সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: শিলের উপর দাঁড়িয়ে পড়ছে ছুঁচালো নোড়া। তাতে নাকি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। সেই শক্তির জোরেই দূরীভূত হবে করোনা। এমন ধারণা আর ছবিতে রবিবার রাত থেকেই ভরে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। কোথাও কোথাও তো আবার পুজো করতে শুরু করেছে মানুষজন। তাতে নাকি বিশেষ শক্তি তৈরি হচ্ছে। আর তাতেই করোনা মুক্তি ঘটবে। যদিও রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এমন খবরকে স্রেফ কুসংস্কার বলে নস্যাৎ করলেন পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্র। তাঁর সাফ কথা, “এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নেই।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার রাত নটায় নয় মিনিটের জন্য বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে রাখার ডাক দিয়েছিলেন। বদলে প্রদীপ, মোমবাতি নিদেনপক্ষে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালানোর ডাক দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য, আত্মশক্তি জাগরণ করা ও একতার বার্তা দেওয়া। এরপর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আবেদন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের গুজব ছড়াতে থাকে। কেউ বলছিলেন, রাতের ওই সময় নাকি মহামায়া শক্তি জাগ্রত হবে, আবার কেউ বলছেন নবগ্রহ জাগ্রত হবে। সেই তালিকায় নতুন সংযোগজন, উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে শিল পাতলে তার উপর নোড়া দাঁড়িয়ে পড়ছে। তৈরি হচ্ছে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। গ্রাম-গঞ্জ তো দূরাস্ত শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে থাকেন। এমনকী সেই নোড়ার উপর প্রদীপ রেখে পুজো শুরু হয়ে যায়। একই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের নানা প্রান্তে। সেখানে রীতিমতো পুজো করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুক্তমনা ও মানবতাবাদী সংস্থার রাজ্যস্তরের এক কর্মকর্তা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিলের ওপর নোড়া দাড়িয়ে থাকছে বিজ্ঞানসন্মত কারণেই। একটি ডিমকেও একইভাবে লম্বভাবে দাঁড় করানো সম্ভব।আসলে অনেক মানুষই কমবেশি কুসংস্কারাছন্ন আছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে তারা বেশি বেশি কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পড়ছেন।এটা কাম্য নয়।”
কিন্তু এরসঙ্গে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র্ তৈরি হওয়ার কোনও যোগ নেই বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্র। তাঁর কথায়, “এটা আশ্চর্য হওয়ার মতো কোনও বিষয় নয়। শুকনো অবস্থা অনেক সময় নোড়া দাঁড়ায় না ঠিকই, কিন্তু ভিজে থাকলে সেটা দাঁড়াতেই পারে। আসলে যে বস্তুটিকে দাঁড় করানোর পর, সেন্ট্রাল অপ গ্যাভিটি থেকে তৈরি হওয়া শক্তি যদি সেই ক্ষেত্র দিয়ে যায়, তবে তা দাঁড়িয়ে থাকে। নাহলে সেটা পড়ে যায়। এর সঙ্গে বিশেষ শক্তির কোনও যোগ নেই। তাঁর কথায়, “মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তাই যা শুনছেন তাই বিশ্বাস করছেন। অন্ধ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে তাই করছেন।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.