আলোচনায় মগ্ন গম্ভীর।
আলাপন সাহা: ইডেনের বাইরে তখন একশো-দেড়শো জন রোহিত…রোহিত করে চিৎকার করছেন। বাস থেকে নেমে গম্ভীর মুখে সোজা ড্রেসিংরুমে শর্মাজি। ইডেন থেকে বেরোনোর সময়ও তাই। রোহিত…রোহিত শব্দব্রহ্ম চলছিল। কিন্তু সেদিকে আর নজর কোথায়! ইডেন বরাবরই খুব প্রিয় রোহিতের। নানান সব কীর্তি রয়েছে। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি হোক কিংবা ওয়ান ডে’তে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
আইপিএলের প্রথম তাজ জয়ের সাক্ষীও ছিল এই ইডেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আর পাঁচটা ম্যাচের থেকে একেবারে আলাদা। রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma) সরিয়ে হার্দিক পাণ্ডিয়াকে (Hardik Pandya) অধিনায়ক ঘোষণার পর থেকেই তীব্র জনরোষ সৃষ্টি হয়েছিল। টিমের ড্রেসিংরুমেও যে সেটা ভালরকম প্রভাব ফেলেছে, তার প্রমাণ টিমের পারফরম্যান্সের নিম্নমুখী গ্রাফ।
হার্দিক পাণ্ডিয়ার মুখটাও ভীষণরকম থমথমে। এমনিতে সূর্যকুমার যাদব বেশ মজা-টজা করেন। কিন্তু সেই সূর্যও বেশ নিশ্চুপ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI) বনাম কেকেআর (KKR) ম্যাচ থাকলে এতদিন কেকেআর শিবিরকে এভাবেই দেখাটা প্রায় গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল নাইট সমর্থকদের। একপ্রকার ধরেই নেওয়া হত, মুম্বই মাঠে নামবে আর কেকেআরকে গো হারা হারাবে। অদ্ভুতভাবে শুক্রবার কেকেআর বনাম মুম্বই ম্যাচের আগে শাহরুখ খানের টিমের আবহে অদ্ভুত এক উলোটপুরাণ। ঠিক শহরের আবহের মতোই।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রবল তাপদাহে পুড়ে নাজেহাল হয়েছে কলকাতা। তবে শহরবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে কালবৈশাখী আর গত কয়েকদিনের বৃষ্টি। শনিবাসরয়ী ইডেনে হার্দিক পাণ্ডিয়াদের বিরুদ্ধে নামার আগে স্বস্তির বাতাস বইছে নাইট শিবিরেও। শ্রেয়স আইয়ার—আন্দ্রে রাসেলরা ভীষণরকম ফুরফুরে। দিন কয়েক আগে ওয়াংখেড়েতে গিয়ে মুম্বইকে হারিয়েই বারোবছরের শাপমোচন করেছে কেকেআর। ঘরের মাঠে এবার সামনে অন্য একটা লক্ষ্য-প্লে অফ নিশ্চিত করে ফেলা। এমনিতে এগারো ম্যাচে ষোলো পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফ কার্যত নিশ্চিত করে ফেলেছেন শ্রেয়সরা। কিন্তু কেকেআর চাইছে ওই কার্যত শব্দটাকে একেবারে ডিলিট করে ফেলতে।
শুধু প্লে অফ নয়, একইসঙ্গে প্রথম দুইয়ের মধ্যে থাকাটাও নিশ্চিত করে ফেলতে চায়। বরুণ চক্রবর্তী তো আবার ফাইনালের স্বপ্নটাও এখন থেকেই দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। চিপক আবার বরুণের ঘরের মাঠ। কেকেআরের রহস্য স্পিনারের কথাগুলো শুনে বোঝাই যাচ্ছিল ঘরের মাঠে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখছেন। মুম্বই-যুদ্ধের আগে সেটা বলেও গেলেন বরুণ।
