সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্ষুদ্র এক জীবাণুর সঙ্গে যুঝতে হিমশিম গোটা বিশ্ব। তবু হাল ছাড়ছেন না তিনি। একেবারে দশভুজার মতো লড়ছেন। লড়তে বাধ্য করছেন সবাইকে। গোটা রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত সমস্ত খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে। কোন ব্লকে কতজন আক্রান্ত, তাও বোধহয় ঠোঁটস্থ। লক্ষ্য একটাই, কোনওভাবেই নোভেল করোনা ভাইরাসকে কিছুতেই মাথাচাড়া দিতে দেওয়া যাবে না।
যাঁর কথা বলা হচ্ছে, সমাজসেবী হিসেবে তাঁর আনুষ্ঠানিক পরিচয় নেই। বরং তিনি রাজ্যের মন্ত্রী – কে কে শৈলজা। কেরলবাসীর স্বাস্থ্যের ভার এখন তাঁর উপরেই। সেই মন্ত্রীই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিচ্ছেন। যেখানে মন্ত্রী ছুটছেন, সেখানে দপ্তরের আধিকারিক, কর্মীরাই বা বসে থাকেন কীভাবে? সকলে মিলেই নেমেছেন করোনা যুদ্ধে।
কে কে শৈলজা ঠিক কতটা তৎপর, তা বুঝতে গেলে একটি ঘটনাই যথেষ্ট। একদিন সকাল সবে সাতটা বেজেছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিককে ফোন করে তিনি জানতে চান, এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক কত? ওই আধিকারিক ঘুমজড়ানো গলাতেই জানান, বোধহয় ১২১। মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে ধমকের সুরে বলেন, “সে কী! আপনি যে গতকালই বললেন, ১৫১। কমে গেল কীভাবে?” ধমকে সম্বিত ফিরে পান ওই আধিকারিক। তাঁকে ১৫ মিনিট সময় দেন মন্ত্রী। সঠিক সংখ্যা জানানোর নির্দেশ দেন।
কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঠিক এতটাই তৎপর এবং নিজের কাজে নিবিষ্ট। যথাযোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই যে রাজ্যের মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন তিনি, তা বোঝা যাচ্ছে এই সংকটের মুহূর্তে। ঠান্ডা ঘরে, ফাইল সই করে কিংবা একটু হাসপাতাল পরিদর্শন সেরেই হাত গুটিয়ে নেননি শৈলজা। এখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬-১৭ ঘণ্টাই মাটিতে নেমে কাজ করছেন তিনি। আক্রান্ত, আতঙ্কিত সকলের পাশে থেকে ভরসা জোগাচ্ছেন। বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনিই জননেত্রী। ঠিক এ রাজ্যের কোনও বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মন্ত্রী হয়েই যে শৈলজা এতটা তৎপর, তা কিন্তু নয়। এর আগে বাম যুবনেত্রী থাকাকালীন যে কোনও বিপর্যয় মোকাবিলায় তাঁর কাজের কথা জানেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন। প্রায় ১৫ বছর আগে কেরলে চিকুনগুনিয়া ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। শোনা যায়, সেসময়ও এমন দশভুজার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল আজকের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। নিজে তো বটেই, সংগঠনের সমস্ত সদস্যকে শামিল করেছিলেন রোগ প্রতিরোধের কাজে। আর আজ তিনি রাজ্যের মন্ত্রী। শুধু পদমর্যাদার হেরফের হয়েছে। মানুষটার আসল প্রকৃতি, কাজের ধরন কিছুই প্রায় বদলায়নি।
কেরলই দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য, যেখানে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের খবর মিলেছিল। সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শক্ত হাতে তার রাশ ধরেছে সেখানকার বাম সরকার। যার নেপথ্যে এই শৈলজা। এই মুহূর্তে কেরলে করোনায় কোনও মৃত্যু নেই, ধীরে ধীরে কমছে আক্রান্তের সংখ্যাও। এমন আতঙ্কের পরিবেশে শৈলজাই যেন সেই লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প। হোক না করোনার সঙ্গে অসম যুদ্ধ, তবু সর্বক্ষণ পিদিম হাতে যুদ্ধজয়ের আশা জাগিয়ে রেখেছেন কে কে শৈলজা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.