সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত আয়ুর্বেদই কী দেশ ও দশকে করোনা-মুক্তির পথ দেখাবে? ঘটনাক্রম কিন্তু সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।বৃহস্পতিবার এক টুইটে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রীপাদ ওয়াই নায়েক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ তথা সিএসআইআর এবং আয়ুষ মন্ত্রক যৌথভাবে চারটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ নিয়ে কাজ করছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এই ওষুধগুলির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ তথা ট্রায়াল শুরু হবে। কোভিড-১৯ (COVID-19)মোকাবিলায় ‘অ্যাড–অন থেরাপি’ হিসাবে এবং ‘স্ট্যান্ডার্ড কেয়ার’ হিসাবে ওষুধগুলির প্রয়োগ হবে। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, “আমি নিশ্চিত এবং যথেষ্টই আশাবাদী যে, আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই সব ওষুধই করোনা মহামারিকে প্রতিহত করে তার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর দিশা বাতলে দেবে।” মন্ত্রীর কথা থেকে এটা স্পষ্ট্ যে, আগামী দিনে করোনা যুদ্ধে জয়ের হাসি হাসতে আয়ুর্বেদের উপরই ভরসা রাখছে কেন্দ্র। তবে এই প্রথম কিন্তু এই ইঙ্গিত মিলল না। এর সূত্রপাত
ঘটেছিল অনেক আগেই।
একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। দিন কয়েক আগে দেশের অন্তত ৮,০০০ জন চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক ডিজিটাল চিঠিতে আবেদন জানান যে, কোভিড-যুদ্ধে শামিল করা হোক আয়ুর্বেদশাস্ত্রকেও। তাতে সাড়া দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই আয়ুষ মন্ত্রক
এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রককে একটি প্রোটোকল তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যার উপজীব্য বিষয় হল কীভাবে করোনাকে প্রতিহত করা যায়। আয়ুষ মন্ত্রক প্রোটোকল তৈরি করে। তা মেনেই পরবর্তীকালে তাতে প্রথম সাড়া দেয় কেরল। ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য
রাজ্য যেমন জম্মু কাশ্মীর, গুজরাত, তামিলনাড়ুতেও প্রোটোকল মেনে করোনা মোকাবিলায় ‘ফ্রন্টলাইনার’ যেমন পুলিশ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের আয়ুর্বেদিক ওষুধ দেওয়া শুরু হয়, যাতে ভাল সাড়া মেলে। এখানেই শেষ নয়। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী যিনি নিজেও একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, তিনিও রাজ্যের কোভিড পজিটিভ রোগীদের উপরও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রয়োগ করতে শুরু করেন। তাতেও মেলে সাফল্য। সম্প্রতি আবার গুজরাতে অন্তত ৭,০০০ রোগীর মধ্যে অর্ধেককে আয়ুর্বেদ ওষুধ দেওয়া হয় আর বাকিদের উপর প্রয়োগ করা হয় হোমিওপ্যাথি। দেখা যায়, যাঁদের উপর আয়ুর্বেদিক ওষুধের প্রয়োগ হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে মাত্র ১১ জন ছাড়া (এঁরা ওষুধ সেবন করেননি) বাকি প্রত্যেকেই করোনা নেগেটিভ সাব্যস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, শ্রীলঙ্কায় করোনা পজিটিভ এবং সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত, উভয়ের উপরই আয়ুর্বেদিক ওষুধের প্রয়োগ করেছিলেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা। সেখানেও কাজে আসে আয়ূর্বেদ। এত কিছু দেখেই ভারত সরকার দেশে করোনা মোকাবিলায় আয়ুর্বেদশাস্ত্রের উপর ভরসা রেখে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার সিদ্ধান্ত নেয়। আইসিএমআর-কে (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ) দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন ও আয়ুশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রীপাদ নায়েক ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘আয়ুশ সঞ্জীবনী’ অ্যাপ–সহ তিনটি আয়ুশ গবেষণা প্রকল্প হবে। করোনা মোকাবিলায় আয়ুর্বেদের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখতে দেশে গবেষণাও হবে আর এর নেতৃত্বে থাকবে বিশেষ টাস্ক ফোর্স। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর টুইট ছিল এরই পরবর্তী ধাপ।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদের সহ–সভাপতি ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্রের অভিমত,”কোভিড–১৯ মোকাবিলায় আয়ুর্বেদে বর্ণিত অশ্বগন্ধা, গুরুচি, সুণ্ঠী, তুলসী, যষ্ঠিমধু, দারচিনি, গোলমরিচ প্রভৃতি নিয়েই গবেষণা করছে আয়ূশ মন্ত্রক। এই সব ওষুধের নির্যাস দিয়ে প্রস্তুত আয়ুর্বেদিক ক্বাথ আমাদের রোগপ্রতিরোধক শক্তি বাড়িয়ে তোলে। কারণ এরা একদিকে লিভারকে ভাল রাখে, আর অন্যদিকে যে কোনও ধরনের জীবাণু ধ্বংস করার জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। তাই ঠিকমতো যদি এই সব নিয়ে ট্রায়াল করা যায়, তাহলে যে সব রোগীদের মধ্যে করোনার মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছে বা সন্দেহভাজন হিসাবে যাদের কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে, তাদের পক্ষে খুবই কার্যকরী হবে। তাই আয়ুষ মন্ত্রক যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি খুবই ভাল। এই ধরনের উদ্যোগকে সবসময়ই স্বাগত জানানো উচিত। আমি মনে করি, রাজ্য সরকারেরও এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত।” আবার আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুমিত সুরের কথায়, “আয়ুর্বেদে চিকিৎসকদের শুধুমাত্র জ্বর মাপা এবং প্রেসার চেক করাতেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এখানেও করোনা মোকাবিলায় আয়ুর্বেদেকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের রাজ্যে আয়ুশের চিকিৎসকদের সংখ্যা ৪,৫০০-এরও উপরে। কিন্তু এঁদের অ্যালোপ্যাথির সাইডলাইন হিসাবে বা হেল্পিং হ্যান্ড হিসাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এই ছবির পরিবর্তন অবিলম্বে প্রয়োজন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.