ইডেনের তিনতলার প্রেস কনফারেন্স রুমে বসে বরুণ বলছিলেন, ‘‘চিপকে প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। ইডেন আর চিপক দুটোই আমার হোম। তবে চিপকে যেরকম উইকেট হয়, সেটা কেকেআর বোলারদের পক্ষে কিছুটা সুবিধের।’’ বোঝাই যাচ্ছিল ঘরের মাঠে ফাইনালে নামার ব্যাপারটা এখন থেকেই মাথায় ঘুরছে বরুণের। যদিও কেকেআর শিবির এখন শুধুই মুম্বই ম্যাচ নিয়ে ভাবছে। আগের দিন বৃষ্টির জন্য দুটো টিমই প্র্যাকটিস করতে পারেনি। এদিন অবশ্য পুরো দমে নেট করে গেল দুটো টিমই। অবশ্য বৃষ্টির পূর্বাভাস ম্যাচের দিনও থাকছে। কিন্তু ম্যাচ ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার পারদের সেনসেক্সটা সামান্যটুকুও নামাতে পারছে না। বরং টিকিটের হাহাকার চলছে। বিকেলে মহামেডানে মাঠের সামনে লম্বা লাইনটা চোখে পড়ার মতো। লোকজন পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন টিকিটের সন্ধানে। একে তো এবারের মতো ইডেনে শেষ আইপিএল ম্যাচে নামছে কেকেআর। তারউপর জিতলেই প্লে অফে টিকিট একেবারে কনফার্ম। উন্মাদনার মাত্রাটা তাই বাঁধনহারা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। খাতায়-কলমেও হট ফেভারিট হয়েই নামছেন শ্রেয়সরা।
আসলে আইপিএলের শুরু থেকেই মুম্বই বেশ অগোছালো। রোহিতকে সরিয়ে হার্দিক পাণ্ডিয়াকে অধিনায়ক করার পর থেকেই যে গণরোষ আছড়ে পড়েছিল, গোটা টুর্নামেন্টেই সেটা টিমকে যে ভালরকম আক্রান্ত করেছে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, টিমের অন্দরহমলের ছবিটাও খুব একটা সুখের নয়। সেখানে কেকেআর একেবারে সুখী পরিবার। পরপর কয়েকটা জয় গোটা টিমকে আরও উজ্জীবিত করে দিয়েছে। তবে এতসবের পরও মুম্বই নিয়ে কেকেআর প্রচণ্ড সতর্ক। বরুণ বলছিলেন, ‘‘আমার আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই এটা দেখছি। তবে একটা কথা বলে রাখি, যে কোনও পরিস্থিতিতেই মুম্বই প্রচণ্ড বিপজ্জনক টিম। ওদের দলে প্রচুর তারকা। প্রচুর ম্যাচ উইনার রয়েছে। ফলে জিততে গেলে আমাদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে।’’আসলে জসপ্রীত বুমরার দুর্ধর্ষ একটা স্পেল কিংবা রোহিত কিংবা সূর্যর বিধ্বংসী ইনিংস সবকিছু বদলে দিয়ে যেতে পারে, সেটা কেকেআরও খুব ভাল করেই জানে। তাই কেকেআর মেন্টর গৌতম গম্ভীর টিমকে আরও বেশি সতর্ক করে দিচ্ছেন।
গত কয়েকটা ম্যাচে টিমের সঙ্গে থেকে ক্রিকেটারদের উদ্বুব্ধ করেছিলেন শাহরুখ। না, এই ম্যাচে অবশ্য তিনি থাকছেন না। কেকেআর সূত্রের খবর, মুম্বই ম্যাচে বি ব্লকের ওই বক্সে দেখা যাবে না কিং খানকে। তবে তিনি না থাকলেও যে ম্যাচের আগে টিমের কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছে যাবে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়। শাহরুখের উপস্থিতি পুরো টিমকে কতটা তাতিয়ে দিয়েছিল, সেটা বরুণের কথা শুনেও বোঝা যাচ্ছিল। বলছিলেন, ‘‘এসআরকে ইডেনে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই ছিল। এমনকী আমরা যে ম্যাচে ভাল পারফর্ম করতে পারিনি, সেই ম্যাচেও ড্রেসিংরুমে এসে এক ঘণ্টা ধরে সব ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। যেভাবে সবাই জড়িয়ে ধরে বলেছিল ক্রিকেটে এটা হতেই পারে। পরের ম্যাচে চেষ্টা করো আরও ভাল খেলার। সেটাই টিমের মধ্যে একটা বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল।’’ কেকেআরের পুরো টিমও চাইছে শনিবার মুম্বই-বধ করে শাহরুখকে আরও একটা রিটার্ন গিফট দিতে।
(আজ আইপিএলে- কেকেআর বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
কলকাতা, সন্ধে ৭.৩০, স্টার স্পোর্টস)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.