বেনসন অ্যান্ড হেজেস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল?
গাভাসকর: ১৯৭১-এর জয়টা বিশাল ছিল। আমরা কিন্তু ত্রিনিদাদে জিতেছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন প্রবল শক্তিধর প্রতিপক্ষ। ফলে ওই জয় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.