ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সেই বহু পরিচিত নম্বর। নিজের যে নম্বরের কথা বারবার ফেসবুক লাইভে (Facebook Live)বলেন মদন মিত্র। তিনি সেই নম্বরই আবার দিয়ে জানালেন কারোর কোনও সমস্যা থাকলে তাঁকে ফোন করে জানাতে। দিনরাত এক করে এভাবেই বাড়ি বসে কাজ করে চলেছেন তিনি। সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গেও।
করোনা যন্ত্রণায় একের পর এক জন্ম নিচ্ছে বেকারত্ব, দারিদ্র, অসুখ, হতাশা। যার মোকাবিলায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্বমহিমায় শুধু নয়, নতুন ভূমিকায় প্রাক্তন মন্ত্রী। লাইভে আর তাঁকে দেখা যায় না। বাড়িয়েছেন কাজের পরিমাণ। সঙ্গে বদলেছে ধরনটাও। বলছেন, “লাইভ ছবিতে নেই। লাইভ প্রোগ্রামিংয়ে আছি। মানুষের পাশে আমি থাকবই।” রাস্তায় যেমন বেরোচ্ছেন, বাড়িতে বসেও চলছে তাঁর কাজ। আর সেখানেই নতুন ভূমিকায় মদন মিত্র। দুনিয়াজোড়া হতাশার মুখে বিদেশের বন্ধুদের ফোনে কাউন্সেলিং করছেন তিনি! দিনরাতে অসংখ্য বন্ধুর ফোন আসছে। মদন মিত্র বলছেন, “আমেরিকা, ইউরোপ থেকে বন্ধুদের ফোন আসছে। তাঁরা জানতে চাইছেন, কী হবে। কেউ বিজ্ঞানী, কেউ গবেষক। তাঁদের ছেলেমেয়েরা আর ঘরে থাকতে পারছে না। রাতবিরেতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। পার্কে গিয়ে জগিং করছে। সব হতাশা কাটাতে।” তাঁর অনুভব, “এই সময় ওদের সঙ্গে কথা বললে ওদের একটু ভাল লাগবে। তবে আমি মনে করি, এই অবস্থা আরও তিন মাস চললেও এর বিকল্প নেই।” গৃহবন্দি দশা অনেকটা তাঁরও। কখনও দক্ষিণেশ্বর, কখনও ভবানীপুর, এই দুটি বাড়িতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব মানতে কাউকে সঙ্গেও নিচ্ছেন না। গাড়িও নিজেই স্যানিটাইজ করছেন। তাঁর দাবি, অযথা রাস্তায় তিনি থাকছেন না। আর ভেঙেও তিনি পড়েননি। তবে বাইরে বেরোতে হলেও তাঁকে নিয়ে কেউ যাতে সমস্যায় না পড়ে সেদিকেও নজর রাখছেন।
এসবের মাঝেই রুটিনে বদল এসেছে। আগে দুবেলা ভাত খেতেন তিনি। এখন খাবার পৌঁছনো, হাসপাতালে ভর্তি, ওষুধ দিয়ে আসা সারতে গিয়ে সকালের ভাত খেতেই বিকেল গড়িয়ে যায়। তাঁর কথায়, “আর রাতে ভাত খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। বাকি দিনটা কাটে চা আর প্রচুর কফি খেয়ে। তাই ঘুমটাও কেটে যায়। লোকের সঙ্গে কথা বলে বলে সময়টাও।” এরই ফাঁকে ‘লিক’ হয়ে গিয়েছে তাঁর ঝরঝরে চেহারার নতুন ছবি। দাড়ি কামাতে বসে সাধের গোঁফটাও উড়িয়ে দিয়েছেন। তাতেই যেন আরও খোলতাই হয়েছে চেহারাটা। চন্দন রঙের কল্কা আঁকা লাল টুকটুকে পাঞ্জাবি গায়ে চড়িয়ে গগলস পরে রসিক ভঙ্গিতে হাতজোড় করা ছবিটা কে আবার তাঁর প্রোফাইলে ছেড়ে দিয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, “কারা যে এসব করে। এখন তো সেলুন বন্ধ। নাতির সঙ্গে খেলতে গিয়ে একটা হাতে চোট পেয়েছি। এক হাতেই দাড়ি গোঁফ কামাচ্ছিলাম। সেই করতে গিয়েই গোঁফের একদিক বেশি কাটা হয়ে গেল। তাই পুরোটা ছাঁটতে বাধ্য হলাম।” তাতেই হইহই কাণ্ড। ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকে বলছেন, “মদন দা ইজ ব্যাক। কুড়ি বছর বয়েস কমে গিয়েছে।” মদনবাবুর ব্যাখ্যা, “অন্যকে সুস্থ থাকার কথা বলতে গেলে আগে নিজেকে সুস্থ থাকতে হবে। এক গাল দাড়ি, গোঁফ কি এখন ভাল দেখায়?”
হিসেব দিলেন ৫০০-৬০০ সংগঠন চালান। একাধিক ক্লাব, স্কুলের পরিচালন ভারও তাঁর কাঁধে। তাদের বেতন, অনলাইন ক্লাস সবদিকে নজর রাখতে হচ্ছে। অবসর পাচ্ছেন? “এখন তো হাতে আর সময় থাকছেই না। তবু কখনও বই পড়ি, খবর দেখি। আর আছে মহারূপ। আমার নাতি। ও না থাকলে আমার চলত না। যে টুকু সময় পাচ্ছি ওর থেকে শিখে নিচ্ছি কী করে টকিং টমকে খাওয়াতে হয়। মোটু-পাতলুরা কী করে। এইভাবেই চলছে।”— গলায় তৃপ্তির স্বাদ মদনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.