গৌতম গম্ভীরের দিকে তাকিয়ে ইডেন।
আলাপন সাহা: মহামেডান মাঠে বক্স অফিসের সামনে লম্বা লাইন। কালো মাথাগুলো গিজগিজ করছে। তাঁদের মধ্যে থেকে কয়েকজন আবার ইডেন চত্বরের সামনেটা ঘুরছিলেন প্রায় দুপুর থেকে। যদি শেষবেলায় কয়েকটা টিকিট যোগাড় করা যায়।
ইডেনের ক্লাবহাউসের লোয়ারটিয়ারে জনা কয়েকজন তুমুল চিৎকার করে যাচ্ছিলেন কেকেআর প্র্যাকটিসের শুরু থেকে। ড্রেসিংরুম থেকে কেকেআর ক্রিকেটাররা বেরালোই আকুল একটা আর্তি আসছিল-একটু দাঁড়াবেন প্লিজ। একটা ছবি তুলব।
শুক্রবার বিকেলের টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলোই বলে দিচ্ছিল ঘরের টিম কেকেআরকে নিয়ে আবেগের পারদটা ঠিক কোথায় পৌঁছতে চলেছে। সিএবির তরফ থেকে বলা হল, টিকিট মোটামুটি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। শনিবারের গ্যালারি একেবারে হাউসফুল থাকবে। আর আবেগের সিংহভাগটাই যে একজনকে ঘিরে থাকবে, সেটা বলে দেওয়াই যায়।
ইনি গৌতম গম্ভীর।
কেকেআরকে দুবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এই শহরটার সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে ভেবেছিলেন বাইপাসে একটা ফ্ল্যাট কিনবেন। তারপর বছরের অর্ধেক সময়টা কাটাবেন এখানেই। কিন্তু সময় বদলের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলায়। যে প্রিয় কেকেআরকে নিয়ে আবেগের স্রোত বইত গম্ভীরের হৃদয়ে, সেই টিমকে একটা সময় ছেড়ে যেতে হয়। বেশ কয়েক বছর পর আবার ঘরে ফেরা। গোতিভাইয়ের উপস্থিতি পুরো কেকেআর টিমকে কতটা উজ্জীবিত করেছে, সেটা শ্রেয়স আইয়ারের কথা শুনে ভালরকম বোঝা যাচ্ছিল।
কেকেআর অধিনায়কের সাংবাদিক সম্মেলনের বেশিরভাগটাই জুড়ে রইলেন গম্ভীর। আসলে ইডেনে শনিবার সানরাইজার্সকে শুধু কেকেআরের বিরুদ্ধে লড়তে হবে না, লড়াই করতে হবে ডাগআউট বসা নাইট মেন্টরের মগজাস্ত্রের সঙ্গেও। যেমন ওপেনে ভেঙ্কটেশন আইয়ারের সঙ্গে কাকে খেলানো হবে। ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার হিসাবে কাকে নামানো হবে, সবকিছুই ঠিক করছেন গম্ভীর। শোনা গেল, গম্ভীর নিজেও নাকি বেশ আবেগতাড়িত। তেমনই ভেতরে ভেতরে ফুটছেনও।
গতবার ইডেন পিচের চরিত্র কেমন হবে, সেটাও খুব ভাল করেই জানেন গম্ভীর। জানেন ইডেন উইকেট যেমন রান-টান হবে। তেমনই পেসারদের জন্য বাড়তি ক্যারি—বাউন্স থাকবে। দুটো টিমের পেস অ্যাটাকেই এমন কিছু নাম রয়েছে, যাঁরা এক্সফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। নিলামে চব্বিশ কোটি দিয়ে কেকেআর মিচেল স্টার্ককে নেওয়ার পর থেকেই ভালরকম চর্চা শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁ-হাতি পেসার শহরে পা রাখার পর থেকে হয়তো সেই প্রত্যাশার চাপটাও টের পাচ্ছেন। সানরাইজার্সে আবার এমন একজন রয়েছেন, যিনি স্টার্কের সতীর্থ। যাঁর নেতৃত্বে মাস ছয়েক আগেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সেই প্যাট কামিন্সকে এদিন বিকেলে ইডেনে ঢুকেই সোজা উইকেটের কাছে চলে যেতে দেখা গেল। দুটো টিমই একটা ব্যাপার নিয়ে একটু ঘেঁটে রয়েছে। চার নম্বর বিদেশি কে হবেন, সেটা সামান্য ধোঁয়াশার। কেকেআর মোটামুটি টিম ঠিক করে ফেলেছে। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিনের সঙ্গে স্টার্ক খেলবেনই। এখন ফিল সল্ট আর গুরবাজের মধ্যে একজনকে খেলানো হবে। সানরাইজার্স যেমন বুঝে উঠতে পারছে না চার নম্বর বিদেশির জায়গাটা কে হবে! ট্র্যাভিস হেড আর এডেন মার্করামের মধ্যে কেউ একজন খেলবেন।
শ্রেয়স যেমন বলে গেলেন, রাতের দিকে একটা টিম মিটিং রয়েছে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বলছিলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা টিম কী হবে, সেটা ঠিক করে উঠতে পারেনি। সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে সেটা নিয়ে বসব। এদিন ঘণ্টা তিনেকের প্র্যাকটিস সেশনে আন্দ্রে রাসেলদের বেশ ফুরফুরে মেজাজেই পাওয়া গেল। আন্দ্রে রাসেলদের দেখে কোথাও মনে হবে না প্রথম ম্যাচে নামার আগে টেনশনের কোনও বালাই আছে। বরং প্রত্যেকে বেশ আত্মবিশ্বাসী। গতবার আইপিএল মরশুম মোটেই ভাল যায়নি কেকেআরের। লিগ টেবিলে সাত নম্বরে শেষ করেছিলেন নীতীশ রানারা। এবার গম্ভীর এসেই পুরো টিমটার মানসিকতাই বদলে দিয়েছেন। টিমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের মানসিকতা ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
শনিবারের ইডেন যদি অস্ট্রেলীয় ডুয়েল ছাপিয়ে গম্ভীর-আবেগে আক্রান্ত হয়, তাহলে এতটুকু অবাক হবেন না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.