দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: করোনা আক্রান্তে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার, স্রেফ সন্দেহের বশে সৎকারে এগিয়ে এলেন না কোনও প্রতিবেশী। শেষপর্যন্ত নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার সৎকার করলেন থানার আইসি ও দুই কলেজ পড়ুয়া। লকডাউন ও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এমন মানবিকতার নজির গড়লেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগর থানার পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার জয়নগর থানার দু’নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। নাম রত্না ভট্টাচার্য (৬৩)। বাড়িতে একাই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর দেহ সৎকার করতে এগিয়ে আসেননি কোনও প্রতিবেশী। এমনকী গুজবে বিশ্বাস করে পালিয়ে যান শ্মশানের কর্মীরাও। জানা গিয়েছে, বৃদ্ধার একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানে। অসুস্থতার খবর পেয়েও লকডাউনের জন্য বৃদ্ধার মেয়ে-জামাই কেউই আসতে পারেননি। অসুস্থ বৃদ্ধার ভাই হুগলির শ্রীরামপুর থেকে জয়নগরে চলে যান। কিন্তু রক্তাল্পতা জেরে মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তাল্পতা ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
বৃদ্ধার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, গাড়ি করে জয়নগরের বাড়িতেই দেহ আনা হয় শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য। আর সেখানেই বিপত্তি বাধে। ততক্ষণে এলাকায় রটে যায় নোভেল কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার। এলাকার লোকজন সংক্রমণের ভয়ে সৎকারে এগিয়ে আসেননি কেউ। শুধু তাই নয়, দেহটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকার কাউকেই পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ।
এলাকারই এক কলেজ ছাত্র শ্রীকান্ত চক্রবর্তীর মারফত বিষয়টি জানতে পারেন জয়নগর থানার আইসি অতনু সাঁতরা। তিনি চিকিৎসকের কাগজপত্র দেখে বৃদ্ধাকে পোড়ানো সিদ্ধান্ত নেন। অতনুবাবু জয়নগর-মজিলপুরে পুরসভার একটি শশ্মানে দেহটি নিয়ে যান। কিন্তু দেখা যায় শ্মশান জনমানব শূন্য। বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে পালিয়ে যান শ্মশানের কর্মীরা। ফলে সেই দেহ নিয়ে পুলিশকে কয়েক কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ দুর্গাপুরের শশ্মানে আসতে হয়। সেখানেও লোকজন ছিল না। অগত্যা বহুরুর পঞ্চায়েত প্রধান স্নেহাশিস নাইয়া ও আইসি শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। অন্যান্য কাজ করেন ওই কলেজ ছাত্রটি ও তাঁর বন্ধু ।এ বিষয়ে আইসি অতনু সাঁতরা বলেন, “বৃদ্ধার স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এলাকায় রটে যায় করোনা আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মানুষ কুসংস্কার ও গুজবের উপর ভিত্তি করেই চারিদিকে যেভাবে ছুটছেন তা সত্যিই অস্বাভাবিক ব্যাপার। মৃত মানুষকে না পুড়িয়ে উলটে সবাই পালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের আরও সচেতন হওয়া দরকার।”
শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে শ্রীকান্তকে বারবার দেখা গিয়েছে নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে বেওয়ারিশ মড়া পোড়াতে। আর এখানে মড়া পড়াতে উপস্থিত হয়েছেন অন্য এক শ্রীকান্ত। যুগের নিয়মে মহামারি ফিরে আসে। ঠিক তেমনি ভাবেই শ্রীকান্তও ফিরে আসেন বারে-বারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.